ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নিয়ে আলোচনা

ভবিষ্যতে বেসিক ব্যাংককে আলাদাভাবে নার্সিং করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২০ মার্চ ২০১৭

ভবিষ্যতে বেসিক ব্যাংককে আলাদাভাবে নার্সিং করা হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসিক ব্যাংককে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে পৃথক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এই ব্যাংক এতটাই সমস্যাগ্রস্ত যে মূলধন ঘাটতির বিষয়ে আলোচনায় বেসিক ব্যাংক থাকলে অন্য ব্যাংকের বিষয়ে আলোচনাই করা যায় না। তাই আগামীতে বেসিক ব্যাংককে আলাদাভাবে নার্সিং করা হবে। রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান, মূলধন ঘাটতি থাকা সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী, জনতা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মুহিত বলেন, বেসিক ব্যাংকের সমস্যা এককভাবে ডিল করতে হবে। অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে বসে বেসিকের আলোচনা করা যাবে না। কারণ বেসিক ব্যাংক থাকলে অন্য কিছু আলোচনা করা যায় না। কারণ সবাই এটা নিয়ে কথা বলে। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসিক ব্যাংক কমপ্লিটলি আলাদা। এটি একটি বিশেষ ব্যাংক হয়ে গেছে। এটা সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট জানি। এটার দেনাদার কারা। কার দেনা কতটুকু সেটা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য আছে। বেসিক ব্যাংক বলে তাদের ক্যাপিটালাইজেশন এরকম করতে হবে। এটা হতেই পারে না। এটা ইম্পসিবল। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না সেজন্য আপনারা অপেক্ষা করেন। দেখেন কি হয়। এটা নিয়ে দুদকে রিপোর্ট গেছে। আজকে রবিবার সাতটি ব্যাংক যে দাবি-দাওয়া দিয়েছে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এগুলো নিয়ে আলোচনা চলবে। আলোচনার পর আগামী মাসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্যাপিটাল শর্ট ফল কিছু কিছু সব ব্যাংকই পাবে। তবে সেটা এখনই চূড়ান্ত নয়। পরবর্তী মাস থেকে বাজেটের দুই হাজার কোটি টাকা থেকে ক্যাপিটাল শর্ট ফল দেয়া শুরু হবে। তবে কাকে কতটুকু দেয়া হবে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলো চরমভাবে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। সোনালী, বেসিক, কৃষিসহ পাঁচ ব্যাংকেরই মূলধন ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির কারণে সরকার এর আগে ৮ হাজার কোটি টাকা নগদ দিয়েছে সাত ব্যাংককে। এ ব্যাংকগুলোই আবার নতুন কৌশলে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা দাবি করছে। এবারের দাবি নগদ টাকা নয়, বন্ড। এসব বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশেষ বৈঠকে করেন। প্রসঙ্গত, মূলত বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও খেলাপী ঋণ আদায় করতে না পারার কারণেই ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যেই সোনালী, জনতা ও বেসিক ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে রূপালী, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর দুর্নীতির তথ্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন তদন্তে উঠে আসে। এরপরের তিন বছরে (২০১৪ থেকে ২০১৬) সরকার সোনালী, বেসিক, জনতাসহ সাত ব্যাংককে ৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে। এগুলো দেয়া হয়েছে কখনও মূলধন ঘাটতি পূরণ, কখনোবা মূলধন পুনর্গঠন বা মূলধন পুনর্ভরণের নামে। এরপরও নতুন করে বেসিক, জনতা ও রূপালী ব্যাংক আরও ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা চেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে সরকার। কারণ বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের চেয়ে ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ অনেক বেশি।
×