ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় হবে ২১২ কোটি টাকা, অনুমোদনের জন্য একনেকে উঠছে আজ

হালদা নদীর ভাঙ্গন থেকে দুই উপজেলা রক্ষার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২১ মার্চ ২০১৭

হালদা নদীর ভাঙ্গন থেকে দুই উপজেলা রক্ষার উদ্যোগ

আনোয়ার রোজেন ॥ জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রামের হালদা নদী দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্ষা মৌসুম ও ভারি বৃষ্টিপাতের দরুন হালদার ভাঙ্গন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। নদীর ভাঙ্গনে হাটহাজারী ও রাউজান অংশের হালদাপারের সহস্রাধিক পরিবারের বসতভিটা ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও ভাঙ্গনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে দুই উপজেলার লাখ লাখ বাসিন্দার। এমন প্রেক্ষাপটে বর্ষার আগেই হালদার ভাঙ্গন ঠেকাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে ভাঙ্গনের তীব্র ঝুঁকিতে থাকা হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা অংশে তীর সংরক্ষণ, পুরনো বাঁধ সংস্কার, নতুন বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ এবং বন্যা প্রতিরোধে দেয়াল (ফ্লাড ওয়াল) নির্মাণ করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১২ কোটি ৭৯২ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাস্তা উঁচু করে প্রকল্প এলাকায় ভাঙ্গন ও জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব বলে আশা করছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় হালদা নদীর উভয় তীরের ভাঙ্গন হতে বিভিন্ন এলাকা রক্ষাকল্পে তীর সংরক্ষণের কাজ শীর্ষক প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। এ প্রসঙ্গে হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, হালদা একটি বিশেষনদী। এর সঙ্গে ভাঙ্গন, বন্যা প্রতিরোধ, মৎস্য প্রজনন, জীববৈচিত্র রক্ষা, সেচ, বাঁধ, রাবারড্যাম, কলকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের মতো বহুমুখী বিষয় জড়িত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি, হালদার জন্য একেক মন্ত্রণালয়ের একেক রকম প্রজেক্ট না নিয়ে একটি প্যাকেজ বা আমব্রেলা (একটি প্রকল্পের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে) প্রজেক্ট নেয়ার জন্য। তিনি বলেন, ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য যে প্রকল্প নেয়া হচ্ছে সেটিতে প্রাথমিকভাবে হালদার ড্রেজিংয়ের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে জানি। পরে মৎস্যসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে এটি বাদ দেয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এ প্রকল্পের সুফল নিয়ে তাই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হালদা নদী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বাদনাতলী হতে উৎপত্তি হয়ে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় প্রবেশ করে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলের প্রভাবে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা অংশে হালদা নদীর উভয় তীরবর্তী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, রাস্তাঘাট, বসতভিটা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকা মারাত্মক ভাঙ্গন কবলিত হয়ে পড়েছে। এ সমস্য সমাধানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৫ সালে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- ১২ দশমিক ১২০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ৬ কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণ, ১৫ কিলোমিটার মাটির বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার বিদ্যমান রাস্তা-কাম-বাঁধের উচ্চতা উন্নীতকরণ, ৫৫০ মিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ এবং ১ দশমিক ৪০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ।
×