ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীমুক্ত সমাজ হোক

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৯ মার্চ ২০১৭

জঙ্গীমুক্ত সমাজ হোক

জঙ্গীবাদ সন্ত্রাসবাদ এক ভয়াল আতঙ্কের নাম। জঙ্গীবাদের প্রধান তত্ত্ব মানুষ হত্যা, তা সে যে ধর্মেরই হোক না কেন। সেইসঙ্গে প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ভূলুণ্ঠিত করা। ধ্বংস করার ব্রত নিয়ে তারা দেশে দেশে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে আসছেÑ তারা ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, ভাষার নামে, গোত্রের নামে মানুষ হত্যা করছে অবলীলায়। এমনকি মানুষকে পুড়িয়ে মারা, শিরñেদ করা এবং তা ভিডিও আকারে নেটে ছড়িয়ে দেয়ার মতো বর্বরতম কাজ করছে অনায়াসে। তারা ভিন্নমতকে গ্রাহ্য করে না। নিজেদের বর্বর চিন্তা, নারকীয় ভাবনা, নৃশংস মতামতকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে জঙ্গীবাদ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে দীর্ঘদিন ধরেই। এমনকি কোন কোন দেশের অস্তিত্বও বিপন্ন করে তুলেছে। এদের অস্ত্রশস্ত্র ও রসদের কমতি নেই। বাংলাদেশে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা শুরু হয় ও আফগানিস্তানে প্রশিক্ষিত বাঙালী মুজাহিদদের হাত ধরে জঙ্গীদের আত্মপ্রকাশ ঘটে এই বাংলায়। ১৯৯২ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপির ছত্রছায়ায় এদেশের প্রকাশ্য সভা সমাবেশ শুরু করে। এমনকি, ঘোষণা দেয়, ‘আমরা সবাই তালেবান, ‘বাংলা হবে আফগান’। ১৯৯৮ সালে দেশবরেণ্য কবি শামসুর রাহমানের ওপর হামলা চালায়। এরপর থেকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা একের পর এক হত্যা করছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাগ্রসর এবং অগ্রসর চিন্তার লেখক ও গবেষকদের। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের পরিচালনায় শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তারা একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলাও চালায়। এজলাসে কর্তব্যরত বিচারকদেরও হত্যা করে। এরপর দেশী-বিদেশী মানুষদের হত্যা করে। তাদের হত্যার তালিকা দীর্ঘ। পূর্ব ঘোষণা দিয়েও তারা হত্যা করেছে শিক্ষিতজন, পেশাজীবীদের। জঙ্গীরা আছে এবং সক্রিয়ভাবেই আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে একের পর এক শীর্ষ জঙ্গী নিহত হওয়ার খবর স্বস্তিকর। একই সঙ্গে জঙ্গীদের আস্তানাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ায় তাদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রিত প্রায়। তথাপি আতঙ্ক পুরোপুরি কাটছে না। কারণ তালিকাভুক্ত অনেক শীর্ষ জঙ্গী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। প্রায় এক ডজন জঙ্গী নেতা আত্মগোপনে থেকে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের গ্রেফতারে প্রতিদিনই অভিযান চলছে। অরাজকতা, নাশকতা, সহিংসতা জঙ্গীদের মূলমন্ত্র। মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলাই তাদের লক্ষ্য। তারা আইনকানুন, সংবিধান, আইনের শাসন, গণতন্ত্র এসব কিছুই গ্রাহ্য করে না। অন্ধকারের যাত্রী এই জঙ্গীদের সন্ত্রাস আর কালোছায়ার বিস্তার ঘটেছে এই বাংলাদেশেও। দেশ যখন উন্নতির দিকে, শিক্ষার ঘটছে বিস্তার তৃণমূল পর্যায়েও, তখন ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও ভয়ভীতির সংস্কৃতিকে পুঁজি করে তারা মাঠে নেমেছে, সশস্ত্র পন্থায় ধ্বংস করতে দেশকে। সবচেয়ে বিস্ময়কর যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ জঙ্গীবাদে ঢুকে পড়েছে। জঙ্গীবাদ মাদকাসক্তি থেকেও ভয়াবহ। এই আসক্তিতে শিক্ষিত তরুণরা জড়িয়ে পড়ার ঘটনার ব্যাখ্যা খোঁজা হচ্ছে। আরও বিস্ময়ের যে গৃহবধূ-তরুণী এবং ছাত্রীরাও জঙ্গীবাদে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি আত্মঘাতীও হয়ে উঠছে। মানসিক বিকার বা মনোবৈকল্যের যে স্তরে তারা পৌঁছেছে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়। ঢাকার গুলশানের হলি আটিজানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। এই জঙ্গীদের আন্তঃদেশীয় যোগাযোগটি বিশাল ও সমৃদ্ধ। তারা খুব সহজেই সীমান্ত পেরিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করতে সক্ষম। দীর্ঘদিন একে অন্যের আশ্রয়ে পালিয়ে থেকে বাঁচতে পারে। জঙ্গীদের নেটওয়ার্ক এতই শক্তিশালী যে, তারা ভিন্ন দেশ, ভিন্নভাষী লোকজনের সহায়তা নিয়ে সঙ্গোপনে সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা বানাতেও পারঙ্গম। সর্বোপরি তাদের অর্থেরও আদৌ কোন অভাব নেই। দেশ, জাতি ও বিশ্ববাসীর শত্রু জঙ্গীবাদ। বাংলাদেশ জঙ্গী দমনে সাফল্য পেলেও তাদের নির্মূল করা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের স্থান বাংলাদেশে হবে না। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আশা করেন যে, দেশে-বিদেশে অধ্যয়নরত মেধাবী ছাত্ররা যেন বিপথে না যায়। তারা যেন জঙ্গীবাদ সন্ত্রাসের সঙ্গে না জড়ায় সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখার জন্য শিক্ষক, অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সজাগ থাকবেন। সচেতনতা বাড়লে জঙ্গীবাদ নির্মূল হবেই। অবশ্য জনগণের সাহসী ভূমিকার কারণে জঙ্গী আস্তানা উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে। জঙ্গী দমনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর অবস্থান ধরে রাখতে হবে। জঙ্গীবাদকে যেমন ‘না’ বলতে হবে। তেমনি তাদের নির্মূলও করতে হবে।
×