ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক অবকাঠামো নির্মাণে

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৯ মার্চ ২০১৭

আর্থিক অবকাঠামো নির্মাণে

প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার ইতি ও নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা গড়ে ওঠা জরুরী। দেশে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক অবকাঠামোরও উন্নয়ন ঘটছে। অবশ্য গত অর্ধশত বছর ধরেই বিশ্বজুড়ে আর্থিক খাতকে প্রভাবিত করে আসছে প্রযুক্তি। এই খাতে নিত্যনতুন উদ্ভাবন সহজ করে তুলছে মানবজীবনকে। ব্যাংকিং খাতে এর ব্যবহার কঠিনকে করেছে সহজতর। ১৯৬০ সালে এই খাতে সেমিকন্ডাক্টর মাইক্রোপ্রসেসর যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে। এর ফলে আর্থিক বিবরণসহ নানা তথ্যাদির ডিজিটাল রেকর্ড রাখা শুরু হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে মেইনফ্রেম, টার্মিনাল ও পারসোনাল কম্পিউটার, লোকাল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট এবং স্মার্ট ডিভাইস থেকে এখন মোবাইল প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী অবকাঠামোর আর্থিক বিবর্তনে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের খুচরা ও পাইকারি বাজারের জন্য পেমেন্ট সেবা প্রদান, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এবং প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ প্রবাহ ঠিক রাখছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংক এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই সম্পন্ন হচ্ছে দেশের সব আর্থিক লেনদেন। ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্রমকে গ্রাহকদের জন্য আরও সহজ করে তুলবে এবং দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সাফল্য অর্জনে সচেষ্ট বলে দাবি করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু সে নিয়ে সংশয় রয়েছে। অবশ্য বলা হয়, সরকারী নীতিমালার জন্য এক্ষেত্রে কতিপয় বিষয়ে এখনও তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ঢাকায় বেসিস সফট এক্সপো-২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে তথ্য দেয়া হয়েছে যে, ব্যাংকিং খাত ডিজিটালকরণে অদ্যাবধি দেশের ৫৬টি ব্যাংক ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ঝুঁকিমুক্ত ও সহজভাবে ব্যাংকিং সেবাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যাংকগুলো আনছে নতুন নতুন সব সফটওয়্যার। বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর প্রায় সব শাখাই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেছে। সোনালী ব্যাংক পাঁচ শ’ শাখায় অনলাইন সেবা চালু করেছে। অন্যান্য ব্যাংকগুলোও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, যা প্রশংসারযোগ্য। এসব সুবিধার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসা। এর ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জনে অনেক বেশি অগ্রগতি হচ্ছে। ব্যাংকিং সেবাদানে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের উন্নতি সাধনে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এ খাতে ‘ব্লকচেইন’ নামে পরিচিত ডিস্ট্রিবিউটেড লেসার টেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে ২৪টিরও বেশি দেশে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে পিছিয়ে আছে। আশি শতাংশ ব্যাংক আশা করছে চলতি বছরের মধ্যেই ব্লকচেইনের সফল ব্যবহার করতে পারবে। এর সুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রিয়াল টাইম মনিটরিং। পাশাপাশি এটি আর্থিক সুরক্ষাদানে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তিগত নেতৃত্ব দেবে ব্লকচেইন ক্লাউড কম্পিউটিং। এতে তথ্য সংরক্ষণ যেমন সহজ, তেমনি তথ্য সংরক্ষণ খরচও অনেক কম। এর ‘ক্লাউডে’ তথ্য সুরক্ষিতও থাকে। বড় ধরনের ডাটা সেন্টার তৈরি করতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ক্লাউডে তথ্য রাখলে অবকাঠামো নির্মাণের দরকার হয় না। তথ্য সংরক্ষণের খরচ অনেক কমে যায়। বাংলাদেশে ব্লকচেইন ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহারে বড় বাধা হচ্ছে, এক্ষেত্রে দেশে কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। কারণ, কোন্ ধরনের ক্লাইডসেবা ব্যবহার করা হবে, সে নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না, মন্ত্রণালয় দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য নিজস্ব ক্লাউডসেবা উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এই কাজ কবে শেষ হবে তার কোন সীমারেখা নেই। দাবি করা হচ্ছে, এজন্য খসড়া নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। কিন্তু তা কবে নাগাদ চূড়ান্ত হবে সে নিয়েও কোন পরিকল্পনা নেই। ব্যাংকিং খাতে নিরাপত্তাহীনতার বিপরীতে এর সুরক্ষার পথ ও পদ্ধতি ব্যবহার জরুরী। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ও শতভাগ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জনে সাফল্যের জন্য প্রয়োজন দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন। সংশ্লিষ্টরা এক্ষেত্রে সক্রিয় হলেই তা সম্ভব।
×