ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শততম টেস্টে জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা বাংলাদেশের

স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায় মুশফিকরা

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৯ মার্চ ২০১৭

স্বপ্ন পূরণের দোরগোড়ায় মুশফিকরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একদিকে মুস্তাফিজ। আরেকদিকে সাকিব। দুইজন মিলে দুর্দান্ত বোলিং করে শ্রীলঙ্কার বারোটা বাজিয়ে দিলেন। তাতে করে শ্রীলঙ্কা বিপাকেও পড়ে গেল। বাংলাদেশও শততম টেস্টে জয়ের সম্ভাবনায় আছে। চতুর্থদিন শেষে ১৩৯ রানে এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। হাতে আছে আর মাত্র ২ উইকেট। তা দ্রুত ফেলে দিতে পারলেই বাংলাদেশ জেতার জন্য খেলতে নামবে। জয়ের সম্ভাবনাও আছে। শততম টেস্ট রাঙিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ। এখন অপেক্ষা জয়ের। সেই জয়টি কী মিলবে? শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করেছে। তার জবাবটি ভালভাবেই দিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহীম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৬৭ রান করে। শুরুতেই ১২৯ রানে এগিয়ে গেছে। এরপর শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে তৃতীয়দিন বিনা উইকেটে ৫৪ রান করে। তাতে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকে ৭৫ রানে। প্রথমদিনের মতো তৃতীয়দিনও বাংলাদেশের নিজেদের করে নেয়। সবারই বোঝা হয়ে যায় দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থদিনে যদি শ্রীলঙ্কাকে বিপাকে ফেলা যায়, তাহলে শততম টেস্টটি ইতিহাস হয়ে থাকতে পারে। বাংলাদেশ যেন সেই পথেই হাঁটছে। চতুর্থদিনে শ্রীলঙ্কাকে বিপাকেই ফেলেছে। মুস্তাফিজুর রহমানের (৩/৫২) ‘কাটারে’ বিদ্ধ হয়েছে লঙ্কানরা। সঙ্গে সাকিবের (৩/৬১) ঘূর্ণিতে বিপদেই পড়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। চতুর্থদিন শেষে ৮ উইকেটে ২৬৮ রান করেছে। ১৩৯ রানের টার্গেট এখনই বাংলাদেশের সামনে দাঁড় হয়ে আছে। আজ পঞ্চম ও শেষদিনে যদি দ্রুত শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করা যায়, তাহলে জয় পাওয়াও সম্ভব। শ্রীলঙ্কার যখন ১৯০ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়, তখন মনে হয়েছিল আর বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারবে না তারা। কিন্তু এরপর সেঞ্চুরিয়ান দিমুথ করুনারতেœ ও স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা মিলেই দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়ে যান। সেই যাত্রাও অবশ্য বেশিদূর টিকেনি। টিকতে দেননি সাকিব। সব উইকেটই তুলে নেয়া যাচ্ছিল। শুধু করুনারতেœকেও আউট করা যাচ্ছিল না। তৃতীয়দিন ১১ রান করতেই একবার আউট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে বাঁচেন করুনারতেœ। চতুর্থদিন হাফ সেঞ্চুরি করার পর ৬৪ রানের সময় রান আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। এরপর আর কোন সুযোগই দেননি। দলকে বিপদ থেকে একাই টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। দলকেও একটা সুবিধাজনক স্থানে নিতে থাকেন। চা বিরতির আগেই ১৬৮ বলে সেঞ্চুরি করে ফেলেন। যখন ১৯০ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটে বিপত্তিতে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তার আগেই সেঞ্চুরিটি পূরণ করে ফেলেন করুনারতেœ। স্বাভাবিকভাবেই তার ওপরই শ্রীলঙ্কার আশা-ভরসা টিকে থাকে। কিন্তু সেই করুনারতেœ আর বেশিদূর দলকে টানতে পারেননি। সাকিবের ধেয়ে আসা এক ঘূর্ণিতেই কুপোকাত হয়ে যান। ১২৬ রান করে ফেলেন। পেরেরাকে নিয়ে ২৭ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। কিন্তু সাকিব আর বেশিদূর করুনারতেœকে পা বাড়াতে দেননি। সাকিবের লাইনে ফেলা বলটি সোজা খেলার চেষ্টা করেন করুনারতেœ। কিন্তু বলটি হালকা ঘুরে। সেই ঘূর্ণিতেই ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম সিøপে চলে যায় বল। সেখানে থাকা সৌম্য সরকার ক্যাচটি লুফে নেন। ২৪৪ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ১২৬ রান করে সাজঘরে ফিরতে থাকেন করুনারতেœ। আর এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা যেন উৎসবে মেতে ওঠেন। একে অপরকে গলা জড়িয়ে ধরেন। চিৎকার করতে থাকেন। যেন ম্যাচই জিতে গেছেন। জেতার মতোই আনন্দ হয় আসলে। কারণ করুনারতেœ একাই যে শ্রীলঙ্কাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আউট মানে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। অল্প রানেই লঙ্কানদের বেঁধেও ফেলা যাবে। করুনারতেœ ২১৭ রানে আউট হন। তখন যে মাত্র ৮৮ রানে এগিয়ে থাকে শ্রীলঙ্কা। করুনারতেœ আউটের পর হাতে আর তিন উইকেট থাকে শ্রীলঙ্কার। যখন শ্রীলঙ্কার ৯৩ রানের লিড হয় তখন মুস্তাফিজের বলে এলবিডাবলিউ হওয়ার সম্ভাবনায় থাকেন রঙ্গনা হেরাথ। মুস্তাফিজের আবেদনে সাড়াও দেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান হেরাথ। এরপর ২৩৮ রানে গিয়ে হেরাথকে আউট করেন তাইজুল। কিন্তু আর একটি উইকেটও এরপর আর পড়েনি। নবম উইকেটে পেরেরা ও সুরঙ্গ লাকমাল মিলে ৩০ রানের জুটি গড়লেন। পেরেরা তো ১২৬ বল খেলে ২৬ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন। আর লাকমাল করেছেন ১৬ রান। এ দুইজন আজ পঞ্চমদিনে ব্যাট করতে নামবেন। তাদের টার্গেট স্কোরবোর্ডে যত বেশি রান জমা করা যায়। আর বাংলাদেশের টার্গেট যত দ্রুত শ্রীলঙ্কার হাতে থাকা দুই উইকেট ফেলা যায়। তৃতীয়দিনে শ্রীলঙ্কা বিনা উইকেটে দিন শেষ করতে পারলেও চতুর্থদিনের শুরু থেকে বিপদে পড়তে থাকে। তৃতীয়দিন ৫৪ রানে দিন শেষ করে শ্রীলঙ্কা। আর ৩ রান যোগ হতেই ২৫ রানে তৃতীয়দিন অপরাজিত উপুল থারাঙ্গাকে (২৬) আউট করে দেন মিরাজ। দিনের দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই থারাঙ্গাকে বোল্ড করে দেন মিরাজ। শুরু হয়ে যায় যেন শ্রীলঙ্কার ভরাডুবি। তবে দ্বিতীয় উইকেটেই করুনারতেœ ও কুশল মেন্ডিস মিলে প্রতিরোধ গড়ে ফেলেন। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত আর কোন উইকেট হারায় না শ্রীলঙ্কা। দুইজন মিলে যেই ৮৬ রানের জুটি গড়েন, ১২ রানে ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচা মেন্ডিসকে (৩৬) সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। ‘রিভিউ’ নিয়ে মেন্ডিসকে আউট করে বাংলাদেশ। সেই যে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ভরাডুবি শুরু হয়, তা চলতেই থাকে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে ১ উইকেটে ১৩৭ রানে ছিল শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে চা বিরতিতে যাওয়ার আগেই ৬ উইকেটে ১৯৯ হয়ে যায়। মধ্যাহ্ন থেকে চা বিরতি পর্যন্ত ৬২ রানেই ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায়। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান দিনেশ চান্দিমালকে উইকেট আঁকড়ে থাকার সুযোগই দেননি মুস্তাফিজ। আসেলা গুনারতেœকে এলবিডাবলিউ করেন সাকিব। মুস্তাফিজের ‘কাটার’ সামলাতে পারেননি ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। সাকিবের ঘূর্ণিতে কাবু হন নিরোশান ডিকওয়েলা। একদিকে মুস্তাফিজ, আরেকদিকে সাকিব আঘাত হানতে থাকেন। অন্যদিকে শততম টেস্টে মুশফিক উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করে অন্যরকম সেঞ্চুরি পূরণ করেন। দারুণ এক মাইলফলকে পৌঁছে যান বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক। বাংলাদেশের শততম টেস্টে ডিসমিসালের সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম উইকেটরক্ষক হিসেবে টেস্টে এমন কীর্তি গড়েন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ১৭১ ও টি২০তে ৪৫টি ডিসমিসাল নিয়ে শীর্ষে মুশফিক। এবার টেস্টেও শীর্ষে উঠলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি মুশফিক। তার জায়গায় লিটন কুমার দাস সেই দায়িত্ব পালন করেন। লিটনের ইনজুরিতে আবার সেই দায়িত্ব পান মুশফিক। ৯৭ ডিসমিসাল নিয়ে উইকেটের পেছনে কলম্বো টেস্টে দাঁড়ান মুশফিক। মুস্তাফিজের বলে ডি সিলভার ক্যাচটি ধরতেই শতক পেরিয়ে যান তিনি। শ্রীলঙ্কাও ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। কিন্তু একজনকে কোনভাবেই আউট করা যাচ্ছিল না। তিনি করুনারতেœ। শেষ পর্যন্ত সাকিবই সাজঘরে ফেরান করুনারতেœকে। বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাও যেন বেড়ে যায়। এখন যেন শুধু জয়ের অপেক্ষাতেই আছে বাংলাদেশ।
×