ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সীতাকুণ্ডের জঙ্গী আস্তানা থেকে বিপুল গ্রেনেড ও বোমার সরঞ্জাম উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৯ মার্চ ২০১৭

সীতাকুণ্ডের জঙ্গী আস্তানা থেকে  বিপুল গ্রেনেড ও বোমার সরঞ্জাম উদ্ধার

চট্টগ্রাম অফিস/সীতাকু- সংবাদদাতা ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সেই জঙ্গী আস্তানাটি ব্যবহৃত হচ্ছিল বোমা, বিস্ফোরক দ্রব্য, বোমা তৈরি ও সংরক্ষণের গুদাম হিসেবে। গত বৃহস্পতিবার পৌর সদরের প্রেমতলা ‘ছায়ানীড়’ ভবনটিতে সোয়াত ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাঁড়াশি অভিযানে এক শিশু ও চার জঙ্গী নিহত হওয়ার পর ভবনটি সিলগালা করে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটটি থেকে জঙ্গীদের মৃত দেহের খণ্ড-বিখণ্ড অংশ সরানো হয় ডোম দিয়ে। এরপর এগুলো আলামত হিসেবে ফরেনসিক বিভাগ সংগ্রহ করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চমেক হাসপাতালে রাখা হয়। শনিবার সকাল থেকে পুরো ফ্ল্যাটটিতে পুনরায় উদ্ধার তৎপরতা চলে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফ্ল্যাটটিতে বিপুল পরিমাণ বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, এসিড, টাইমারসহ বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়। দুটি কক্ষ থেকে এগুলো উদ্ধার হয়। আরেকটি কক্ষ এখনও সিলগালা করে রাখা হয়েছে। ভবনটির নিচতলার জঙ্গী আস্তানার ফ্ল্যাটটিতে শনিবার পর্যন্ত উদ্ধারকৃত বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদির মধ্যে রয়েছে ১২টি গ্রেনেড, ১৬টি বোমা, পাঁচ ড্রাম হাইড্রোজেন পার অক্সাইড (প্রতি ড্রামে ৪০ লিটার), এক ড্রাম সালফিউরিক এসিড (৫০ লিটার) এবং বিভিন্ন ধরনের বোমা ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম। উদ্ধার তৎপরতায় অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফ্ল্যাটটির তিন কক্ষের আরেকটি কক্ষ এখনও তল্লাশি করা হয়নি। এটি সিলগালা করে রাখা হয়েছে। সেই কক্ষেও অনুরূপ বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম থাকতে পারে। জঙ্গী দম্পতির রিমান্ড ॥ সাধন কুটিরের নিচ তলার ফ্ল্যাটের জঙ্গী আস্তানা থেকে গত বুধবার আটক করা দুই জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় পাঁচ দিন এবং সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ডে নেয়া জঙ্গী দম্পতি হচ্ছে জসিম ও আরজিনা। তাদের আসল নাম জহিরুল ইসলাম ও রাজিয়া সুলতানা বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তাদের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এলাকায়। আরজিনা রোহিঙ্গা নারী বলে পুলিশ এর আগে নিশ্চিত করে। এদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ, সিআইডি ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা। তবে শনিবার পর্যন্ত এদের কাছ থেকে নতুন করে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায়, এরা সহজে মুখ খুলছে না। চারটি মামলার মধ্যে দুটিতে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। বাকি দুটি মামলায়ও তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এ জঙ্গী দম্পতির বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক, হত্যা ও সন্ত্রাস দমন আইনে ইতোমধ্যে সীতাকু- থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করে। সীতাকু- সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউর রহমান, গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গীকে শুক্রবার রাতে পুলিশ আদালত থেকে থানায় নিয়ে আসে। শনিবার সকাল থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এদিকে জঙ্গী আস্তানা সীতাকু- পৌরসদর ৫নং ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়া আমিরাবাদ ছায়ানীড় ভবনে শনিবারও পুলিশের একাধিক সংস্থা তল্লাশি করতে গিয়ে বিপুল বোমা, গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জামের সন্ধান পায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্য নিয়ে তারা শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জঙ্গী আস্তানার ফ্ল্যাটটিতে প্রবেশ করে। এর আগে পুলিশ ছায়ানীড়ের এ বাড়ি থেকে ৩০টি বোমা, পাঁচটি গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। গত বুধবার পৌরসদর নামার বাজার পশ্চিম আমিরাবাদ এলাকার ‘সাধন কুঠির’ নামের বাড়িতে বাড়িওয়ালা সুভাষ দম্পতি ও তাদের দুই সহযোগী সাগর ও মুক্তি দুই জঙ্গীকে ধরে ফেলতে সক্ষম হন। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। সেখান থেকে তিনটি গ্রেনেড, সুইসাইড ভেস্ট, পিস্তল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার প্রেমতলার ছায়ানীড় ভবনে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনীর ‘অপারেশন এ্যাসল্ট-১৬’ পরিচালিত হয়। এতে চার জঙ্গী ও এক শিশু নিহত হয়। শিশুসহ চারজনের বাড়ি বান্দরবানে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সীতাকু-ের ছয় জঙ্গীর মধ্যে শিশুসহ চারজনের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। তারা হলোথ নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এলাকার কামাল হোসেন, তার স্ত্রী জুবাইরা ইয়াসমিন ও তাদের শিশুসন্তান এবং জুবাইরা ইয়াসমিনের ভাই জহিরুল হক (জসিম)। জানা গেছে, জুবাইরা ইয়াসমিন ও তার ভাই জহিরুল হকের (জসিম) বাড়ি বাইশারী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যৌথ খামারপাড়ায়। তাদের পিতার নাম নুরুল আলম। আর জুবাইরার স্বামী কামাল হোসেনের বাড়িও বাইশারীর যৌথ খামারপাড়ায়। জুবাইরার মা জান্নাত আরা জানান, আট ছেলে এবং চার মেয়ের মধ্যে তিনজনের কোন হদিস নেই। স্বামী কামাল হোসেন জুবাইরা ইয়াসমিনকে নিয়ে যায় এবং কিছুদিন পর ছেলে জহিরুল হক তাদের সয়েমড় চলে যায়। জুবাইরার একটি ছেলে হলে সন্তানের দেখাশোনার কথা বলে তার আরেক মেয়ে মনজি বেগমকে (১৬) চট্টগ্রামে নেয়। গত আট মাস আগে থেকে তাদের কোন খবর পান না বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, কামাল ও জুবাইরা বেশ ধার্মিক ছিল। সীতাকু- পৌরসভার প্রেমতলা ও আমিরাবাদ এলাকার দুটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল এই জঙ্গীরা। দুই বাসায় থাকা ছয় জঙ্গীর চারজনই আত্মীয়। তাদের মধ্যে দুজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা গেছে। অন্য দুজনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে গত ৭ মার্চ টঙ্গীতে জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নানকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার পরের দিন কুমিল্লায় পুলিশের ওপর বোমা হামলা করে দুই জঙ্গী। যাত্রীবাহী বাসে নিরাপত্তা তল্লাশির সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জঙ্গী জহির ওরফে জসিম (২৫) ও হাসানকে (২৪) আটক করে। এই হাসানের বাড়িও নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারির করলিয়া মোড়া এলাকায়। তার পিতার নাম নুর হোসেন। এ বিষয়ে বাইশারী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আবু মুসা বলেন, সীতাকু-ে নিহত বাইশারির জুবাইরা ইয়াসমিন, তার স্বামী ও ভাইদের সঙ্গে হাসানের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। সীতাকু-ের ছায়ানীড় বাড়ি থেকে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার এবং পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। অন্যদিকে সাধন কুটির থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় জসিম ওরফে জহুরুল ইসলাম এবং আরজিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হয়েছে।
×