ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে এত দুর্নীতি সন্ত্রাস হতো না

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৯ মার্চ ২০১৭

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে এত দুর্নীতি সন্ত্রাস হতো না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, একটি মহল বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধে দূরত্ব বাড়াতে সরকারকে ভুল বোঝাচ্ছে। প্রশাসনে যারা আছেন ভুল রিপোর্ট দেবেন না। ভুল রিপোর্ট দেয়ায় বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংবিধান এবং আইন অনুযায়ী সবকিছু করতে দেয়া হলে দেশে এত দুর্নীতি এবং সন্ত্রাস হতো না। কিন্তু সেটা দেয়া হচ্ছে না। পাকিস্তান আমল থেকে দেখলে বিচার বিভাগকে ক্ষতি করেছে আমাদেরই বিচার বিভাগের কয়েকজন। আমাদের বিচার বিভাগের কয়েকজন এজন্য দায়ী। বলা হয়, বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতিপক্ষ। এটা কখনও ঠিক নয়। যে জায়গায় রাজনৈতিক সরকার, কিছু বাড়াবাড়ি হবেই। সে বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে বিচার বিভাগ। এজন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন। প্রশাসনকে ভুল বোঝানো হয়েছে। বলা হচ্ছে বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতিপক্ষ। এটা অত্যন্ত ভুল ধারণা। কোনদিনই বিচার বিভাগ প্রশাসন বা সরকারের প্রতিপক্ষ হয়নি। শনিবার জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন হলরুমে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের অনলাইন এ্যাপ্লিকেশন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের উদ্বোবনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি আশা রাখব বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে যারা আছেন তারা ভুল রিপোর্ট দেবেন না। তারা ঠিক রিপোর্ট দেবেন, যাতে বিচার বিভাগ এবং সরকার সুন্দরভাবে চলে। একটি মহল বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের দূরত্ব তৈরি করে দিচ্ছে। বিচার বিভাগের ছোট ছোট সমস্যাগুলো ঠিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। বরং তা উল্টোভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান এবং আইনের আওতায় বিচার বিভাগকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। সে মতো কাজ করতে দিলে দেশে দুর্নীতি, অপরাধ প্রবণতা, সন্ত্রাসী কর্মকা- থাকবে না। যখন কোন রাজনৈতিক সরকার শাসনতন্ত্র ঠিকমতো পরিচালনা করবে না তখন বিচার বিভাগ এগিয়ে আসবে। না হলে সে দেশের সভ্যতা থাকবে না।’ প্রশাসনের লোকজন যদি সঠিক তথ্য সরবরাহ করে তবে বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। ‘মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মাধ্যমে আমরা বিচার বিভাগকে আলাদা করেছি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। আমেরিকা সরকার বাড়াবাড়ি করলে বিচার বিভাগ তা নিয়ন্ত্রণ করে সমতা বজায় রাখছে। ভারতেও তাই ঘটছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেল হত্যা মামলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙ্গার ক্ষেত্রে নিয়ম, মেডিক্যাল ভর্তির গাইডলাইনের সবটাই সুপ্রীমকোর্টের (বিচার বিভাগ) দ্বারা হয়েছে।’ আমাদের জন্য কোন খাত নেই। প্রধান বিচারপতি যখন বাইরে যায়, এ দৈন্যদশা যে ১০০ টাকা দেবে সে বাজেটও নেই। একটি মহল থেকে বিচার বিভাগ নিয়ে প্রশাসনে উল্টো মত তুলে ধরা হয়। তাই বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের ভুল বোঝাবুঝি চলছে।’ দেশে ছয়টি জেলা জজ, নয়টি অতিরিক্ত জেলা জজ, ১৬টি যুগ্ম-জেলা জজ, ১২৩টি সহকারী জেলা জজ ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে ১৫৯ পদসহ মোট ৩০৭টি পদ খালি। এমন পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় জনসংখ্যা, মামলা সংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে কম বিচারক আমাদের দেশে। সেখানে যদি ৩০৭টি পদ খালি থাকে তাহলে মামলা ডেডলক তো হবেই। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ও আপীল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেনÑ আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, জাতীসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব পরেশ চন্দ্র শর্মা। প্রধান বিচারপতি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ দেশের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রতিদিন পত্রিকায় নিউজ হচ্ছে। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে কোন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। কারণ এখানে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ওই বোর্ড মিটিংয়ের পর প্রশ্নপত্রের দুটি সেট তৈরি করা হয়। কোন সেটের ওপর পরীক্ষা হবে তা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজেই জানেন না। তাই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপাতে রাজি না হওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমরা জাপান থেকে ডুপ্লেক্স মেশিন এনে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান করেছি। সুতরাং স্বল্প বাজেটের মধ্যেও এ কমিশনের যে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন তা সকলের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই কমিশনের ভূতপূর্ব চেয়ারম্যান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিনের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, কমিশন সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান বিচারক নিয়োগের জন্য বাছাই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে কোনরূপ আপোস করে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে এবং বিজেএস পরীক্ষা যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী করার প্রয়াস হিসেবে ইউএনডিপির জেএসএফ প্রকল্পের সিড ফান্ডের সহায়তায় অনলাইন এ্যাপ্লিকেশন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ই-ট্র্যাকিংসহ আধুনিকায়নের জন্য কমিশন সচিবালয়ে একটি নিজস্ব ডাটা সেন্টার এবং সার্ভার স্থাপনের পরিকল্পনার কথা তিনি প্রকাশ করেন।
×