ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটের শতভাগ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার

১০ শতাংশ কাটছাঁট হচ্ছে সংশোধিত বাজেট

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২০ মার্চ ২০১৭

১০ শতাংশ কাটছাঁট হচ্ছে সংশোধিত বাজেট

এম শাহজাহান ॥ বরাবরের ন্যায় চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট ১০ শতাংশ কাটছাঁট করে সংশোধন করা হতে পারে। লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়া এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) শতভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে ইতোমধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ শঙ্কা থেকেই সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরকারের আয় হচ্ছে কি-না তা হিসাব-নিকাশ করা হয়। যদিও গত কয়েক বছর ধরে এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়েছে। বেড়েছে সরকারের আয়ও। কিন্তু এরপরও সরকারের আয় ও ব্যয়ের সমন্বয় করতে বাজেট সংশোধন করতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ায় ইতোমধ্যে ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এডিপি কাটছাঁট করা হয়েছে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও সংশোধন হচ্ছে। এছাড়া রেমিটেন্স, রফতানি প্রবাহে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে চাপের মুখে পড়েছে বৈদেশিক খাত। তবে অর্থনীতির অন্যান্য সূচক মোটামুটি ইতিবাচক ধারায় চলছে। ভর্তুকি এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়া অনেক কমেছে। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আবার চলতি বাজেট বাস্তবায়নের কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। বাজেটে যেসব কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে তার শতভাগ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বাজেট বাস্তবায়নে কাজ করছে। জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও শেষপর্যায়ে বাজেট বাস্তবায়ন পুরোপুরি হয় না। এজন্য বাজেট সংশোধন করা হয়ে থাকে। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এ বাজেট থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে সংশোধিত বাজেট নির্ধারণ করা হতে পারে। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, লক্ষ্য অনুযায়ী এবার রাজস্ব আয় হবে না। আবার এডিপি বাস্তবায়নও সম্ভব হবে না। ফলে বাজেট সংশোধন ছাড়া উপায় নেই। সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির এক পর্যালোচনায় সিপিডি এ প্রক্ষেপণ করেছে। সংস্থাটি তাদের পর্যালোচনায় সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করা ও জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া বেসরকারী বিনিয়োগ টেকসই করতে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার করা, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের গুণগতমান নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছে। তবে এগুলো করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে বলে মনে করেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার ১৮ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তরে এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নেতিবাচক। ফলে সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। রাজস্ব খাতে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। ভ্যাট আইন কার্যকর হয়নি এবং মাঠপর্যায়ে তা কার্যকরের প্রস্তুতিও নেই। ব্যবসায়িক হিসাব পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন ছাড়া ভ্যাট আইন কার্যকর করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। যদিও অর্থমন্ত্রী আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা দেয়া হয়। বিশাল এ ব্যয় মেটাতে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা (অনুদানসহ)। এ হিসাবে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া এ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। জানা গেছে, অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি এ সাত মাসে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় হয়েছে ৯৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় কম থাকলেও এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। তবে এডিপি বাস্তবায়ন চলছে ধীরগতিতে। অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি এ আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৪ শতাংশ। এ সময়ে ৬টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বাস্তবায়নের হার ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এছাড়া রেমিটেন্স আদায় কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাজেটের পুরো লক্ষ্যের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়ে গেছে। এতে সুদ পরিশোধে সরকারের চাপ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
×