ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফরাসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্ব যা ভাবছে

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ২০ মার্চ ২০১৭

ফরাসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্ব যা ভাবছে

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচার অভিযানে প্রার্থী মেরি লে পেনের বাগাড়ম্বরপূর্ণ চরম ডানপন্থী ভাষ্য, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ফ্রাঁসোয়া ফিলোনের উপাখ্যানসূলভ বক্তব্য ও ইম্যানুয়েল ম্যাকরোনের অভিনব স্টাইলে পরিস্থিতি হয়ে উঠছে শুভ-অশুভর এক মিশ্রণ এবং বিষয়টিতে নিবদ্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি। প্রচার অভিযানে প্রধান যে বিষয়টার ওপর আলোকপাত করা হচ্ছে তা হলো পপুলিজম বা লোকরঞ্জনবাদের উত্থান। লে পেন কি ডিঙ্গিয়ে যেতে সফল হবেন অন্য কোন প্রার্থীকে? ফরাসী নির্বাচনী অভিযানকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখছে ব্রেক্সিট-ব্রিটেন। মিডিয়া থেকে নেতৃবৃন্দ ও লন্ডনবাসী পর্যন্ত অনেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ সম্পৃক্ত গণভোটের ফলাফলে বিস্মিত এখনও। লে পেন বিজয়ী হয়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন কিনা এ ব্যাপারে বিস্ময়বোধ করছেন তারা। সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান রিফর্ম থিংক ট্যাংকের নীতিবিষয়ক পরিচালক আয়ান বন্ড বলেছেন, ফরাসী নির্বাচন মূলধারার রাজনীতি ও লোকরঞ্জনবাদের মধ্যে লড়াইকেই প্রতিফলিত করছে। তিনি বলেন, লোকরঞ্জনবাদ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে কিনা বা তা শীর্ষে পৌঁছবে কিনা এবং ইউরোপে আরও যুক্তিসম্মত রাজনীতিবিদ তাদের জানান দিতে সমর্থ হবেন কিনা তাই স্পষ্ট হবে এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচার অভিযানকারীদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেনডেন্স পার্টির সাবেক নেতা নাইজেল ফাবেজ বলেছেন, নির্বাচনে লে পেন ও তার উগ্র-ডানপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এফএন) জয় ইইউর পতন ডেকে আনবে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেছেন, লে পেন জয়ী হলে তা জার্মানির জন্য হবে এক উদ্বেগজনক ও যথার্থ বিপজ্জনক বিষয়। সাপ্তাহিক সংবাদ সাময়িকী দের স্পিজেলে লেখা হয়েছে, একটা প্রশ্নই এখন ঘুরে-ফিরে আসছে। মেরিন লে পেনকে পরাজিত করতে সক্ষম হবেনÑ কে আছেন এমন প্রার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে লে পেনের নামই জয়ী হিসেবে উচ্চারিত হচ্ছে স্পষ্টভাবে। এখানে ট্রাম্প-ঢেউ বাড়বে বা দুর্বল হয়ে পড়বে কিনা এ বিষয়টির ওপর সোচ্চার অনেকেই। সাময়িকীটিতে লেখা হয়েছে, তারপরও রিচমন্ড টাইমস-ডিসপাচ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও কাক্সিক্ষত ফরাসী প্রার্থীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়, লে পেনের রয়েছে দৃঢ়চিত্ততা ও সামঞ্জস্যতা যা ট্রাম্পের মধ্যে নেই। সিএনএন সাংবাদিক এ্যান্ডারসন কুপার বলেছেন, লে পেন একজন পেশাজীবী রাজনীতিবিদ। রাশিয়ায় মিডিয়ার কাছে লে পেন স্পষ্টভাবেই আনুকূল্য পাচ্ছেন এবং তার নির্বাচনী ইশতেহার সর্বোৎকৃষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান ভেস্টি নেদেলিয়ে তার অভিবাসনবিরোধী নীতির প্রতি অভিনন্দন জানানো হয়েছে। ফিলোন : রাশিয়াতে অন্য যে প্রার্থীর প্রতি সমর্থন রয়েছে তিনি হচ্ছেন ফ্রাঁসোয়া ফিলোন। ভেস্টি নেদেলিতে ডানপন্থী আশাবাদী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে নির্যাতনের শিকার বলে অভিহিত করা হয়। উল্লেখ করতে হয়, সরকারী অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নাভোস্কি বলেছে, তার বিরুদ্ধে তৎপরতার অবসান ঘটতে পাবে রুশ বন্ধুত্বের কারণে। জার্মানিতে ফিলোনের অনড় অবস্থান দুঃখজনক হয়ে উঠেছে। দের স্পিজেল বলেছে, ফিলোন বিষয় কেবল উৎকৃষ্ট রাজনীতিবিদদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এ প্রজাতন্ত্র এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোর সুখ্যাতিকেও। ম্যাকরোন : কখনও কখনও দেখা যায় ষড়যন্ত্র করছেন তিনি এবং কখনও মনে হয় চমৎকার তিনি। জার্মান মিডিয়া তার প্রশংসায় বলেছে, ‘এ নীল-নয়ন বয়ঃকনিষ্ঠ গ্যোটের ছাত্র। বামপন্থী টাজেসজেইতুং পত্রিকা তাকে উৎকৃষ্টদের প্রার্থী বলে উল্লেখ করেছে, কিন্তু তাকে ন্যাশনাল ফ্রন্টের বিরুদ্ধে সর্বশেষ প্রতিরক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছে। লন্ডনে তার উদার দৃষ্টিভঙ্গি বেশ আকর্ষণ কেড়েছে, যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এবং তার হাজার হাজার সমর্থকের জন্য এক সমাবেশের আয়োজন করেছেন। দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট বলেছে, মেরিন লে পেন নন। ইমানুয়েল ম্যাকরোনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ফ্রান্সের জবাব হিসেবে পরিচিতি পাবেন। এটা মোটেই বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে, রাশিয়া তার প্রতি হৃদ্যতা প্রকাশ করছে খুব কম। ক্রেমলিন সমর্থিত স্পুটনিক বলেছে, তিনি দুষ্ট প্রতিষ্ঠান ন্যাটো, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের ম্যাকরোনকে চাপিয়ে দিতে চাইছে। -এএফপি
×