ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীতাকুণ্ডের জঙ্গী আস্তানা জেএমবির শাখা দাওয়াতুল ইসলামের

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২০ মার্চ ২০১৭

সীতাকুণ্ডের জঙ্গী আস্তানা জেএমবির শাখা দাওয়াতুল ইসলামের

নিহত ৪ জঙ্গীর দুইজন আপন খালাত ভাই ॥ আট মাস আগে চিরকুট লিখে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সীতাকুণ্ডের আমিরাবাদ ও প্রেমতলায় আস্তানা গেঁড়েছিল নব্য জেএমবির শাখা সংগঠন দাওয়াতুল ইসলাম। গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রেমতলার ছায়ানীড় ভবনে অপারেশন এ্যাসল্ট-১৬-এ এক শিশু ও যে ৪ জঙ্গী মারা গেছে তাদের পরিচয় এখন পরিষ্কার। এদের মধ্যে রাফিদ আল হাসান ও আয়াত আল হাসান দু’জন আপন খালাত ভাই। তাদের বাসা ঢাকার মিরপুরের মনিপুর পাড়ায়। নিহত অপর দম্পতি কামাল উদ্দিন ও জোবাইদার বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের যৌথ খামার পাড়া এলাকায়। রবিবার কামাল উদ্দিনের বাবা মুজাফফার আহমদ ও জোবাইদার বাবা নুরুল আলমকে সীতাকুণ্ড- পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অপরদিকে অপর দুই জঙ্গী রাফিদ আল হাসান ও আয়াত আল হাসানের (যাদের ছদ্মনাম রাশেদ ও হৃদয়) পরিচয়ও উদঘাটিত হয়েছে। তাদের ছবিও মিলেছে। তারা সম্পর্কে আপন খালাত ভাই। থাকত ঢাকার মিরপুর মনিপুর পাড়ায়। গত আট মাস আগে এই দুই খালাত ভাই নিখোঁজ হয়। যাওয়ার আগে তারা পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে একটি চিরকুটও লিখে যায়। চিরকুটটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। এতে রাশেদ লিখেছে, আমরা আমাদের পথ খুঁজে পেয়েছি। আমাদের জন্য কোন চিন্তা করো না। তোমরা ফারদিনকে কোন দোষারোপ করো না। ফারদিন কে? তা এখনও জানা যায়নি। তবে পুলিশ বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে ফারদিন একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত। কিন্তু এর সম্পূর্ণ সত্যতা এখনও মেলেনি। ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর ফারদিন নামের এক জঙ্গীর কথা প্রচার হয়েছিল। এ দুই তরুণ জঙ্গী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তাদের পাসপোর্টও নিয়ে যায়। তাদের উভয়ের পরিবার থেকে ওই সময়ে মিরপুর থানায় জিডি করা হয়েছে। এর মধ্যে আরাফাতের মায়ের নাম মুনমুন আহমেদ বলে জানা গেছে। তিনি যে জিডিটি করেছেন তার নম্বর ৬৩৭। দু’জনেরই বয়স ১৮ থেকে ১৯। পুলিশ এই দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের পরিবারের সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্টের প্রক্রিয়া চলছে। শুধু তা নয়, ছায়ানীড় ভবনে নিহত সবারই ডিএনএ টেস্ট করা হবে। নিহতদের বাবা-মায়ের অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট মেলানো হবে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ৪ জঙ্গীর শরীরের আলামত ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করি ডিএনএ টেস্টের পর তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। উল্লেখ্য, রাফিদ ‘এ’ লেভেলের ছাত্র। আর আয়াত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিল। পুলিশ জানায়, সীতাকু-ে আস্তানা গাঁড়ার আগে এরা চট্টগ্রামের পটিয়ায় চার মাস অবস্থান নিয়েছিল। এরপর তারা সীতাকু-ে এ আস্তানায় ওঠে। অপর আস্তানা অর্থাৎ সাধন কুঠিরে ওঠে দম্পতি জসিম ও আরজিনা। এরা সকলেই জেএমবির শাখা সংগঠন দাওয়াতুল ইসলাম শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সীতাকু--মীরসরাই বেল্টে পর পর যে কয়েকটি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে এ সংগঠনের সদস্যরা জড়িত বলে পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত। এদিকে সীতাকু-ের ছায়ানীড়ে নিহত জঙ্গী কামাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী জোবাইদার পিতা মোজাফফর আহমদ ও নুরুল আলমকে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি এবং জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে সীতাকু- পুলিশ জানিয়েছে। এদিকে ছায়ানীড় থেকে রবিবার আরও ৬টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নিস্ক্রিয় করা হয়েছে ১৬টি বোমা, ১২টি গ্রেনেড, ৫ ড্রাম হাইড্রোজেন ফারঅক্সাইড, সালফিউরিক এসিড ও বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। ছায়ানীড় ভবনের ওই ফ্ল্যাটের একটি কক্ষ এখনও তল্লাশির জন্য সিলগালা করে রাখা হয়েছে। কারণ প্রথম অবস্থায় এটি খোলার পর কিছু সময়ের জন্য অগ্নিকা- ঘটে। আগুন নিভিয়ে পুলিশ তা সিলগালা করে দেয়। ওই রুমে ওপরের অংশে তুলা ও কম্বল আবৃত বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক সামগ্রী থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। তাই সাবধানতার কারণে ধীরে সুস্থে তল্লাশি করবে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট। অপরদিকে সাধন কুঠির থেকে গ্রেফতারকৃত জঙ্গী দম্পতি জসিম ওরফে জহিরুল ইসলাম এবং আরজিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত কোন তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বলে জানানো হয়েছে। তাদের পৃথক পৃথকভাবে ১২ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। অস্ত্র, হত্যা, গোলাবারুদ ও সন্ত্রাস দমন আইনে তাদের বিরুদ্ধে চারটি পৃথক মামলা রুজু করেছে সীতাকু- পুলিশ নিজে বাদী হয়ে। উল্লেখ্য, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সীতাকু-ের আমিরাবাদের সাধন কুঠির ও পরদিন প্রেমতলার ছায়ানীড় ভবনে দুটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। সাধন কুঠিরে শিশুসহ এক দম্পতি অর্থাৎ কামাল উদ্দিন ও আরজিনা গ্রেফতার হওয়ার তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ছায়ানীড় ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মেলে। এই আস্তানায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াতের যৌথ সাঁড়াশি অভিযানে এক শিশু ও ৪ জঙ্গী মারা যায়। ছায়ানীড় ভবনটি পুলিশ এখনও ঘিরে রেখেছে। এর মালিকদের প্রথমে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়। সীতাকু- থেকে জনকণ্ঠ প্রতিনিধি জাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী জানিয়েছেন, ছায়ানীড় ভবনের নিচতলার জঙ্গী আস্তানা থেকে এখনও বিভিন্ন ধরনের বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। ফ্ল্যাটটির একটি কক্ষে এখনও বিপুল পরিমাণ বোমা ও গোলাবারুদ রয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
×