গৌতম পাণ্ডে॥ ‘আমি এখন আর চলচ্চিত্রের ওপর নির্ভর করতে পারছি না। এখন আমার জন্য চলচ্চিত্র আলাদা চরিত্র তৈরি হচ্ছে না, আমাকে ভাবছে না। এ অবস্থায় চলচ্চিত্রে থাকলে আমাকে মাসের পঁচিশ দিনই বেকার থাকতে হবে’- তিন দশকধরে রূপালি পর্দায় বিরামহীন কাজ করার পর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এ কথা বলেছিলেন, চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতি। চলচ্চিত্রের প্রতি এক প্রকার অভিমান নিয়েই তার এ আক্ষেপ ছিল। আর এই আক্ষেপ নিয়েই গত বছরের এই দিনে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ থেকে চির বিদায় নিয়েছিলেন দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের এই শিল্পী। দীর্ঘদিন মস্তিস্ক ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অবশেষে গত বছরের আজকের দিনে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
অনেকটা অসময়েই চলে যাওয়া দিতির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিল্পী সমিতির উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান। এ প্রসঙ্গে অমিত হাসান বলেন, দিতি আপা আমাদের চলচ্চিত্রের গর্ব। বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না যে তিনি আমাদের মাঝে নেই। অথচ এই মানুষটি আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে বড় অসময়েই চলে গেলেন। তার শূন্যতা সত্যিই কোনদিন পূরণ হওয়ার নয়। তিনি ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ। আমাদের সবার প্রিয় এই মানুষটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শিল্পী সমিতিতে মিলাদ মাহফিল এবং স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সবাইকে সেদিন উপস্থিত থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এদিন বাদ আছর মিলাদ মাহফিল ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন অমিত হাসান। সমিতির সহ-সভাপতি ওমর সানী বলেন, চলচ্চিত্রে দিতির মতো মানুষ খুব কমই আছেন। তার সঙ্গে একটি মাত্র চলচ্চিত্রেই অভিনয় করেছি। সেটি তার অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ‘রাজা বাবু’। কিন্তু তার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। শিল্পী সমিতি তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানানোর চেষ্টা করবে, আন্তরিকতার কম থাকবে না এ বিষয়ে।
১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে জন্মছিলেন দিতি। ছোটবেলা থেকে গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে দিতির যাত্রা শুরু হয়। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র আজমল হুদা মিঠু পরিচালিত ‘আমিই ওস্তাদ’।
প্রায় তিন দশক ধরে ছোটপর্দা ও বড়পর্দায় বিরামহীন কাজ করছেন। জীবনের শেষ দিকে এসে ছোটপর্দায় পরিচালকের খাতাতেও নাম লিখিয়েছেন তিনি। প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন দিতি। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ চলচ্চিত্রে আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে দারুণ অভিনয় নৈপুণ্যের জন্য প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ছোটপর্দায়ও দিতি ছিলেন নিয়মিত।
অনেক একক নাটক, টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিক নাটকে দেখা গেছে তাকে। এ ছাড়া রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানও উপস্থাপনা করেছেন। গায়িকা হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বেরিয়েছে তার একক এ্যালবামও। ১৯৯৫ সালে দিতির প্রথম গানের এ্যালবাম প্রকাশ হয় অনুপম রেকর্ডিং মিডিয়ার ব্যানারে। সর্বশেষ এবং তার গানের দ্বিতীয় এ্যালবাম প্রকাশ হয় লেজার ভিশন থেকে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: