ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন জঙ্গী সংগঠন তৈরি করেছে আত্মঘাতী স্কোয়াড

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৯ মার্চ ২০১৭

তিন জঙ্গী সংগঠন তৈরি করেছে আত্মঘাতী স্কোয়াড

শংকর কুমার দে ॥ দেশের তিনটি ভয়ঙ্কর প্রকৃতির জঙ্গী সংগঠন ‘নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও হরকত-উল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’-কে সংগঠিত করে আত্মঘাতী দলের (সুইসাইড স্কোয়াড) জঙ্গীদের দিয়ে নতুন করে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’ কায়দায় জঙ্গী হামলার কৌশল নিয়েছে বলে বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। এসব জঙ্গীগোষ্ঠীর টার্গেট হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিআইপি) ও স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলো। সিøপার সেল পদ্ধতিতে জঙ্গী সংগঠনগুলো সংগঠিত হওয়ার কারণে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও নব্য জেএমবির তামিম চৌধুরী বা আবদুর রহমান ওরফে সারোয়ান জাহানের উপরের স্তরে কে বা কারা আছে তা এতদিন হদিস করতে না পারলেও এখন আবারও তৎপরতা চালানো জঙ্গী মদদদাতা, অর্থদাতা, আশ্রয়দাতা কারা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ মেসেজিং এ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গীগোষ্ঠী কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) র‌্যাবের ব্যারাকে হামলার দায় স্বীকার করার ঘটনার পর দেশের ভেতরে কে বা কারা এ ধরনের যোগাযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত তার সন্ধান করতে আইটি বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লায় পুলিশের ওপর আক্রমণকালে গ্রেফতারকৃত নব্য জেএমবির জঙ্গী আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি, মাহমুদুল হাসান এবং টঙ্গীতে ফাঁসির আসামি হুজিপ্রধান মুফতি হান্নানকে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতারকৃত মোস্তফা কামালকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এমন নব্য জেএমবি ও হুজিসহ মোস্ট ওয়ান্টেড ৪৭ আত্মঘাতী জঙ্গীর নামের তালিকা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সরকারের নির্দেশে ইতোমধ্যেই দেশের কারাগার, বিমানবন্দরসহ স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে সতর্কতা ও গোয়েন্দা নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা, পুুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় রাজধানীর আশকোনায় র‌্যাব ব্যারাকে আত্মঘাতী জঙ্গীর বিস্ফোরণ ঘটানোর ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও শনিবার ভোর প্রায় সাড়ে চারটায় রাজধানীর খিলগাঁওয়ে র‌্যাবের তল্লাশি চৌকিতে আবারও আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টাকালে র‌্যাবের গুলিতে এক আত্মঘাতী জঙ্গীর নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিমা বিশ্বে যেই কায়দায় জঙ্গীরা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় সেই একই কায়দায় মোটরসাইকেল আরোহী ওই ব্যক্তি খিলগাঁওয়ের চেকপোস্টে ঢুকে পড়লে র‌্যাব সদস্যরা গুলি চালায়। মোটরসাইকেল আরোহী হামলাকারীর দেহে যে ধরনের বিস্ফোরক বাঁধা ছিল, একদিন আগে আশকোনায় হামলাকারীর দেহেও সে ধরনের বিস্ফোরক বাঁধা ছিল বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানী ঢাকাতেই দুটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটনানোর ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, রাজধানী ঢাকার দুটি স্থানে জঙ্গীর আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের ‘সাধন কুটির’ থেকে গ্রেফতার করা হয় জঙ্গী দম্পতি জহিরুল ইসলাম (সাংগঠনিক নাম (জসিম) ও রাজিয়া সুলতান (সাংগঠনিক নাম আরজিনা), যাদের গ্রামের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। সাধন কুটির থেকে এ জঙ্গী দম্পতিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে ‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ’ বেরিয়ে আসার মতো। সাধন কুটির থেকে দেড় মাইল দূরত্বের মধ্যে খোঁজ পাওয়া যায় আরেক জঙ্গী আস্তানার, যার নাম ‘ছায়া নীড়’। ছায়া নীড়ের জঙ্গী আস্তানায় প্রায় ১৯ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় চার জঙ্গী ও এক শিশু, যারা সবাই আত্মঘাতী বলে পুলিশের দাবি। এর মধ্যে ছায়া নীড়ে নিহত নারী জঙ্গীর নাম জোবাইদা বেগম ও নিহত তিন জঙ্গী পুরুষের মধ্যে একজন জোবাইদার স্বামী কামাল উদ্দিন। নিহত দুই বছরের শিশুটি এ জঙ্গী দম্পতির। বাকি দুই জন হলো রাজধানীর মিরপুরের পূর্ব মনিপুর থেকে নিখোঁজ আহমেদ রাফিদ আল হাসান ও আয়াদ হাসান। তারা দুজন সম্পর্কে খালাত ভাই। গ্রেফতার রাজিয়া ও নিহত জোবাইদা আপন বোন। নিহতদের মধ্যে জসিমের বোন ও দুলাভাই রয়েছে। তাদের বাড়ি কক্সবাজারে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সীতাকু-ে ছায়া নীড়ে ১৯ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আত্মঘাতী জঙ্গীরা নিহত হওয়ার পরের দিন শুক্রবার রাজধানীর আশকোনায় র‌্যাবের সদর দফতর, তার পরের দিন শনিবার ভোরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টার ঘটনাগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একই সূত্রে গাঁথা, যা জঙ্গীদের মরণ কামড় বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফাঁসির আসামি হুজিপ্রধান মুফতি হান্নানকে আদালত থেকে কারাগারে নেয়ার সময় টঙ্গীতে প্রিজনভ্যানে হামলা চালানো হয় গত ৬ মার্চ বিকেলে। ঘটনাস্থলে হাতেনাতে ধরা পড়ে মোস্তফা কামাল নামের এক জঙ্গী, যার সঙ্গে পাওয়া গেছে অস্ত্র, বোমা ও বিস্ফোরক। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্তত ১২ জঙ্গীর নামের তালিকা পাওয়া গেছে, যারা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনায় জড়িত এবং সবাই আত্মঘাতী দলের সদস্য। এর পরের দিন গত গত ৭ মার্চ বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লার চান্দিনায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে পুলিশ চেকপোস্টে থামানোর পর দুই জঙ্গী পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টাকালে স্থানীয় জনতার সহায়তায় গ্রেফতার হয় আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি ও মাহমুদ হাসান নামে দুই জঙ্গী। এর মধ্যে মাহমুদ হাসানের বাড়ি বান্দরবানে। চট্টগ্রামের যে চার জঙ্গী নিহত ও দুই জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে তাদের বাড়িও কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকাতেই। কুমিল্লায় গ্রেফতার হওয়ার আগে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের আস্তানা থেকেই ঢাকায় আসছিল গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী ইমতিয়াজ অমি ও মাহমুদ হাসান। এ দুই জঙ্গীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া গেছে ৩৫ জঙ্গীর নাম, যারা আত্মঘাতী দলের সদস্য বলে তদন্তকারীদের দাবি। কুমিল্লায় গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গীর কাছে ৩৫ জন ও টঙ্গীতে গ্রেফতার হওয়া মোস্তফা কামালের কাছ থেকে প্রায় ১২ জঙ্গীর নামসহ মোট ৪৭ জঙ্গীর নাম পাওয়া গেছে, যারা আত্মঘাতী দলের সদস্য। এছাড়াও রাজধানী ঢাকায় দুটি গোপন জঙ্গী আস্তানা রয়েছে, যাতে আরও আত্মঘাতী জঙ্গী রয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। বেশি বিধ্বংসী বিস্ফোরক ॥ পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি জানান, জঙ্গী আস্তানা থেকে এর আগে বিভিন্ন সময় যে ধরনের বোমা পাওয়া গেছে, সেগুলোর তুলনায় বর্তমানে পাওয়া বোমার আকার ৫-৬ গুণ বড় ও বিধ্বংসীসম্পন্ন। গত বছরের শেষদিকে রাজধানীর উত্তরার সূর্য ভিলায় যে ধরনের বোমা পাওয়া গেছে, সে তুলনায় সীতাকু- ও র‌্যাবের ক্যাম্পে বিস্ফোরিত বোমার ধ্বংসক্ষমতা কয়েকগুণ বেশি। বিশেষ করে গ্রেনেড, বোমা, সুইসাইড ভেস্ট তৈরিতে অত্যাধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিধ্বংসী বিস্ফোরক ব্যবহার করছে পাশ্চাত্যের জঙ্গীরাও। আত্মঘাতীরা যেসব বিস্ফোরক ব্যবহার করছে তা দিয়ে বহুতল ভবনও উড়িয়ে দেয়া যাবে। রাজধানীর আশকোনা, খিলগাঁও ও চট্টগ্রামের সীতাকু-ে আত্মঘাতীরা যে ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে তার কারিগররা যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনটি জঙ্গী সংগঠন সংগঠিত ॥ বর্তমানে জঙ্গীদের তিনটি দল একত্রিত হয়ে নতুন জঙ্গী হামলার ছক কষছে, যাতে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। হুজি নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় আনসার আল ইসলাম ও হুজি-বি যৌথভাবে হামলা করেছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা। সংগঠনের নেতারা জঙ্গীদের নির্দেশনা দিয়েছেন- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কোনভাবেই জীবিত ধরা পড়া যাবে না। কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার জঙ্গী আজওয়াদ অমি পুলিশকে জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়ার আগেই সে দু’দফায় ১২টি বোমা ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছিল। ওই বোমা কার হেফাজতে রয়েছে তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ইমতিয়াজ অমি ও মাহমুদুল হাসান নব্য জেএমবির সদস্য। উপরের স্তরের শীর্ষ জঙ্গী নেতার নাম জানে না ॥ উত্তরায় র‌্যাব ক্যাম্পে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার অপচেষ্টা, টঙ্গীতে হরকত-উল জিহাদ অব বাংলাদেশের (হুজি,বি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা, কুমিল্লায় শক্তিশালী বোমাসহ নব্য জেএমবির দুই সদস্য গ্রেফতার ও সীতাকু-ে দুটি আস্তানায় অভিযান চালানোর পর আত্মঘাতী নারী জঙ্গীসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে জঙ্গীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। জঙ্গীরা আবারও হয়ত কোন না কোনভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছে। অনেকদিন ধরে যারা পলাতক ছিল, তারাও নতুনভাবে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। হামলার নতুন ধরন থেকে মনে হচ্ছে তাদের কেউ নির্দেশ দিয়েছে, আত্মহননই জিহাদের সঠিক পথ। এ ভুল নির্দেশনায় চালিত হচ্ছে তারা। সামগ্রিক বিবেচনায় জঙ্গীরা অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। হয়ত তাই তাদের ভাষায় কিছু ‘সার্থক হামলা’ চালিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, জঙ্গী সংগঠনগুলোকে সংগঠিত করে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শহীদী পথ বেছে নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের। তবে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা তাদের সহযোগীদের নাম (সাংগঠকি নাম) বলতে পারলেও উপরের পর্যায়ে একটি স্তরে গিয়ে আর তারা কারও নাম বলতে পারে না। মোস্ট ওয়ান্টেড যারা ॥ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর মাধ্যমে যেভাবে নব্য জেএমবি নতুন করে সংগঠিত হয়ে তৎপর হয়েছিল, তার নিহত হওয়ার পর কিছুদিন জঙ্গী তৎপরতা সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। এখন আবার একই ভাবে নতুন করে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে সামনে রেখে তারা আবারও তৎপর হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যক্তি সম্পর্কেও কয়েকটি তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোন না কোনভাবে জঙ্গীদের হাতে অনেক অর্থ যাচ্ছে, যা দিয়ে তারা বোমা তৈরির সরঞ্জাম কিনছে, বাড়ি ভাড়া নিচ্ছে, যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া বাবদ খরচা করছে। মোস্ট ওয়ান্টেড আত্মঘাতী পলাতক জঙ্গীদের একজন রাজধানীর আশকোনা জঙ্গী আস্তানায় পুলিশী অভিযানের আগে সটকে পড়া শীর্ষ জঙ্গী মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা অন্যতম। এছাড়াও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত নুরুল ইসলাম মারজানের বোনজামাই সোহেল মাহফুজ ওরফে নসরুল্লাহ, নব্য জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষক হাদিছুর রহমান ওরফে সাগর। চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী শীর্ষ জঙ্গী মোশারফ হোসেন, নব্য জেএমবির আত্মঘাতী দুই সদস্য ফরহাদ, মনির ও তিন বছর আগে ত্রিশালের প্রিজনভ্যানে বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গী ছিনতাই করে নেয়ার হোতা বোমা মিজান অন্যতম। