ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমস্যায় জর্জরিত করটিয়া সা’দত কলেজ

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২০ মার্চ ২০১৭

সমস্যায় জর্জরিত করটিয়া  সা’দত কলেজ

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ করটিয়া সরকারী সা’দত কলেজ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। ৯০ বছরের পুরনো সরকারী সা’দত কলেজে ক্লাস সমস্যার পাশাপাশি পর্যাপ্ত শিক্ষক ও অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। আবাসন সুবিধা ও পরিবহন ব্যবস্থাও অপ্রতুল। জানা যায়, প্রায় বছরব্যাপী কলেজে পরীক্ষা থাকার কারণে ক্লাস হয় না তেমন। পরীক্ষার্থীরা আশপাশের পাঁচটি কলেজের শিক্ষার্থী। আর সা’দত কলেজের একই বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল অন্য কলেজে। কেবল দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চললেও কলেজের অন্যান্য বর্ষের ক্লাস বন্ধ। সরকারি সা’দত কলেজের ছাত্রাবাসের কয়েক ছাত্র ও কয়েক শিক্ষক জানান, পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে ক্লাস নেয়ার কথা থাকলেও কার্যত পুরো সময়ে অঘোষিত ছুটি থাকে। পরীক্ষা চলাকালে অন্যান্য বর্ষের ক্লাস হবে না। হলেও একেবারে হাতেগোনা। এভাবে বছরে পাঁচ থেকে ছয় মাস পরীক্ষা থাকায় ক্লাস হয় না, অঘোষিত ছুটি থাকে। ৩৭ একর জায়গা নিয়ে ক্যাম্পাস হলেও তা বেশ এলোমেলো। যেখানে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। সীমানা প্রাচীর না থাকায় কিছু জায়গা বেদখল হওয়ারও আশঙ্কা আছে। ১৯২৬ সালে টাঙ্গাইলের জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী তাঁর পিতামহ সা’দত আলী খান পন্নীর নামে টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে করটিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন সা’দত কলেজ। ১৯৭৯ সালে কলেজটি সরকারী হয়। ঢাকা কলেজসহ বড় কিছু কলেজে পরীক্ষার ফাঁকে ক্লাস হলেও সা’দত কলেজের চিত্রটা ভিন্ন। কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, আবাসিক সঙ্কটের কারণে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে বেশি অনুপস্থিত থাকেন। আবার মোট শিক্ষকদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ঢাকাসহ দূর থেকে যাওয়া-আসা করায় তাঁরাও গরহাজির থাকেন। বিকেল চারটা পর্যন্ত ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও বেলা দুইটার পর আর ক্লাস হয় না। তবে সময়সূচীতে ঠিকই বিকেলে ক্লাস রাখা হয়েছে। অবশ্য এমন পরিস্থিতিতেও কলেজটিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পাসের হার ৯৫ শতাংশের ওপরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলে এই কলেজটি প্রথম সারির। এমন সাফল্যের কারণ কী? প্রাইভেট পড়ে পরীক্ষায় ভাল করাকে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। গণিতের ছাত্র মোবারক হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। তিনি দু’জনের কাছে পড়েছেন। প্রাইভেটে প্রতি মাসে ১২টি ক্লাসের জন্য ৬০০ টাকা করে দিতে হয়। অবশ্য কলেজের প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত এক শিক্ষক বলেন, পরীক্ষার ফাঁকে তাঁরা ক্লাস নিতে চান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। ফলে পরীক্ষার জন্য ৭৫ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতাও মানা যায় না। তাঁর মতে, স্বতন্ত্র পরীক্ষার হল করে সব বর্ষের পরীক্ষা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় না নিলে এ সমস্যা দূর হবে না। শিক্ষক দরকার কমপক্ষে ২০৪, আছেন ১২৫ জন। ১৯৯৫ সালে কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক স্তর বাদ দেয়া হয়। এখন স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস), স্নাতকোত্তর, প্রিলিমিনারি স্তরে পড়ানো হয়। ১৮টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ১৫টি বিষয় স্নাতকোত্তর। মোট শিক্ষার্থী প্রায় ২০ হাজার। শিক্ষকের ১৩৬টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ১২৫ জন। এই হিসাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১৬০। অথচ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:২০। এই কলেজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোর্স পড়ানো হয়। আর কলেজের আবাসিকের এক কক্ষে ২০ ছাত্রীও থাকেন। ছাত্রদের জন্য দুটি ছাত্রাবাস ও ছাত্রীদের জন্য একটি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। টাঙ্গাইল ছাড়াও জামালপুর, কুড়িগ্রাম, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়েন। প্রশাসনিক কাজে যুক্ত একজন শিক্ষক বলেন, কলেজে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। কিন্তু ছাত্রীদের জন্য মাত্র ৪০০ শয্যার ছাত্রীনিবাসে প্রায় এক হাজার ৫০০ ছাত্রী থাকেন। ফলে পড়াশোনার পরিবেশ থাকে না। রিমি আক্তার নামে ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, ছাত্রীনিবাসের তাঁদের কক্ষে (হলরুম) ২০ জন থাকেন। এ সময় পাশে থাকা হলের দায়িত্বরত একজন কর্মচারী বলেন, এ রকম আরও কয়েকটি কক্ষ আছে। আবাসন সঙ্কটের সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবহন সংঙ্কট। চারটি বাস থাকলেও দুটির অবস্থা লক্কড়ঝক্কড়। কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুল আলীম মিয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র পাঁচ বছর পর এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু অবকাঠামোর দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে কলেজটি। অবকাঠামো বাড়াতে হবে। শিক্ষক বাড়াতে হবে। সীমানা প্রাচীর দিতে হবে। আবাসন সুবিধার পাশাপাশি পরিবহন সুবিধাও বাড়াতে হবে।
×