ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যালোচনা বৈঠকে ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ

নতুন ঋণও খেলাপী হচ্ছে বেসিক ব্যাংকের

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৯ মার্চ ২০১৭

নতুন ঋণও খেলাপী হচ্ছে  বেসিক ব্যাংকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন করে বিতরণকৃত ঋণ আবারও খেলাপী হচ্ছে রাষ্ট্রীয় খাতের বেসিক ব্যাংকের। অনেক শাখায় এখনও যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ বিতরণ হচ্ছে। এতে যথাসময়ে ঋণের কিস্তি ফেরত আসছে না। ফলে নির্দিষ্ট সময়ান্তে ওই ঋণটি খেলাপী হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ব্যাংকটি যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে তার ৪ শতাংশই খেলাপী হয়ে পড়েছে। এ সময়ে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ হয়েছে ২ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী হয়েছে ৯৩ কোটি টাকা বা ৪ শতাংশ। আগের বছরও ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ খেলাপী হয়েছিল। বিতরণের বছরে ঋণ খেলাপী হওয়ার অর্থ পার্টি ঋণ নিয়ে তা সঠিক কাজে ব্যবহার করেনি। যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ বিতরণ হওয়াই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সাল শেষে বেসিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী হয়ে পড়েছে ৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৫৪ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত ব্যাংকের মন্দমানের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপী ঋণের আবার সাড়ে ৫১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, খেলাপী ঋণের বড় অংশ মন্দমানে পরিণত হওয়ায় ব্যাংকটির আয় কমে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল পর্যন্ত সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক লাভেই ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে নিয়োগ দেয়া হলে এর পতন শুরু হয়। ওই সময় চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ মদদে বেসিক ব্যাংকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এর জেরে ২০১৪ সালের মে মাসে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর একই বছরের জুলাইয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ধারা ৪৬ (৬) অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশের আলোকে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং আলাউদ্দিন এ মজিদকে পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এছাড়া একই বছরের ১ অক্টোবর ব্যাংকটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে খোন্দকার মোঃ ইকবালকে নিয়োগ দেয়া হয়। নতুন পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেয়ার পরও অনিয়ম থামেনি বেসিক ব্যাংকে। এতে খেলাপী ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিও বাড়ছে। ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমান দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে এরই মধ্যে সরকারের কাছে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর দাবি জানিয়েছে বেসিক ব্যাংক। জানা যায়, আর্থিক সূচকের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় খাতের বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে আসছে। এমওইউতে বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক সমঝোতা স্মারকের অগ্রগতি ওপর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসএম মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বৈঠকে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালনক খোন্দকার মোঃ ইকবালের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ও লোকসানি শাখা কমিয়ে আনা ও মূলধন ঘাটতি পূরণের ওপর জোর দেয়া হয়। বৈঠকে মূলধন ঘাটতি পূরণে বন্ড ইস্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চান ব্যাংকের এমডি খোন্দকার মোঃ ইকবাল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, বন্ড ইস্যুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
×