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে এসব ভয়ঙ্কর জঙ্গী। তাদের মধ্যে সমন্বয়ক থেকে শুরু করে সামরিক প্রশিক্ষক ও বোমা তৈরির কারিগররাও রয়েছে। দুর্ধর্ষ এসব জঙ্গী অভিযানের আগে পুলিশী তৎপরতার খবর টের পাওয়ায় বারবার অবস্থান পাল্টাচ্ছে। পলাতক, মোস্ট ওয়ান্টেড এসব জঙ্গীর নাম পাওয়ার পর তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনলাইনে যোগাযোগকারী জঙ্গীর খোঁজ নেয়া হচ্ছে ॥ জঙ্গীবাদের আদর্শে উদ্ভুদ্ধ হয়ে উগ্রপন্থী যারা বিদেশে পালিয়েছে, তাদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। অনলাইনে তারা নতুনভাবে জঙ্গীদের সংগঠিত করে আত্মঘাতী হতে উৎসাহিত করছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পলাতক জঙ্গীদের মাধ্যমে দেশীয় উগ্রপন্থীদের কাছে অর্থ আসছে। উগ্রপন্থায় জড়িয়ে যারা এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছে, এমন বাংলাদেশী নাগরিকরা যাতে দেশে ফিরতে না পারে সেজন্য তাদের ছবিসহ তথ্য দেয়া হয়েছে সকল বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে। বিদেশে অবস্থানরত উগ্রপন্থীরাই ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গীগোষ্ঠী কথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সংবাদমাধ্যম আমাক মেসেজিং এ্যাপ টেলিগ্রামের মাধ্যমে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে, যা প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের ঠিক আগে ওই ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণের ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর প্রথমে আমাকের আরবী ও পরে বাংলা সংস্করণে ওই হামলার খবর আসে। পরে জঙ্গী তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ সে খবর দেয়। গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে কোন আইএস নেই, ইন্টারনেটমুখী নানা যোগাযোগ, যা ভার্চুয়াল থাকতে পারে। দেশের জঙ্গী তৎপরতা যখন দৃশ্যমান নয়, জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, জঙ্গীরা হতাশ, আত্মগোপনরত অবস্থায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন ইন্টারনেটমুখী নানা যোগাযোগ করে জঙ্গী সংগঠন ও জঙ্গীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হতে পারে, যা দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে ইন্ধন পাচ্ছে। তবে দেশে যেসব জঙ্গী হামলা বা আত্মঘাতী হামলা হচ্ছে তা দেশীয় জঙ্গীরাই ঘটাচ্ছে, যা গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দী ও তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। ডিএমপি কমিশনার যা বলেন ॥ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জঙ্গী হামলার ঘটনাগুলোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। ঘটে যাওয়া জঙ্গী হামলার ঘটনাগুলো সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আগাম তথ্য ছিল বলে জানান তিনি। শনিবার রাজধানীর ধানম-ির সুফিয়া কামাল কমপ্লেক্সে জঙ্গীবাদবিরোধী এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পুলিশ কমিশনার। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, দেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই, তাদের মতাদর্শী রয়েছে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ধর্মের নামে অপপ্রচার চালিয়ে নাশকতা করছে। তিনি বলেন, জঙ্গী দমনে পুলিশ সফলভাবে কাজ করছে। জাতীয় পর্যায়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠনের কাজ চলছে। এসব ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এগুলো মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত।
×