ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ মনোয়ারুল হক

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৯ মার্চ ২০১৭

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

বি.এস.এস,বি-এড সিনিয়র শিক্ষক, কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় সেনবাগ, নোয়াখালী। পরীক্ষকঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা। মোবাইলঃ ০১৭১৮৮৬৩০৪৫ দ্বিতীয় অধ্যায়- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সৃজনশীল প্রশ্ন সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘ক’ রাষ্ট্রটি এদেশের জনগণকে সহযোগিতা করার জন্য ‘শরণার্থী কর’ নামে একটি কর চালু করে। অন্যদিকে আমাদের বিজয় নিশ্চিতকরণে ‘খ’ রাষ্ট্রটি জাতিসংসঘে তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে। ক. মুজিব নগর সরকার গঠিত হয় কত তারিখে? খ. ৭ ই মার্চের ভাষণকে বাংগালির মুক্তির সনদ বলা হয় কেন? গ. ‘ক’ রাষ্ট্রের নাম উল্লেখপূর্বক মুক্তিযুদ্ধে এর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর। ঘ. তুমি কি মনে কর ‘খ’ রাষ্ট্রের ভূমিকা আমাদের চূড়ান্ত বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে? মতামতের স্বপক্ষে যুক্তি দাও। ক. মুজিব নগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। খ. বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার দিক নির্দেশনা থাকায় একে বাংগালীর মুক্তির সনদ বলা হয়। এ ভাষণে সারা দেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। বঙ্গবন্ধুর তেজোদ্বীপ্ত আহবান তাদের ঐক্যবদ্ধ করে এবং সর্ব্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। গ. ‘ক’ রাষ্ট্রের নাম হল ভারত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে রাতে পাকহানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগ করতে শুরু করে অসংখ্য বাংগালী। ভারত সরকার পলায়নরত এ রকম প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয় এবং তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়। ভারতের মাটিতে বাংগালী যুবকদের সশস্ত্র ট্রেনিং দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী, নেতা ও কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখে। ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ কমান্ড গঠিত হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সর্বস্তরের জনগণ স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন ও সবধরনের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে চার হাজার ভারতীয় অফিসার ও জোয়ান প্রাণ দেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত এদেশের জনগণকে সহযোগিতা করার জন্য ‘ শরণার্থী কর’ নামে একটি কর চালু করে, যা ‘ক’ রাষ্ট্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই ‘ক’রাষ্ট্রের নাম হল ভারত। ঘ. ‘খ’ রাষ্ট্রের অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ১৯৭১ সালের আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে বলে আমি মনে করি। উদ্দীপকে উল্লেখিত ‘খ’ রাষ্ট্রটি হচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের বিজয় নিশ্চিতকরণে জাতিসংসঘে তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের পর সর্বাধিক অবদান রাখে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ দেশটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল। এপ্রিলের শুরুতেই সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট পদগর্নি বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে চিঠি দেন। ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার উদ্দেশ্য ছিল যেন যৌথ বাহিনী সামরিক বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ পায়। এ বাহিনী ঢাকা দখল করার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত যে কোনো প্রকারের যুদ্ধবিরতির পদক্ষেপকে ঠেকিয়ে রাখাই ছিল নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো দানের উদ্দেশ্য। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল হয়। সোভিয়েত পত্র-পত্রিকা, প্রচার মাধ্যমগুলো বাংলাদেশে পাক বাহিনীর নির্যাতনের কাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি প্রচার করে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে সহায়তা করে। জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্থানের পক্ষে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘ভেটো’ (বিরোধিতা) প্রদান করে বাতিল করে দেয়। পরিশেষে বলা যায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের উল্লিখিত ভূমিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করে।
×