ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকসু নির্বাচন কেন নয়- জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২০ মার্চ ২০১৭

ডাকসু নির্বাচন কেন নয়- জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন না দেয়াকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ডাকসু নির্বাচন কেন দেয়া হবে না এবং ২৬ বছর ধরে ধরে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষসহ ছয়জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে হবে। একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এই রুল জারি করে। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোঃ মনসুর, সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী জাফরুল হাসান নাদিম গত বৃহস্পতিবার এই রিট আবেদন করেছিলেন। তাদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোকলেসুর রহমান। এর আগে গত ৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মোঃ আবদুল হামিদ ডাকসু নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব শূন্যতা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, ডাকসু নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে ভবিষ্যত নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হবে। এ কারণে ডাকসু নির্বাচন ইজ এ মাস্ট। দেশ ও জাতির উন্নয়নে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অপরটি অচল। তাই গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করতে হলে দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই। আদর্শভিত্তিক ও কল্যাণমুখী ছাত্ররাজনীতির নিরবচ্ছিন্ন চলার পথ নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রসমাজকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রাম এবং স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসন ও স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনে রাজপথে নেতৃত্বদানকারী ডাকসু প্রায় ২৭ বছর ধরে অকার্যকর। ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও সে নির্বাচন আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে তিন দফায় তফসিল ঘোষণা করলেও হয়নি নির্বাচন। ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রদল নেতা আরিফ হোসেন তাজ খুনের পর একটি তদন্ত কমিটি ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার সুপারিশ করলেও সেই ছয় মাস আসেনি ২০ বছরেও। ২০০৫ সালের মে মাসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণার পর ছাত্র সংগঠনগুলো নড়েচড়ে বসে। তবে ওই পর্যন্তই। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দায়িত্ব নেয়ার পরই নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তারও ঘোষণা অনুযায়ী কাজ আগায়নি। এরপর ডাকসু নির্বাচন চেয়ে ২০১৩ সালের ১২ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থী। ওই বছরের ৮ এপ্রিল প্রাথমিক শুনানি শেষে সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চান আদালত। সর্বশেষ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিও উপাচার্যের কাছে ডাকসু নির্বাচনসহ ১৯ দফা দাবি জানিয়েছেন। গত ৪ মার্চ সমাবর্তনে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির তাগাদার পরপর উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছিলেন, আমরা ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুত্ব দেব। আমরা সব সময়ই চেষ্টা করেছি ডাকসু নির্বাচন হোক। সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তাই প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ অবশ্যই তাতে সমর্থন দেবে। ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রলীগের পদক্ষেপ সম্পর্কে আবিদ আল হাসান বলেন, আমরা বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। এদিকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী কলেজের অবস্থা প্রায় একই। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে না ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তবে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে যে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করা যায় সম্প্রতি এর উদাহরণ স্থাপন করেছে ফরিদপুরের সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ। প্রায় ১৩ বছর পর গত ২৬ জানুয়ারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। রাজেন্দ্র কলেজের মতো উদ্যোগ নিলে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
×