ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভূতপূর্ব নামকরণ, বাঙালীরই হলো জয় বাংলা কাপ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২০ মার্চ ২০১৭

অভূতপূর্ব নামকরণ, বাঙালীরই হলো জয় বাংলা কাপ

মোরসালিন মিজান ॥ জয় বাংলা কাপ নামকরণের অভূতপূর্ব ঘটনাটির কথা আগে বলতে হবে। বলতেই হবে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার খেলা। টেস্ট সিরিজ। জয় বাংলা কাপ নাম! অভূতপূর্ব এই নামকরণ করেছিল ‘এ্যাডটাচ স্পোর্টস এ্যান্ড লাইভ ইভেন্টস’ নামের একটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা আয়োজনের টেলিভিশন স্বত্ব, মাঠ ও বিজ্ঞাপন স্বত্ব কিনে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের মাঠের স্বত্ব কিনে নিয়েছিল। টেলিভিশন ও বিজ্ঞাপন স্বত্ব যথারীতি বিক্রি করে দেয়া হয়। কিন্তু টেস্ট সিরিজের স্বত্ব নিজের করে রাখে প্রতিষ্ঠানটি। সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে সিরিজের টাইটেল করা হয় ‘জয় বাংলা কাপ’। আর যে টেস্ট সিরিজের নাম ‘জয় বাংলা কাপ’ সেটি তো অন্যের হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই যেন হার মানতে হলো বড় শক্তির দল শ্রীলঙ্কাকে। স্বাধীনতার মাসে দারুণ জয় পেল বাংলাদেশ। পাঁচ দিনের টানা লড়াই শেষ হলো রবিবার বিকেলে। তারপর থেকে বিপুল আনন্দ উদ্যাপন। টেস্ট জেতার আনন্দে মাতোয়ারা এখন বাঙালী। স্বাধীনতার মাস মানেই অন্যরকম আবেগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন করে জেগে ওঠে বাঙালী। নিজেকে বিশেষভাবে খুঁজে পায়। কিন্তু ক্রিকেটের মাঠ যারপরনাই শুকনো। এখানে ব্যাট বলের লড়াই। আবেগ দিয়ে হয় না। হওয়ার কথা নয়। এর পরও বাংলাদেশের মানুষ আকুল হয়ে তাকিয়ে ছিল কলম্বোর পি সারা ওভালের দিকে। ক্রিকেটাররা নিজেদের খেলা খেলেছেন। তাই বলে মার্চ ভুলে থাকবেন? হতেই পারে না। ৭ মার্চের উত্তাল জনসভা, ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ। ২৫ মার্চের করুণ মৃত্যু। এবং ঠিক পরদিন ২৬ মার্চ নতুন জন্ম। বাংলাদেশ পাওয়া। মহা অর্জনের এই মাস ভুলে থাকতে পারে কোন বাঙালী? টেলিভিশনে চোখ রেখে ঠিকই পড়া গেছে মুশফিকদের চোখের ভাষা। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ক্রিকেটাররা। শ্রীলঙ্কার গলে ৭ মার্চ শুরু হয়েছিল দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয়টি শুরু হয় বুধবার। রবিবার ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে আসে জয়। এদিন সকালে বেশ মুশকিলে পরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। লঙ্কানদের শেষ দুটি উইকেট তুলে নিতে ঘাম ঝড়াতে হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় ক্রিজে ছিলেন দুই ক্রিকেটার। তাদের অবদানে ১৯১ রানের লক্ষ্য নির্ধারতি হয় বাংলাদেশের জন্য। মাত্র ১৯১ রান হলেও, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা হওয়ায় কাজটি সহজ ছিল না। কিন্তু তীরহারা ঢেউয়ের সাগর ঠিক পাড়ি দিয়েছেন তামিম-সাব্বিররা। মেহেদী হাসান মিরাজের সুইপ শটে কত কী যে পাওয়া হয়ে গেল। শততম টেস্ট জয়। শ্রীলঙ্কার মতো পরাশক্তিকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারানো। আর স্বাধীনতার মাসে জাতিকে কিছু উপহার দিতে পারার যে আনন্দ সে তো বার বার দৃশ্যমান হচ্ছিল। মাঠে থাকা মিরাজ ও মুশফিক ছুটছিল কেবল। দিগি¦দিগ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগ দেন অন্য ক্রিকেটাররা। তাতেই অনন্য সুন্দর। লঙ্কা জয়ের আনন্দ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পরে বাংলাদেশের প্রতি প্রান্তে। বিজয় নিশান উড়ছে ঐ/খুশির হাওয়ায় ঐ উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে...। পতাকা হাতে ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসেন রাজধানীর ক্রিকেট অনুরাগীরা। এদিনও বড় সমাবেশ ঘটেছিল টিএসসি সড়কদ্বীপে। নেচে গেয়ে বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন সবাই। শহর ঢাকার অন্য সব রাস্তায়ও ছিল বর্ণাঢ্য উদযাপন। এমন উদযাপনের উপলক্ষ্য আরও আসুক। ঘন ঘন আসুক। স্বাধীনতার মাসে নতুন শুরু হোক বাংলাদেশ ক্রিক্রেটের। সকলের তাই প্রত্যাশা।
×