ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টে বাংলাদেশের যত জয়

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২০ মার্চ ২০১৭

টেস্টে বাংলাদেশের  যত জয়

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ রবিবার কলম্বোর পি সারা ওভালে ঐতিহাসিক জয়ে (৪ উইকেটে) ১-১ এ সমতায় সিরিজ শেষ করার পাশাপাশি নিজেদের শততম টেস্ট রঙিন করে রাখল বাংলাদেশ। ২০০০ সালে স্ট্যাটাস পাওয়ার সতেরোতম বছরে এসে টাইগারদের নবম জয় এটি। পরিসংখ্যান মোটেই গর্ব করার মতো নয়। তবে এই সাফল্যের মহিমা অনেক। কারণ বিদেশের মাটিতে এই প্রথম শক্তিধর কোন দেশকে হারাল বাংলাদেশ। ভিনদেশে আগের জয়গুলো ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়েতে, যখন দুটি দলই বেশ দুর্বল ও খর্বশক্তির। এবার উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি লঙ্কানদের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে দাপুটে জয়ে অনন্য গৌরবের সঙ্গী হলেন মুশফিকুর রহীম, সাকিব-আল হাসান, তামিম ইকবালরা। বাংলাদেশ অবশ্য প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল নিজেদের মাঠে, ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে। মর্যাদার সাদা পোশাকে টাইগারদের আগের আট জয়ের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলোÑ চট্টগ্রাম; ৬-১০ জানুয়ারি, ২০০৫ : পাঁচ বছর অপেক্ষার পর আভিজাত ঘারনায় প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুইয়েকে ২২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারায় হাবিবুল বাশারের দল। প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রানে অলআউট টাইগাররা ৯ উইকেটে ২০৪ রানে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৩১২ রান করা জিম্বাবুইয়ের সামনে ৩৮১ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড়ায়। কিন্তু সফরকারীদের ১৫৪ রানে অলআউট করে অপেক্ষার অবসান হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। কিংসটন; ৯-১৩ জুলাই, ২০০৯ : বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলায় সিরিজের আগে নিজেদের প্রত্যাহর করে নেন ক্রিস গেইল, চন্দরপলসহ তারকা ক্রিকেটার। দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে মাঠে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কেমার রোচ, ড্যারেন স্যামিদের সামনে প্রথম টেস্টে মাত্র ২৩৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। জবাবে ব্যাট করে ৩০৭ রান তোলে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৩৪৫ রানে। ২৭৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে ক্যারিবিয়ানরা অলআউট হয় ১৮১ রানে, ৯৫ রানের জয়ে দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো সাফল্য পায় টাইগাররা। ৫ উইকেট নেন মাহমুল্লাহ রিয়াদ। গ্রানাডা; ১৭-২০ জুলাই, ২০০৯ : সিরিজ জয়ের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৩৭ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ট্রেভিস ডাওলিন করেন ৯৫ রান। রাকিবুল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের কার্যকরী ইনিংসে ২৩২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সাকিব-আল হাসানের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০৯ রানে অলআউট হলে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২১৫ রানের। সাকিবের অপরাজিত ৯৬ রানে ভর করে ৪ উইকেট হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচ ও সিরিজসেরা হন সাকিব। হারারে; ২৫-২৯ এপ্রিল, ২০১৩ : চতুর্থ সাফল্য আসে আরো চার বছর পর। হারারাতে প্রথমে ব্যাটিং করে ৩৯১ রানে অলআউট টাইগারদের হয়ে সাকিব, মুশফিক ও নাসির হোসেন হাফসেঞ্চুরি করেন। চিগুম্বুরা বীরত্বে ২৮২ অলআউট হয় জিম্বাবুইয়ে। ১০৯ রানের লিডের সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে আরও ২৯১ রান যোগ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও হাফসেঞ্চুরি করেন সাকিব, মুশফিক ও নাসির। ৪০১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং নেমে ২৫৭ রানে অলআউট জিম্বাবুইয়ে। এবার বাংলাদেশের জয় ১৪৩ রানে। মিরপুর; ২৫-২৭ অক্টোবর, ২০১৪ : সাকিব-আল হাসানের ৬ উইকেটে জিম্বাবুইয়েকে ২৪০ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। এরপর টাইগাররা আটকে যায় ২৫৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের মাত্র ১১৪ রানে গুটিয়ে দেয় মুশফিক বাহিনী। ৩৯ রানে ৮ উইকেট নিয়ে ইতিহাসে নাম লেখান তাইজুল ইসলাম। ৭ উইকেট হাতে রেখে ১০২ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত পারফর্ম করে ম্যাচসেরা হন তাইজুল। খুলনা; ৩-৭ নবেম্বর, ২০১৪ : তামিম আর সাকিবের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৪৩৩ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে মাসাকাদজার ১৫৮ রানে ভর করে ৩৬৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুইয়ে। মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল হক ও শুভাগত হোমের হাফসেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ফলে জিম্বাবুইয়ের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১৪ রান। সাকিব, তাইজুল ও যুবায়ের হোসেনের ঘূর্ণিতে বেসামাল জিম্বাবুইয়ে গুটিয়ে যায় ১৫১ রানেই। ১৬২ রানের বড় জয় পায় বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম; ১২-১৬ নবেম্বর, ২০১৪ : সিরিজে টানা তৃতীয় জয় পায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরিতে ৫০৩ রানের বিশাল সংগ্রহ। সিকান্দার রাজা, চাকাভা, চিগুম্বুরা ও মাসাকাদজার শতকে ৩৭৪ রান করে জিম্বাবুইয়ে। মুমিনুল হকের শতক ও তামিম ইকবালের অর্ধশতকে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ৩১৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ে অলআউট হয় ২৬২ রানে। ১৬৮ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। মিরপুর; ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ : মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব-আল হাসানের দুর্দান্ত ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানে হারায় বাংলাদেশ। এটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। ২৭২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৬৪ রানে শেষ হয় ইংলিশদের ইনিংস। প্রথমে তামিমের সেঞ্চুরি সত্ত্বেও ২২০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ২৪৪ রান করে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরুল-মাহমুদুল্লহার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২৯৬ রান তুললে জয়ের জন্য ইংলিশদের সামনে ২৭৩ রানে লক্ষ্য দাঁড়ায়। কিন্তু মিরাজ-সাকিব ঘূর্ণিতে ১৬৪ রানে গুড়িয়ে যায় এ্যালিস্টার কুকের দল। দুই টেস্টে মোট ১৯ উইকেট তুলে সিরিজসেরা হন অভিষিক্ত মিরাজ।
×