ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধু

বিপুল ব্যক্তিত্বের শেখ মুজিব, আবেগঘন উপস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৯ মার্চ ২০১৭

বিপুল ব্যক্তিত্বের শেখ মুজিব, আবেগঘন উপস্থাপনা

মোরসালিন মিজান ॥ বহুবিদ উপস্থাপনা বঙ্গবন্ধুর। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা অজস্র মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র আবেদন ভাস্কর্যের। এই মাধ্যমেও তাকে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন শিল্পীরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। দুই আলোকচিত্রী শহীদুজ্জামান বাদল ও শেখ আবু সিদ্দিক রোকন সেগুলো খুঁজে বের করেছেন। ছবি তুলেছেন। এখন চলছে প্রদর্শনী। চারুকলার জয়নুল গ্যালারিতে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করেছে ঢাকা ফটোগ্রাফিক ইনস্টিটিউট। প্রদর্শনীর শিরোনামÑ ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধু। এই মাধ্যমটিতে শেখ মুজিবুর রহমান কতটা মূর্ত হয়েছেন? কী রূপে তুলে ধরা হয়েছে তাকে? ইত্যাদি বিষয়ে মোটামুটি ধারণা দেয় প্রদর্শনী। গ্যালারি ঘুরে দেখা যায়, ৫০টির মতো আলোকচিত্র। পাশাপাশি টানানো। বেশকিছু ছবিতে কংক্রিটে গড়া শেখ মুজিব। কংক্রিটের মতোই দৃঢ় চেতা রূপ। বিপুল ব্যক্তিত্বের স্ফূরণ ঘটেছে ভাস্কর্যে। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরটিও যেন কানে বাজে। আলোকচিত্রগুলোর একটিতে শামীম শিকদারের কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শিরোনামে ভাস্কর্য গড়েছেন খ্যাতিমান শিল্পী। বিশাল ও বিস্তৃত কাজে একাধিক ফিগার। হাই রিলিফ ওয়ার্ক থেকে জাতির জনককে খুঁজে নিয়েছেন আলোকচিত্রী শেখ আবুসিদ্দিক রোকন। সুন্দর ফ্রেমিংয়ের কারণে বার বার দেখা ভাস্কর্যটিও নতুন মনে হয়। একই ভাস্কর তার নিউ ইস্কাটনের বাসার সামনে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করেছেন। আলোচিত এই ভাস্কর্য অনেকেরই চোখে পড়েনি। আলোকচিত্রে সেটি দেখা যাচ্ছে। ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে তোলা ছবিতে বঙ্গবন্ধুর একটু ভিন্ন ধরনের উপস্থাপনা। প্রখ্যাত ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের কাজ। এখানে জনগণের উদ্দেশে হাত নাড়াচ্ছেন শেখ মুজিব। ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয় ভাস্কর্যটি। মূল সড়কের পাশে হওয়ায় এটি অনেকেই দেখে থাকবেন। আর যারা দেখেননি, গ্যালারিতে দেখছেন আগ্রহ নিয়ে। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন শহরে আছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। সেসব এলাকা ঘুরে ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রীরা। অধিকাংশ ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণ থেকে তেমন একটি ভাস্কর্যের ছবি তুলেছেন শহীদুজ্জামান বাদল। ফ্রেমের অনেকটা জায়গা ছেড়ে দিয়ে সেখানে খোলা আকাশ ঢুকিয়েছেন তিনি। আকাশের সঙ্গে আকাশেরই মতো বিশাল মুজিব। দেখে মন ভরে যায়। ভাস্কর্যটি গড়েছেন শ্যামল চৌধুরীর। একই আলোকচিত্রী রাজবাড়ি জেলার কালুখালী থেকে খুঁজে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে। এখানেও ৭ মার্চ। এখানেও আঙুল উঁচিয়ে বক্তৃতা করছেন শেখ মুজিব। পেছনে নীল আকাশ আর সাদা মেঘের ভেলা রেখে মহান নেতার ছবিটি তুলেছেন বাদল। বান্দরবান থেকে তোলা আলোকচিত্রেও কথা বলছেন ৭ মার্চের শেখ মুজিব। সিমেন্টের ভাস্কর্যটি ২০১৩ সালের ৭ মার্চ স্থাপিত হয়। প্রদর্শনীর বাকি ফ্রেমগুলোতে মুুজিবের আবক্ষ ভাস্কর্য। পটুয়াখালীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তেমন একটি কাজ। ছোট পরিসর হলেও উন্নত সৃষ্টি। কাজটি করেছেন শ্যামল চৌধুরী। ছবির পাশে যোগ করা তথ্য থেকে জানা যায়, ভাস্কর্যের উচ্চতা ৩ ফুট। প্রস্তে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। মার্বেল পাথরের ঢালাই দিয়ে তৈরি বেদিতে ২০১৬ সালের ১ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। কুষ্টিয়ার কামরুল ইসলাম সিদ্দিক শিশুপার্কেও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য। কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে স্থাপন করা ভাস্কর্যের ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে গ্যালারিতে। বাংলাদেশের বাইরেও আছে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। তেমন একটির ছবি রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে তোলা। এই কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন শেখ মুজিব। বেকার হোস্টেলের তৃতীয় তলার ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। সেই স্মৃতি ধরে রাখার অংশ হিসেবে হোস্টেলের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ স্মৃতি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নেয়া উদ্যোগটি নেতার প্রতি ভিনদেশী মানুষের ভালবাসার স্মারক। সব মিলিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধু।’ প্রদর্শনীর ছবিগুলো থেকে ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধু কীভাবে এসেছেন সে সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। তবে একটি কথা উল্লেখ করা খুব প্রয়োজন যে, অনেক ভাস্কর্য ভাস্কর্যের মান গুণ ও সৌন্দর্য নিয়ে উপস্থিত হয়নি। আবেগী সৃষ্টি কিন্তু খুব নিম্ন মানের কাজ। কোন কোন ক্ষেত্রে রীতিমতো বিকৃত করা হয়েছে জাতির জনকের অবয়ব। একটি উদাহরণ তো না দিলেই নয়। ঢাকার খামারবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল চত্বরে অতি সম্প্রতি একটি ভাস্কর্য গড়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের। এটির দিকে এক কথায় তাকানো যায় না। ভাস্কর্যটির গঠন নির্মিতি মারাত্মক ত্রুটিযুক্ত। শিল্পীর নাম মানবেন্দ্র ঘোষ। কাজটি দেখার পর এই শিল্পীকে শিল্পী ভাবার কোন কারণ কেউ খুঁজে পাওয়া যায় না। ছবির পাশে যোগ করা বিস্ময়কর তথ্যটি হচ্ছে, ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল! এমন আরও অনেক বিকৃতির চিত্র ওঠে এসেছে আলোকচিত্রে। এ অবস্থায় জরুরী পদক্ষেপ প্রয়োজন। কেউ কি নেবে? যেন আবেদন জানাচ্ছে জয়নুল গ্যালারি! ছয়দিনব্যাপী প্রদর্শনী চলবে ২২ মার্চ পর্যন্ত।
×