ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আরও তিন জেলায় কেন্দ্রীয় কারাগার হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২০ মার্চ ২০১৭

আরও তিন জেলায় কেন্দ্রীয় কারাগার হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ দেশের তিনটি বৃহৎ জেলা কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারা প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্দী ও সাক্ষাতপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব ও সরকারের অর্থিক সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এ তিনটি কারাগারকে সময়ের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করতে চায় কারা অধিদফতর। দেশের অন্যতম বৃহৎ ও পুরাতন এ কারাগার তিনটি হচ্ছে খুলনা জেলা কারাগার, ফরিদপুর জেলা কারাগার ও দিনাজপুর জেলা কারাগার। এর মধ্যে খুলনা ও দিনাজপুর কারাগার সরকারের ২০১৫ সালের তালিকা অনুযায়ী ‘এ’ ক্যাটাগরির কারাগার। এছাড়া দেশের সকল বিভাগীয় শহরে কেন্দ্রীয় কারাগার থাকলেও খুলনায় কোন কেন্দ্রীয় কারাগার নেই। অর্থাৎ জেলা কারাগার রয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ মোট ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার রয়েছে। নতুন ৩টি কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করা হলে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ তে। কারাসূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুর জেলা কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগারের আদলে সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। খুলনা জেলা কারাগারকে স্থানান্তর করে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ একর জমির উপর কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। আর ফরিদপুর জেলাকে বিভাগ ঘোষণা করা হতে পারে এমন সম্ভাবনা থেকে জেলা কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অতি দ্রুত প্রস্তাব পাঠাবে কারা অধিদফতর। বর্তমানে অবকাঠামোগত সুবিধা থাকায় অনুমোদন দেয়ার পরই এসব জেলে কেন্দ্রীয় কারাগারের সকল কার্যক্রমই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এজন্য সরকারকে বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হবে না। কারাসূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদি বন্দীদের কাজের জন্য ওয়ার্কশেড রয়েছে। ফাঁসির দ-প্রাপ্তদের জন্য কনডেম সেল ও ফাঁসির মঞ্চ শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় কারাগারেই থাকে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগার আশপাশের জেলা কারাগারগুলোর সার্কেল জেল হিসেবে কাজ করে। যেখান থেকে থালাবাটি, কম্বল, প্লাস্টিক সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এই তিনটি কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে ঘোষণা দিলে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, পঞ্চগড়, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা কারাগারে আটক যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত ও ফাঁসির আসামিসহ সাধারণ বন্দী ও তাদের স্বজনরা উপকৃত হবেন। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেশের কারাগারসমূহকে ৭টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির চারটি কারাগারের মধ্যে খুলনা ও দিনাজপুর ছাড়া দু’টি কারাগার (চট্টগ্রাম ও সিলেট) ১৯৯৭ সাল থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে প্রশাসনিক কাজ শুরু করেছে। এছাড়া দেশের সকল বিভাগীয় জেলা সদরে কেন্দ্রীয় কারাগার থাকলেও শুধু খুলনাতেই জেলা কারাগার রয়েছে। কারা অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯২২ সালে ৫.৩৩ একর জায়গার উপর নির্মিত খুলনা জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা ৬০৮ জন। কিন্তু কারাগারটিতে বর্তমানে বন্দী রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। এর পার্শ্ববর্তী বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলা কারাগারে বর্তমানে (১ মার্চ ২০১৭ অনুযায়ী) মোট ১ হাজার ৩শ’ ৮২ জন বন্দী রয়েছে। কিন্তু কারগার তিনটিতে সর্বমোট এক হাজার বন্দী ধারণক্ষমতা রয়েছে। সূত্র জানায়, খুলনায় কেন্দ্রীয় কারাগারের সকল সুযোগ সুবিধাসহ ২ হাজার বন্দী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশাল আয়তনের কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। এতে কর্মকর্তা কর্মচারিদের আবাসন, কারারক্ষী ব্যারাক, আধুনিক নিরাপত্তা এবং বন্দীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। খুলনায় পূর্ণাঙ্গ কোন মেডিক্যাল কলেজ না থাকায় আশপাশের জেলা কারাগারের আসামিদের দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেখানে একটি প্রিজন সেল তৈরি করে বন্দীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে। অপরদিকে, ১৮৫৪ সালে প্রায় ২৯ একর জায়গার উপর নির্মিত দিনাজপুর জেলা কারাগারে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার বন্দী রয়েছ্।ে যার ধারণক্ষমতা ৫৯০ জন। পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা ৫৬৮ জনের বিপরীতে বর্তমানে বন্দী আছে ১২৯০ জন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, সময়ের প্রয়োজনে ও ফাঁসির আসামি, যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্তসহ সকল সাধারণ বন্দীর সুবিধার্থে দেশের অতি পুরনো ৩টি কারাগারকে জেলা কারাগার থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগার হলে বর্তমান জনবলের পাশাপাশি সম্প্রতি সরকারের নতুন অনুমোদন দেয়া ৩ হাজার ১শ’ ৭জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়েই বন্দীদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান ও সশ্রম দ-প্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। এছাড়া এ তিনটি কারাগারে অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এসব কারাগারে বন্দীদের আত্মীয়-স্বজন দেখা করার সুবিধা পাবেন।
×