ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বর্ণপদক জয়ী বডিবিল্ডার হাসিব আজীবন বহিষ্কার

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৯ মার্চ ২০১৭

স্বর্ণপদক জয়ী বডিবিল্ডার হাসিব আজীবন বহিষ্কার

রুমেল খান ॥ বিখ্যাত ইংরেজী কবিতা ‘প্যাট্রিওটিজমে’র কথা মনে আছে? যে নায়ক বীরের মতো যুদ্ধ জয় করে দেশে ফেরে, তাকেই কিনা দেশদ্রোহী আখ্যা দেয়া হয়। এমনই অবস্থা হয়েছে হাসিব মোঃ হলির। ২৩ বছর বয়সী এই সুদর্শন বডিবিল্ডার গত মধ্য জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে ‘নাব্বা ওয়ার্ল্ড ফিটনেস ফেডারেশন এশিয়া মাসল ওয়ার’ বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় (অংশ নেয় ১৩ দেশ) অংশ নিয়ে অনুর্ধ-২৪ জুনিয়র বিভাগে জিতে নেন স্বর্ণপদক। এই ধরনের টুর্নামেন্টে এর আগে কোন বাংলাদেশীই অংশ নেননি, কোন পদক পাওয়া তো দূরের কথা। সেখানেই অভিষেকেই বাজিমাত করেন হাসিব। জেতেন ঐতিহাসিক ‘প্রথম’ স্বর্ণপদক। স্বভাবতই এটি বাংলাদেশের বডিবিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা। তবে ফেডারেশনের উদ্যোগে সেখানে না যাওয়াতে হাসিবের এই অভাবনীয় সাফল্য এখন প্রশ্নবিদ্ধ। শনিবার শরীর গঠন ফেডারেশন এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ শরীর গঠন ফেডারেশন এবং স্বীকৃত আন্তর্জাতিক শরীর গঠন কর্তৃপক্ষসহ ক্রীড়ার সব কর্তৃপক্ষের নিয়মনীতি ও আইন ভঙ্গ করে সিঙ্গাপুরের একটি ঘরোয়া শরীর গঠন প্রতিযোগিতায় (আইএফবিবি অনুমোদনহীন শরীর গঠন প্রতিযোগিতা) অংশগ্রহণ করা সেখান থেকে দেশে ফিরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান, ভবিষ্যতেও এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করাসহ অন্য বডিবিল্ডারদের এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করার কারণে হাসিবকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতেই হাসিবকে একবার বহিষ্কারের এবং মানহানির মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছিল ফেডারেশন। একটা সভায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের সব কাউন্সিলর এবং সব জিম ক্লাবের প্রতিনিধিদের সে সভায় ডাকা হলেও অধিকাংশই উপস্থিত ছিলেন না। তাই হাসিবকে সেবার বহিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। এ প্রসঙ্গে হাসিব জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আগেই জানতাম ফেডারেশন আমাকে নিষিদ্ধ করবে। এখন সেটাই হলো। এজন্য আগেই মানসিকভাবে প্রস্তত ছিলাম।’ এখন কি করবেন? হাসিবের জবাব, ‘আপীল করব। তবে ফেডারেশনের কাছে নয়, এনএসসির কাছে। আরেকটা কাজ করব এবং সেটা আগামী সাতদিনের মধ্যে। তা হলো, ফেডারেশনের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে নাব্বা ওয়ার্ল্ড ফিটনেস ফেডারেশন বাংলাদেশ সংস্থা চালু করব। এর এশিয়ান হেডকোয়ার্টার হচ্ছে সিঙ্গাপুরে। তাদের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই কথা হচ্ছিল। সপ্তাহ তিনেক আগে তারা আমাকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশে সংগঠনটির কার্যক্রম চালু করার।’ উল্লেখ্য, এই ফেডারেশনের অধীনে যেসব টুর্নামেন্ট হয়, সেগুলো আন্তর্জাতিক শরীর গঠন ফেডারেশন অনুমোদন দেয় না। কে কে থাকছেন এই সংস্থায়? ‘খুলনার সাবেক মেয়র মিয়া মজিবুর রহমান হবেন এই সংস্থার সভাপতি। এছাড়া সম্পৃক্ত হবেন অনেক বডিবিল্ডার এবং বিভিন্ন বডিবিল্ডিং ক্লাব। ইতোমধ্যেই ২০টি ক্লাব রাজি হয়েছে। পরে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। যেসব বডিবিল্ডার ফেডারেশনের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে চান, আমরা তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করব। আমাদের অফিসটা হবে ৩৭২, দিলু রোডে।’ হাসিবের ভাষ্য। সিঙ্গাপুরে খেলতে গেলেন, কিন্তু ফেডারেশনের অনুমতি নিলেন না কেন? ২০১৫ সালের মিস্টার বাংলাদেশের খেতাব জেতা হাসিবের যুক্তি, ‘২০১৬ সালের মে’তে চীনে যাই আইএফবিবি মিস্টার এশিয়াতে অংশ নিতে। ফেডারেশনের কাছে অনুমোদন নেয়ার সময় তারা বিভিন্ন শর্ত দেন। তা হলো আমাকে চীনে যেতে হবে নিজের খরচে, যেতে হবে টুরিস্ট ভিসায় এবং কোন পদক জিতলে তার পুরো কৃতিত্ব তাদের দিতে হবে। তারা মিডিয়াতে প্রচার করবেন তারাই আমাকে চীনে যাওয়ার খরচ দিয়েছেন, আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ইত্যাদি। তাদের এমন হীনমানসিকতা ও হয়রানিতে হতাশ হই। এ জন্যই সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে তাদের জানাইনি। তাছাড়া জানালেও তারা আমাকে যেতে দিতেন না।’ সিঙ্গাপুরে ওই টুর্নামেন্টে হাসিবসহ চার বডিবিল্ডারকে যে টুরিস্ট ভিসায় ফেডারেশন পাঠিয়েছিল, তার প্রমাণও আছে বলে জানান হাসিব। হেরিয়ট ওয়াল ইউনি (ইউকে) বিবিএ (ডিসট্যান্স লার্নিং) শিক্ষার্থী হাসিবের লক্ষ্য, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া। এজন্য প্রচুর প্রশিক্ষণ এবং অর্থ বা পৃষ্ঠপোষক দরকার। এ নিয়ে খুব চিন্তায় ও চাপে আছেন তিনি। কেননা তার পরবর্তী লক্ষ্য আগামী জুনে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিয়মিত অনুশীলনীর পাশাপাশি স্পন্সর জোগাড়ের চেষ্টা করছি। কিন্তু এখনও পাইনি। বাংলাদেশে ব্রাজিলের কোন দূতাবাস নেই। ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে গেলে দ্বিগুণ খরচ। এছাড়া আগামী অক্টোবরে সাইপ্রাসে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের আরেকটা আসর হবে। ব্রাজিলে যেতে না পারলে সাইপ্রাসে যেতে চেষ্টা করব।’ এখন দেখার বিষয়, বডিবিল্ডার হাসিবের ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে।
×