ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছোট্ট মেয়ের কাণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ মার্চ ২০১৭

ছোট্ট মেয়ের কাণ্ড

পথজুড়ে বরফ। যে কোন সময় আলগা তুষার ধসে তার নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। পথে হামলে পড়তে পারে নেকড়ের দল। তাদের হাতে না পড়লেও তীব্র ঠা-ায় কাবু হয়ে পড়া নিশ্চিত। সাইবেরিয়ার এই ভয়াল প্রকৃতি অতি বড় এ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীর বুকও কাঁপিয়ে দেবে। বরফে মোড়া সেই পথ অতিক্রম করল একটি শিশু। দাদীর অসুস্থতার খবর পৌঁছে দিতে সে এই ভয়ঙ্কর পথ পাড়ি দিল ৮ কিলোমিটার। মেয়েটির বয়স ৪ বছর। নাম সাগলানা সালচাক। রাশিয়ার টুভা প্রদেশে তার বাড়ি। পশ্চিম সাইবেরিয়ার তাইগা বনের কাছে সাগলানার গ্রাম। নামেই গ্রাম, অনেক ক্ষেত্রে এক-একটা বাড়ির মধ্যে দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার। দাদ-দাদীর সঙ্গে সে থাকে। বাবা-মা থাকেন সাইবেরিয়ার অন্য এক অংশে। সাগলানাকে দাদা-দাদীর কাছে রেখে নিজের কাজে চলে গিয়েছিলেন তার মা এলোনোরা সালচাক। একদিন খুদে মেয়েটি দেখে, দাদী কথা বলছেন না। বাইরে তখন প্রচ- ঠা-া। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেছে। দাদা দৃষ্টিহীন। তাকে দাদীর কথা বলেও কোন সুরাহা হয়নি। তখন তাদের সবচেয়ে কাছের যে প্রতিবেশী, তার বাড়ি ৮ কিলোমিটার দূরে। চার বছরের মেয়েটা বেরিয়ে পড়ল বাড়ির বাইরে। ওই ঠা-ায়, বরফের পথ ভেঙ্গে সে চলল প্রতিবেশীর কাছে। কেউ একজন তাকে দেখতে পান। ডাক দেন, ডেকে আনেন বাড়িতে। সাগলানার মুখে তার দাদীর কথা শুনে তাদের বাড়ির দিকে রওনা দেন গ্রামবাসী। পৌঁছে তারা দেখেন, সাগলানার দাদী মারা গেছেন। ছোট্ট মেয়েটি বুঝতে পারেনি, তার বোঝার কথাও নয়। সকলেই তার এই অভিযানের কথা ভেবে বিস্মিত, হতবাক এতটা পথ একা যেতে ভয় লাগল না সাগলানার? সে বলে, ‘আমি শুধু হেঁটে গিয়েছি। হেঁটে যেতে যেতে কখন পৌঁছে গিয়েছি, বুঝতে পারিনি।’ গ্রামবাসীরা বলছেন, সাইবেরিয়ার প্রান্তরে এই দুঃসাহসিক অভিযান করে মেয়েটি যে অক্ষত রয়েছে, এটাই কত! তার ঠা-া লেগে গিয়েছিল, স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের চোখে সে এখন নায়ক। এ ঘটনা সামনে আসায় বিপাকে পড়েছেন এলোনোরা। শিশু সন্তানকে বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে কাজে চলে যাওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছর কারাদ- হতে পারে সাগলানার মায়ের। -গার্ডিয়ান
×