ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতির পাতায় মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৯ মার্চ ২০১৭

স্মৃতির পাতায় মিলনমেলা

দিনটি ছিল ২০১৩ সালের ২৬ জানুয়ারি। চার বছর আগের এই দিনে কনকনে ও হাড় কাঁপানো শীতে গুটিশুটি হয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নীলাভূমি আর সাংস্কৃতির রাজধানীখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে পদার্পণ। কেউ কাউকে চিনি না, জানি না। না চেনা না জানা মানুষগুলো এত সহজে এত আপন করে নেবে ক্যাম্পাসে না আর আগে ছিল কল্পনাতীত। মনে পড়ছে বিশেষ করে সেই প্রথম দিনটির কথা। স্মরণীয় করে রাখার কোন কমতিই ছিল না ডিপার্টমেন্ট, হল বা ক্যাম্পাসের আনাচেকানাচে। ধীরে ধীরে হয়েছে ডিপার্টমেন্ট, হল, জেলা সংগঠন আর ক্যাম্পাসের শত শত বন্ধু বান্ধবী। সবার পরিচয় আমরা ৪২। হ্যাঁ আমরা ক্যাম্পাসের ৪২তম ব্যাচ। পরিচয়ের প্রথম দিন থেকে আমাদের এই হাসি, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উৎসাহ-উদ্দীপনা, ভালবাসা চিরদিনই থাকবে চির অমলিন। প্রথম বর্ষের শুরুতে গ্রুপ স্ট্যাডি করা, দীর্ঘ সময়ের ব্যবহারিক ক্লাসে স্বল্প বিরতির সময়ে সেলফি তুলা, পরীক্ষার ফাঁকে দল বেঁধে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করা, এক সঙ্গে সুর মিলিয়ে গান গাওয়া, বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে বসে চা খাওয়া, সবার কাছ থেকে টাকা তুলে বিল দেয়া, ছুটির দিনে হঠাৎ করে কয়েকজন বন্ধুরা মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, সকল বন্ধুর কাছ থেকে চাদা তুলে জন্মদিনের পার্টি পালন করার মধ্য দিয়েই পেরিয়ে গেল চারটি বছর। আর যে দিনটিতে সকলের আগমন সে দিনটিকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে জাবির প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে বন্ধুত্বের চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদযাপনের। যেখানে দিনের শুরুতে ছিল ডিপার্টমেন্ট এ কেক কাটা, এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের প্রিয় শিক্ষিকা আফরোজা পারভীন, প্রিয় শিক্ষক মোঃ মাহমুদুল হাসান, ড. মোঃ মাহবুবুল মোরশেদ, মাফরোজ আহমেদ বসুনিয়া এবং মোঃ মোজাম্মেল হোসেন স্যার। কেক কাটার পর একজন আরেকজনের মুখে কেক না মাখলে যেন আনন্দের পূর্ণতাই পায় না। আর ততক্ষণেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বন্ধু হানিফ, জাহিদ, রানা, তমাল, সম্রাট বান্ধবী ফাল্গুনী, শিল্পী, মৌমিতা, এশা, টিউলিপ, পুষ্প, চন্দ্রিমা, তামান্নার হাতে ছিল সেলফি স্টিক আর বন্ধু ইয়াছির, দ্বীপের হাতে ছিল ডিএসএলআর ক্যামেরা। যারা পুরো মুহূর্তগুলোকে তাদের মতো করে বন্দী করে রাখে স্বযতেœ। তারপর টি-শার্ট এ আঁকাআঁকি। একজনের টি-শার্টে অন্য জনের নিজের অব্যক্ত কথাগুলো বলা, এই সুবাদে নিজের বন্ধুর টি-শার্টে নানা ধরনের উক্তি, ভালবাসাসহ নানা ধরনের কথাবার্তা লিখে ফেলা। পরক্ষণেই সকলে মেতে ওঠে রং মাখানোর উৎসবে। রং মাখানোতে কেউই যেন বাদ যেতে রাজি নয়। রং মাখানোর পর পরেই শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা র‌্যালি। এ র‌্যালিটি ছিল একটি ব্যতিক্রমধর্মী যেখানে ভ্যানে করে সবাই পুরো ক্যাম্পাস ঘুরেছিলাম হৈহুল্লা আর বিভিন্ন সেøাগানের মধ্য দিয়ে। শোভাযাত্রায় সকলের নজর কেড়েছে বন্ধু আসাদুজ্জামান নূর, যে নাকি বেশি খাওয়ার উদ্দেশে ভ্যানে না চড়ে হেঁটে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরেছে। তারপর দুপুরের খাওয়া শেষ করে ছিল হাল্কা বিশ্রাম। এর পরে বিকেলের মিষ্টি রোধে সবাই মিলিত হলাম জিমনেশিয়ামের সামনে। সবাই সবার মতো করে সময়গুলোকে বন্দী করল ক্যামেরার ফ্রেমে। বন্ধু সাহাদ, পঙ্কজ আর বান্ধবী রিয়ার রসাল কবিতায় সকলে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল। বেলা শেষে সবার মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে কাপল নাচ, ক্লাসের সব থেকে ভদ্র, নীরব বান্ধবীদের সমন্বিত নাচ সকলকে বিমোহিত করে। বিভিন্ন অভিনয় এবং সবশেষে অতি জাঁকজমকপূর্ণ ক্যাম্প ফায়ারের মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। দিন শেষে যেন সবার মুখ থেকে সেই চিরচেনা কথাগুলো এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উচ্চারিত হতে থাকল বন্ধু তোরা ছিলি, তোরা আছিস, তোরাই থাকবি। রায়হান আহাম্মেদ
×