ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রীকল্যাণ সমিতির ২৮ দফা

‘সড়ক পরিবহন আইন ১৭’ যাত্রীবান্ধবের দাবিতে স্মারকলিপি

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২১ মার্চ ২০১৭

‘সড়ক পরিবহন আইন ১৭’ যাত্রীবান্ধবের দাবিতে স্মারকলিপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’ যাত্রীবান্ধব করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এছাড়াও পরিবহনে নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানি বন্ধ করা, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করাসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২৮ দফা দাবি জানানো হয়েছে বেসরকারী এই সংগঠনের পক্ষ থেকে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া এক স্মারকলিপিতে এসব দাবি- দাওয়া উল্লেখ করা হয়। এদিকে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালকদের নিয়ে ধারাবাহিক কর্মশালা শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। কর্মশালায় ট্রাফিক আইন মেনে চলা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন গাড়ি না চালাতে চালকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি যত্রতত্র গাড়ি পাকিং না করার, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং থেকে বিরত থাকা, ওভারলোডিং ও ওভারস্পিডে গাড়ি না চালানোর জন্য চালকদের পরামর্শ দেয়া হয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি-দাওয়ার মধ্যে রয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ী চালক, মালিক, যাত্রী, হেলপার, কন্ডাক্টর, সড়ক নির্মাণ প্রকৌশলী, সড়ক সুপারভিশন কর্মকর্তা, ঠিকাদার, বিলবোর্ড স্থাপনকারী, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বা অন্য যে কোন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা এবং এসব অপরাধে অপরাধীর মামলা ৩০২ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা। সড়ক দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে বলা হয়, এই তহবিল থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গণপরিবহনে নিবন্ধন নম্বর, রোড নম্বর, কোম্পানির লোগো ব্যতীত যাত্রীর সঙ্গে প্রতারণামূলক শব্দ যেমন- সিটিং সার্ভিস, গেট লক সার্ভিস, ডাইরেক্ট সার্ভিস, স্পেশাল সার্ভিস, সময় নিয়ন্ত্রণ সার্ভিস, কম স্টপেজ সার্ভিস, ক্লোজডোর সার্ভিস ইত্যাদি লেখা যাবে না। পিক আওয়ারে দরজা বন্ধ করে গণপরিবহন চালানো যাবে না। দেশের যাত্রী ছাউনি ও বাস টার্মিনালে ‘ডিজিটাল যাত্রী সেবা তথ্য কেন্দ্র’ চালু করার বিষয়টিও আইনে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে বলা হয়, যানবাহনে প্রতারণা যেমন- অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, হিজড়া, ইভটিজার, পকেটমার, ছিনতাইকারী, টিকেট কালোবাজারির কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সকল শ্রেণীর গণপরিবহনে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়াও সংগঠনের প্রস্তাবিত দাবি-দাওয়ায় আরও উল্লেখ করা হয়, ছাত্রছাত্রী ও প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতে সকল শ্রেণীর গণপরিবহনে হাফ ভাড়া আইনে অন্তর্ভুক্ত করা। মহানগর, জেলা, উপজেলা ভিত্তিক ‘যাত্রী অভিযোগ কেন্দ্র’ চালু করা। এসব অভিযোগ কেন্দ্রে টোল ফ্রি হটলাইন ফোন নম্বর চালু করা। এসব ফোন নম্বর গণপরিবহনের ভেতরে যাত্রী সাধারণের দর্শনীয় স্থানে লিখে রাখা। পরিবহনের অনলাইন সেবাসমূহ, ই-টিকেটিং, ই-সার্ভিস, ই-ক্যাব সার্ভিস, ই-টেক্সি সার্ভিস, ই-রেন্ট-এ কার সার্ভিস ইত্যাদি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা। রোড ফ্রেনসাইজ সিস্টেম, গণপরিবহনের জন্য আলাদা লেন বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা। মহানগর, জেলা ও বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিতে মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ কমিটি ও ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটিতে মালিক শ্রমিকদের সংখ্যানুপাতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। অযান্ত্রিক যানবাহন, অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা। যাত্রী হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধে বাস টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। পরিবহনের নিবন্ধন, নিয়ন্ত্রণ, লাইফটাইম নির্ধারণ, এ্যাক্সেল লোড, কর মওকুফ, রোড পারমিট ইস্যু, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় মনিটরিংসহ সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণের কমিটিসমূহে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। আইন লঙ্ঘন করে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি ও সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলসহ জেল-জরিমানা বা উভয় দ-ের ব্যবস্থা রাখা। গণপরিবহনের নারী নির্যাতন, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান করা। সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করা যাবে না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের শাস্তি কঠোর করা। ঈদ যাত্রা, পূজাপার্বন বা সরকারী ছুটির দিবসকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করা যাবে না। গণপরিবহনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বা নিবন্ধীকরণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত আসনের অধিক সংখ্যক আসন সংযোজন করা যাবে না। যাত্রী ছাউনি, পাবলিক টয়লেট, সিএনজি এন্ড ফিলিং স্টেশনের টয়লেটসমুহ লিজ বা ইজারা দেয়া যাবে না। প্রতি জেলায়, মহানগরে আলাদা ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠনের মাধ্যমে এগুলো পরিচালনা নিশ্চিত করা। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদসহ সকল পরিবহন কমিটিতে মালিক-শ্রমিকদের সংখ্যানুপাতে যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের শাস্তি ও দ- যুগ উপযোগী করা। বাস স্টপেজ, জেব্রা ক্রসিং অমান্য করলে গাড়ি-পথচারী উভয়ের শাস্তির বিধান করা। যাত্রী ছাউনি, ফুটপাথ, বাস স্টপেজ, বাস- বে অবৈধ দখলকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান করা। নিবন্ধনবিহীন ভুয়া নম্বরধারী, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি নসিমন, করিমন যানবাহন চালানোর শাস্তি বিধান করা। সড়ক নিরাপত্তায় কর্মশালা ॥ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিঃ নং বি-৪৯৪) উদ্যোগে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সড়ক নিরাপত্তায় চালকদের করণীয় শীর্ষক ধারাবাহিকভাবে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সোমবার অনুষ্ঠিত কর্মশালায় নেত্রীবৃন্দ বলেন, সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের ভাল দিকগুলো, বিভিন্ন অবদানের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরা ও ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে দুর্ঘটনামুক্ত গাড়ি চালানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলাচলরত গাড়ির প্রায় দুই শতাধিক চালকদের উপস্থিতে এ কর্মশালা সায়দাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবদুল অদুদ নয়ন সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় চালকদের করণীয় বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ করম আলী, মোঃ রবিউল ইসলাম, ফিরোজ আলম আক্কেল আলী, শেখ রিপন, জাহাঙ্গীর কবীর, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ রেজাউল, বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল বাসার প্রমুখ।
×