ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

বগুড়ায় ফুটপাথে অবৈধ ওষুধ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২১ মার্চ ২০১৭

বগুড়ায় ফুটপাথে অবৈধ ওষুধ

সমুদ্র হক ॥ অনুমোদনহীন জীবনহানিকর বেশ কিছু ওষুধ বগুড়া এবং পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলায় প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। শহরের জনসমাগমস্থলের সড়কের ধারে, প্রধান সড়কের ফুটপাথে ছাতার নিচে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রেখে ট্যাবলেট, ক্যাপস্যুল, শিশি বোতলে তরল ওষুধ প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়। রাতে টুলের ওপর বসে ব্রিফকেস খুলে রেখে তার ভেতরের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বিক্রি হয়। দেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রির ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। ফার্মেসিগুলোতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াও ক্রেতা বৈধ দেশী বিদেশী কোম্পানির ওষুধ চাইলে তা বিক্রি করা হয়। বিষয়টি সকলের জানা। হালে রাস্তার ধারেও টেবিল সাজিয়ে বসে ও ব্রিফকেসে রাখা ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। বগুড়া নগরীর স্টেশন রোড, কবি নজরুল ইসলাম রোড, নবাববাড়ি রোডের ধারে বাস টার্মিনালের ধারে এক শ্রেণীর ভ্রাম্যমাণ কথিত ওষুধ ব্যবসায়ী অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি করছে। এগুলোর ক্রেতা শ্রমজীবী মানুষ, এক শ্রেণীর তরুণ। সাধারণ মানুষের একটি অংশ এইসব ওষুধ কিনছে। এদের অনেকে মধ্যবয়সী। কি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে আর এইসব কিনছে কারা! খোঁজ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ কিছু তথ্য। ওষুধগুলোর নাম বিচিত্র। যেমন হরমোন-এন, নিশাত পি হেব্বি, বডি ফিট, টু-কিউপিড, কিং পাওয়ার ওয়েল, এনার্জি পাওয়ার ওয়েল, জিনোসিন, শক্তি প্লাস, ডিপিমুনইস, সাতাদা, ইলেকট্রোলাইল এইচ ট্যাবলেট ও ক্যাপস্যুল ইত্যাদি। মুসসিক নামের এক ওষুধের স্ট্রিপে ইংরেজিতে লিখা আছে ইচ ২৫০ মিলিগ্রাম ক্যাপস্যুল কনটেইন স্টিকোনোস নাক্স ইওয়, পিপার নিগ্রাম, নিওগ্রাম ইত্যাদি। এইসব ওষুধের বিষয়ে চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়: তারা জীবনেও এইসব ওষুধ দেখা তো দূরে থাক নামই শোনেননি। ওষুধের যে উপকরণ লেখা তা মোটেও ঠিক নয়। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় হলো- ওষুধের প্যাকেটে ও স্ট্রিপে যে কোম্পানির নাম মুদ্রিত আছে তার কোন অস্তিত্বই নেই। কোন প্যাকেটে স্থানীয় কোন কোম্পানির নাম মুদ্রিত আছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেল এ ধরনের কোন ওষুধ তারা উৎপাদন করে না। যারা ভ্রাম্যমাণ টেবিল টুলে বসে এইসব অবৈধ ওষুধ বিক্রি করছে তারা ওষুধ প্রাপ্তির উৎস সম্পর্কে একেক সময় একেক কথা বলে। কেউ বগুড়া শহরের মার্কেটের ভেতর থেকে তারা ওষুধ কিনে আনে। কেউ বলে ঢাকা থেকে কিনে আনে। একজন বলে শুধু বগুড়ায় নয় ঢাকাসহ সারাদেশে তাদের মতো অনেকে এভাবে ওষুধ বিক্রি করে। বগুড়া স্টেশন রোডের এমন এক বিক্রেতার নাম মিজানুর রহমান। বাড়ি গোয়ালগাড়ি। বললেন অনেক বছর ধরে মানব দেহের শক্তিবর্ধক এইসব ওষুধ বিক্রি করেন। কবি নজরুল ইসলাম রোডের এক বিক্রেতা বলেন তার ওষুধ যৌবন ধরে রাখে এবং মানব জীবনের বায়োলজিক্যাল চাহিদা পূরণ করে। এর বাইরে নেশার কোন ওষুধ বিক্রি করে কি না সে প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি না সূচক। তবে যা জানা যায় তা হলো- নেশার উপাদানযুক্ত ওষুধ আছে ওইসব কথিত ওষুধের মধ্যে। খুবই সূক্ষ্ম কৌশলে স্ট্রিপ ও প্যাকেটজাত এবং ছোট কৌটায় ভরে এ ধরনের ওষুধ বিক্রি হয়। একজন জানালেন, কৌটা ও স্ট্রিপ খুললে যে ট্যাবলেট মেলে তা অনেকটা নিষিদ্ধ ইয়াবার মতো। প্রশ্ন ওঠে তাহলে ইয়াবার ব্যবসায়ীরা কোথাও গোপনে কারখানা স্থাপন করে স্ট্রিপ ও কৌটার মধ্যে নেশার ও যৌন উত্তেজক সামগ্রী ভরিয়ে দিয়ে হকার নামিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে? এই বিষয়ে ড্রাগ সুপারের সঙ্গে কথা বললে জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। কয়েক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বললে জানান, শরীরের জন্য এইসব ওষুধ মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। সরকারী হাসপাতালের আউটডোরে ও ক্লিনিকে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ নিয়ে মাঝে মধ্যেই রোগী আসছে। এই ধরনের ওষুধ ভয়াবহ জটিল রোগের কারণ হতে পারে। মৃত্যুও ঘটতে পারে।
×