ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের শিল্প-সাহিত্য

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২১ মার্চ ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধের শিল্প-সাহিত্য

মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির চিরকালের গর্ব এবং অহঙ্কার। এর সঙ্গে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের বিষয়টিও অঙ্গাঙ্গি ও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হাজার হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিতে পরিপুষ্ট ও সমৃদ্ধ বাঙালী জাতি তার নিজস্ব ভূখ-, স্বাধীনতা, স্বকীয়তা ও স্বাধিকার খুঁজে পেয়েছে ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে। তবে মনে রাখতে হবে যে, বাঙালীর এই সব সংগ্রাম কেবল যুদ্ধের ময়দানেই অর্জিত হয়নি, বরং এ ক্ষেত্রে বাঙালী জাতির অনিবার্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে তার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-চিত্রকলাসহ অন্যান্য মাধ্যমও। উদাহরণত অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট অমর একুশে সাহিত্য সম্ভারের কথা উল্লেখ করা যায়। ভাষা আন্দোলনকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে অগণিত কালজয়ী কবিতা, গান, গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ-ইতিহাস, নাটক, চিত্রকলা এমনকি স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। অনুরূপ হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করেও। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্বভাবতই হয়ে উঠেছিল সৃজনশীল গল্প ও কবিতা-নাটক-সঙ্গীত-রম্য রচনাসহ অগণিত আখ্যানের আধার, স্বভাবতই যা অনুপ্রাণিত করেছিল মাঠ পর্যায়ে যুদ্ধরত অগণিত মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনগণকে। স্বাধীনতার পরেও সেই স্রোতধারা অবশ্যই অবরুদ্ধ হয়নি। বরং এগিয়ে চলেছে নিরন্তর বেগে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে শিল্প-সাহিত্যের সেই ফল্গুধারা। স্বভাবতই আমাদের শিল্প-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট করেছে সুমহান মুক্তিযুদ্ধ। আরও পড়বে অদূর ভবিষ্যতে। মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য ও সার্থকতা নিহিত সেখানেই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একটি বড় প্রভাব বিস্তারী অংশ অবশ্যই ভাষা আন্দোলন, মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতাযুদ্ধ। বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস, কবিতা ও ছড়ায় এর অনেকটাই বিধৃত হয়েছে। তবে আরও বিস্তৃত ও গভীর দ্যোতনার অবকাশ রয়েছে। এর বাইরেও স্বাধীনতা-পূর্ব ও যুদ্ধকালীন শরণার্থী শিবিরের মানবেতর পরিস্থিতি, যুদ্ধে বিদেশী ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তা-সহযোগিতা, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের কর্মকা- ইত্যাদি সুবিস্তৃত পরিসরে লেখালেখির যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হয়। অথচ তরুণ প্রজন্মের জন্য এসব বিষয়ে প্রামাণ্য বই-পুস্তক অপরিহার্য। বিশ্বের দরবারে জাতি হিসেবে উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে হলে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্যভিত্তিক ইতিহাস এবং প্রেক্ষাপট জানা অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, যারা হবে আগামী দিনের বাংলাদেশের কর্ণধার ও চালিকাশক্তি, তাদের জন্য তা আরও বেশি অপরিহার্য। বইমেলায় আগত অধিকাংশ পাঠক ও ক্রেতার মতানুসারে, প্রজন্মের কথা বিবেচনায় রেখে আরও বেশি মুক্তিযুদ্ধের সৃজনশীল বই ও ইতিহাস গ্রন্থ লেখা আবশ্যক, যার অভাব এবারের বইমেলায় প্রকট। প্রকাশকদের এসব বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগ দাবি করে পাঠক শ্রেণী। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল। সঠিক ও তথ্যনির্ভর পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস অদ্যাবধি লিখিত হয়নি, এটা বড়ই পরিতাপের বিষয়। বঙ্কিমচন্দ্র প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘এই ইতিহাস কে লিখিবে?’ উত্তরও তিনিই দিয়েছিলেন, ‘তুমি লিখিবে, আমি লিখিব, সকলেই লিখিবে।’ সে থেকেই যথাসময়ে বেরিয়ে আসবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। বর্তমানে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায়। তবে সব সময় যে সরকারী উদ্যোগেই লিখিত হতে হবে ইতিহাস গ্রন্থমালা তা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প-িতবর্গও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
×