ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২০ মার্চ ২০১৭

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী  আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের আজ চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক, ভাষাসৈনিক ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জিল্লুর রহমান। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ছিলেন রাজনীতি ও রাজনীতির বাইরে এক অনন্য মানুষ। স্কুলজীবনে রাজনীতিতে হাতেখড়ি, এরপর একজন স্বেচ্ছাসেবক থেকে রাজনীতির পথচলায় দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জন্ম নেয়া এ মানুষটি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন দেশের জন্য। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী দিনগুলোর ক্লান্তিহীন কর্মী ছিলেন বাংলাদেশের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক। আওয়ামী লীগের দলীয় লোক হিসেবে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেয়া হলেও সবাই যেন তাকে অভিভাবকই ভাবতেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার কোন শত্রু ছিল বা তার সমালোচনা হয়েছে এমনটা চোখে পড়ে না। রাজপথের সঙ্গী স্ত্রী আইভি রহমান, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে জিল্লুর রহমান যখন সুখের জীবন পার করছিলেন তখন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আবার বড় আঘাত আসে তার জীবনে। শেখ হাসিনার জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমান মারা যান। স্ত্রীকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন জিল্লুর রহমান। স্বাধীনতার পর দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন জিল্লুর রহমান। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী রাজনীতির দুঃসময়ে শক্ত হাতে আওয়ামী লীগের হাল ধরে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে দৃঢ়তা ও দক্ষতার পরিচয় দেন। জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জিল্লুর রহমান ময়মনসিংহ জেলা শহরে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৪৫ সালে ভৈরব কেবি হাইস্কুল থেকে তিনি মেট্রিক, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার অপরাধে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন এবং একই সঙ্গে তার মাস্টার্স ডিগ্রী কেড়ে নেয়া হয়। কিন্তু প্রবল আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুনরায় তার মাস্টার্স ডিগ্রী ফিরিয়ে দেয়। ১৯৪৬ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র থাকাকালে সিলেটে গণভোটের কাজ করার সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-র ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি গণআন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ গণপরিষদ সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন। ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং এলজিআরডিমন্ত্রী হিসেবে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি মহান জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরী আইন জারির পর ওই বছরের ১৬ জুলাই রাতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হলে জিল্লুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দল পরিচালনা করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬ষ্ঠ বারের মতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি নবম জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের চারবার তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। জিল্লুর রহমানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ তার কবরস্থানে সকাল ৮টায় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মিলাদ মাহফিল কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। বাদ আসর মরহুম জিল্লুর রহমানের বাসভবনে (বাড়ি-২২, সড়ক-১০৮, গুলশান-২, ঢাকা) মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওই মিলাদ মাহফিলে আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহীদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে।
×