ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২৫ মার্চ কাল রাত

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২১ মার্চ ২০১৭

২৫ মার্চ কাল রাত

তারুণ্যকে কোন বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। তারুণ্যের কোন বয়স, স্থান-কাল-পাত্র নেই। মানসিক শক্তি তারুণ্যকে ধরে রাখতে পারে। তারুণ্য মনে, মননে, শক্তিতে, সামর্থ্যে এবং ভাবনায়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে আমাদের তারুণ্য। এখানে বয়স কোন বাধা ছিল না, ছিল না লিঙ্গ, অঞ্চল কিংবা অন্য কোন বাধা। যে তারুণ্যের মধ্যে ছিল তরুণ-তরুণী, মাঝ বয়সী এবং নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। সেই তরুণ তার জীবনবাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে, যে তরুণী তার নিজের সম্ভ্রম বিলিয়ে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আমাদের ওপর বর্বর হত্যা যজ্ঞ চালায়। আজ ২০১৭ সালে এসে দাবি উঠেছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করার। পাকিস্তানী হায়েনাদের সেই বর্বর নির্যাতনের কথা এখনও জানার চেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে লালন করা এখনকার তরুণ প্রজন্মের। আর গর্বে বুক ফুলে ওঠে সেসব মুক্তিযোদ্ধার কথা শুনে যারা তাদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম দিয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের। আজ স্বাধীনতার চার দশক পর আমাদের তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, চেতনার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। তাদের দেশকে জানার, দেশকে ভালবাসা, দেশের জন্য কিছু করার আগ্রহ কতটুকু তার ওপর নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনায় সেসব দৃশ্যই যেন ভেসে উঠল বার বার। আল-আমিন মাস্টার্স দ্বিতীয় বর্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ মার্চ রাতে যে গণহত্যা হয়েছিল এই ইতিহাস যখন পড়ি তখন শিউড়ে উঠি। আর যারা এসব নারকীয় হত্যাকা- চোখে দেখেছে তারা জীবনে অনেক যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমাচ্ছে। আর যাদের আপনজন এই নির্মমতার শিকার হয়েছে তাদের ওই দিনগুলো অশ্রু চোখে স্মৃতির মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। নিরপরাধ লোকদের ধরে হাত-পা বেঁধে গুলি করে পানিতে ডুবিয়ে মারা তো হয়েছেই। নারীদের সম্ভ্রমহানির কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। নিজেকে খুব অসহায় লাগে। এই মানুষগুলোর জন্য যদি কিছু করতে পারতাম, যদিও এই বিশাল কার্যক্রমে বিহারীদের সর্বাত্মক সমর্থন এবং অংশগ্রহণ ছিল। আমি এই প্রজন্মের একজন, ৫২ আমার চেতনার শক্তি, মুক্তিযুদ্ধ আমার অহঙ্কার, মুক্তিযুদ্ধারা দেশের প্রতি ভালবাসতে শিখিয়েছে, তারা আমার প্রেরণার উৎস। এ বছর থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করা হবে যা সংসদে বিল আকারে পাস হয়। আমি এই দিনটিকে শ্রদ্ধা করি। যারা এই দিনটিকে অশ্রদ্ধা করবে আমরা তাদের ঘৃণা করব। সুজন আচার্য অনার্স তৃতীয় বর্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দরজায় কড়া নাড়া... তারপর বুলেটের শব্দ...!! ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চললেও এক রাতেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় বাংলাদেশ। কতটা ভয়ানক ছিল সেই ২৫ মার্চ কাল রাত... চোখে না দেখলেও অনুভব করতে পারি... আর যখনই অনুভব করি তখনই শরীর শিউরে ওঠে...!!! পাকিস্তানী জানোয়াররা হামলে পড়েছিল ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালীর ওপর। উন্মাদের মতো হায়েনারা নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে... সমগ্র দেশ গুলির শব্দে স্থম্ভিত হয়েছিল। রক্তে লাল হয়েছিল পথ-ঘাট... বাঙালীর জীবনে এটি ছিল একটি দুঃস্বপ্নের রাত। নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষককে। ধন্যবাদ জানাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরপক্ষের সরকারকে, ২৫ মার্চের কাল রাতকে স্মরণ করে গণহত্যা দিবস পালন করার লক্ষ্যে সংসদে বিল পাস করার জন্য। লাল সালাম জানাই স্বাধীনতার স্থপতিকে। আমরা তোমাদের ভুলব না.. সুস্মিতা অর্পা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালীর শৃঙ্খল মুক্তির দিন ২৬ মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পূর্বদিন ২৫ মার্চ রাতে দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছিল সেই বিভীষিকাময় চিত্র। পাকিস্তানীরা হত্যা করেছিল দেশের সাধারণ নিরপরাধ জনতাকে। যা তাদের ভাষায় অপারেশন সার্চলাইট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। বাঙালীর জীবনের কাল অধ্যায় হয়ে থাকবে এই দিনটি। ভয়াল কাল রাতের সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি নিয়ে নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল ২৬ মার্চ দেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হওয়ার পর জনগণ তাদের সবটুকু দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিল দেশের স্বাধীনতা। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই সকল বীরদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই মুক্তির আনন্দ। আমিনা আক্তার লিজা অনার্স প্রথম বর্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যখন কোন অসহায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাকে দেখি চোখের জল সংবরণ করতে পারি না। স্বাধীনতাযুদ্ধের নায়কদের মধ্যে অনেকেই এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের বীরত্বের কারণে জাতি মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে শত্রুদের পরাজিত করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এবং এর চেতনাকে ধারণ ও লালন করতে প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন করা উচিত। আর এ ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্নার থেকে এ প্রজন্মের পুরোধা তরুণ-তরুণীরা মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিদিনই দেখতে, বুঝতে পারে। সৃজন দাস, অনার্স শেষ বর্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে নেমেছিলেন শুধু দেশকে ভালবাসতেন বলে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা স্বাধীনতা সেদিনই পাব, যেদিন আমরা চিহ্নিত রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার করতে পারব। এখনও ওইসব মীরজাফরদের অবাধে বিচরণ করতে দেখা যায়। তাদের মুখে বড় বড় বুলি শুনতে আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের খুব কষ্ট হয়।
×