ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাখি রফতানির সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৯ মার্চ ২০১৭

পাখি রফতানির সম্ভাবনা

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান শখে মানুষ খাঁচায় রং-বেরঙের পাখি পোষে। বাহারি রং, আর বিচিত্র আচরণের এসব পাখি মানুষের বিনোদনের খোরাক। এটা কিছুদিন আগের কথা। এখন দিন বদলেছে। শখ নয়। পাখি পালন অনেকেরই আয়ের উৎস। দুর্লভ প্রজাতির খাঁচার পাখি। যেগুলো এক সময় বাংলাদেশে ডিম বাচ্চা করত না। এখন ডিম বাচ্চা করে। নানা রকম প্রজাতির পাখির উৎপাদন করেছে এদেশের ব্রিডাররা। দ্রুত এই সেক্টরে উন্নতি হয়েছে। খাঁচার জনপ্রিয় পাখি হলোÑ বাজরিগার, লাভ বার্ড, ফিঞ্চ, ককাটেইল, ডোভ, গ্রে-গ্রীন সিনামন টারকুইজিন, রেড হেড অপলাইন টারকুইজিন, ইলেক্টাস, ম্যাকাউ, মুলাক্কান কাঁকাতুয়া, কাইফ প্যারট, প্রিন্সে অব ওয়েলস, চ্যাটারি লরি, লুটিনো রিন নেক প্যারট, আলবিনো রিন, রেডকালার লরি, সান কৌনর, রেড লরি, ভায়োলেট লেক লরি ইত্যাদি। কাটাবনসহ বিভাগীয় শহরে পাখির বাজার গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও পাখির হাট বসে। পাড়া-মহল্লায় পাখির দোকান চোখে পড়ে। লক্ষাধিক মানুষ পাখি পালনের সঙ্গে জড়িত। এরা বিভিন্ন বয়সের। ছাত্রছাত্রীরা আছেন। অবসরপ্রাপ্তরাও বাদ যান না। গৃহবধূরা ঘর সামলান। আবার পাখিও পালন করেন। নওগাঁর মশিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জের অপু, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের টুটুলসহ অসংখ্য তরুণের জীবিকার উৎস এসব বিদেশী পাখি। পাখি পালন করে তারা স্বাবলম্বী। সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। মেহেরপুর জেলার অনেকগুলো গ্রামের মানুষ বিদেশী পাখি পালন করে আয়ের উৎস হিসাবে বেছে নিয়েছেন। আবহাওয়া, সস্তা শ্রমিক এসব কারণে বাংলাদেশ পাখি উৎপাদনে সেরা হতে পারে। লাভ বার্ড স্পেশালিস্ট বেলাল ফারুক জানান, বাংলাদেশের আবহাওয়া পাখি উৎপাদনের জন্য খুবই চমৎকার। তাপমাত্রা খুব বেশি নয়, আবার কম না। চধৎ ইষঁব লাভ বার্ডসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির লাভ বার্ড উৎপাদন করেছে মির্জা ইসকান্দার। তিনি জানান, বাংলাদেশে বিশ্বমানের লাভ বার্ড উৎপাদিত হচ্ছে। বিদেশে যে পরিবেশ, খাদ্য পাখিকে দেয়া হয়। বাংলাদেশের ব্রিডাররা তাই দিচ্ছে। ঝঞ ঐবষবহধ ডধীনরষষ,-ঙৎধহমব ঈযববশবফ ডধীনরষষ,-চঁৎঢ়ষব এৎবহধফরবৎ,-ঈৎবংঃবফ চবধৎষ ইবমঁরষবং ঋরহপয-ঈযবংঃহঁঃ ইবহমধষরং ঋরহপয,- ঝঃৎধনিবৎৎু ঋরহপয এমন অনেক নতুন প্রজাতির ফিঞ্চ পাখি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন মানিকগঞ্জের আবদুল হান্নান দিনার (ইউবি দিনার)। তিনি জানান, বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ফিঞ্চ পাখি উৎপাদনের জন্য খুবই ভাল। শুধু দরকার সরকারী সহায়তা, এক্সেসরিজের দাম কমানো, পাখির খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা। সিলেটের শ্রীমঙ্গলের রনি রাজ আহমেদ। তার খামারে ইলেক্টাস, ম্যাকাউ, মুলাক্কান কাঁকাতুয়া, কাইফ প্যারট, প্রিন্সে অব ওয়েলস, চ্যাটারি লরি, লুটিনো রিন নেক প্যারট, আলবিনো রিন, রেড কালার লরি, সান কৌনর, রেড লরি, ভায়োলেট লেক লরিসহ বিভিন্ন মনকাড়া সব পাখি রয়েছে। যার বাজার মূল্য কোটি টাকারও বেশি। তার খামার দেখতে বিদেশীরা বেশি আসেন বলে তিনি জানান। পার্শ্ববর্তী দেশের দর্শনার্থীরা খামার থেকে পাখি কিনে নিয়ে যান বলে তিনি জানান। অধিকাংশ বিদেশী পাখি। যেগুলো বাংলাদেশে ডিম বাচ্চা করছে। এসব পাখির বেশিরভাগই বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। পার্শ্ববর্তী সব দেশের চেয়ে বাংলাদেশের পাখি মানে উন্নত। দাম কম বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়। সে কারণে সীমান্ত দিয়ে প্রচুর পাখি পাচার হচ্ছে। এমনকি বিমান যোগে ও পাখি পাচারের ঘটনা ঘটেছে। ২০১০ সালের ৩ জুলাই পাখি পাচার করতে গিয়ে আটক হন পাকিস্তানী নাগরিক আহমদ শেখ ওয়াহিদ। বিমানের মালামাল রাখার জায়গার ৪ ঝুড়িতে ৬০০ লাভ বার্ড ও ৪০০টি ময়না পাওয়া যায়। পাখি রফতানির সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এ কারণে সম্ভাবনাময় এ সেক্টরে বেসরকারী বিনিয়োগ আসছে না। এমনটাই জানালেন পাখি পালনে অভিজ্ঞ লাভ বার্ড পত্রিকার সম্পাদক মির্জা ইসকান্দার। সামাজিকভাবেও খাঁচার পাখি অপরাধ প্রবণতা রোধ করে। যেসব তরুণ, কিশোর কিশোরীরা খাঁচায় পাখি পোষে। তারা অপরাধ কর্মে লিপ্ত হয় না। এ কারণে ও খাঁচার পাখির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তাছাড়া জায়গা কম লাগে। একটু খানি বারান্দায়ও পাখি পালন করা যায়। রফতানি বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনতে খাঁচার পাখির প্রসারে সরকারী পদক্ষেপ কাম্য। বিশেষ করে ডিএনএ ল্যাব স্থাপন, এক্সেসরিজের দাম কমানো, খাবারের বাজারে সিন্ডিকেট বাণিজ্য বন্ধ করা এবং রফাতানি প্রক্রিয়া সহজতর করলে পাখি অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্যে পরিণত হবে বলে পাখি পালনের সঙ্গে জড়িতরা মনে করেন।
×