ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার চেহারা দু’তিন বছরে একেবারে বদলে যাবে

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৯ মার্চ ২০১৭

ঢাকার চেহারা দু’তিন বছরে একেবারে বদলে যাবে

ধস্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বে বাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে ঢাকাকে অন্যতম নিকৃষ্ট শহর বলে অভিহিত করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। তাই এই শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া অত্যন্ত কষ্টকর। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারলে আগামী ২-৩ বছর পর বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে মানুষ আসবে ঢাকা শহর দেখতে। একই সাথে আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৫ হাজার ২০০ সিসি ক্যামেরা বসানো হবে ও অতি দ্রুত উন্নতমানের পরিবেশবান্ধব এলইডি বাতি লাগানোর কথাও জানিয়েছেন তিনি। শনিবার সকালে গুলশান লেক পার্ক এ্যাম্ফিথিয়েটারে গুলশান সোসাইটি ও ডিএনসিসির যৌথ উদ্যোগে সড়ক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ‘এ্যাডপ্ট এ রোড’ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। এ সময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রাজউকের চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী, ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এম আব্দুর রাজ্জাক, গুলশান সোসাইটির সভাপতি ডা. এটিএম শামসুল হুদা, মহাসচিব ওমর সাদাত, সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলাল, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহম্মেদ প্রমুখ। উদ্বোধনী ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠান শেষে ঝাড়ু হাতে রাজপথ পরিষ্কার করেন মেয়র। তিনি বলেন, ডিএনসিসি এবং গুলশান সোসাইটির মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুসারে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রথম পর্যায়ে গুলশানের ৭০টি অভ্যন্তরীণ সড়কের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নিলেন। গুলশান সোসাইটির নিযুক্ত ১০০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে সড়কগুলো পরিচ্ছন্ন করা হবে। ডিএনসিসি’র বর্জ্যবাহী গাড়ি স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সড়ক বর্জ্য পরিবহন করে ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাবে। মেয়র বলেন, ঢাকায় প্রতিবর্গ কিলোমিটারে লক্ষাধিক লোকের বাস। ফলে এখানে ইচ্ছে করলেই কোন কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের কথা উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন, মহাখালী ও আশপাশের এলাকায় এক হাজার সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এসব এলাকার সড়কে উজ্জ্বল আলোর এলইডি বাতি বসানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন সোসাইটি মিলে গুলশান, বনানী, বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। কিছু প্রবেশপথ বন্ধ করতে হয়েছে, কোথাও চলাচল সীমিত করতে হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে ইতোমধ্যে হাজার খানেক ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে আরও ৫ হাজার ২০০ সিসি ক্যামেরা ও সড়কে এলইডি বাতি বসানোর প্রকল্প পাস হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা ভাল মানের বাতি কিনব। ঢাকা শহরকে বদলে দেব। শুধু তাই নয়, ৬-৮ মাসের মধ্যে ডিএনসিসি এলাকার ট্রাফিক সমস্যা সমাধানে ২১টি ইউলুপ করা হবে। সব কাজ আমরা সময় নিয়ে করছি। তাতে একটু দেরি হতেই পারে। বর্তমানে আমরা রাজধানীর ৬৩টি এলাকায় ২৫০০ টন বর্জ্য পরিষ্কার করছি। তবে যখন নির্বাচন করেছিলাম তখন প্রতিশ্রুতি ছিল মেয়রের, ঢাকা শহর সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। কোন যানজট থাকবে না, অপরিচ্ছন্ন থাকবে না। কিন্তু তখন জানিই না যে, অর্ধেকের বেশি কাজ আইনগতভাবে আমার করারই অধিকার নেই। মেয়র বলেন, জনগণ পাশে না থাকলে একজন মেয়র একা কোন কাজ করতে পারে না। জনগণ সঙ্গে থাকলে সব সমস্যার সমাধান হয়। আমরা ঢাকা শহরকে বদলানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করছি। অনেক কাজ যে করে ফেলেছি কিন্তু সেটাও বড় কথা নয়। তবে আমরা করার চেষ্টা করছি। আনিসুল হক বলেন, একটা সময় ছিল যখন গ্রীন ঢাকার কথা বলতাম। বিলবোর্ডের জন্য আকাশ দেখা যেত না। প্রেমিকা ডাক দিলে দূর থেকে শোনা যেত না। এই বিলবোর্ড আমরা সাফ করেছি। শুনেছিলাম একটি বিলবোর্ড সাফ করতে কারও হাত কেটে নেয়া হয়েছে। অথচ সিটি কর্পোরেশনের সবাই মিলে আমরা ২০ হাজার বিলবোর্ড ঢাকা শহর থেকে পরিষ্কার করেছি। এছাড়া আমরা গত বছর ঢাকা শহরে ৩২ হাজার গাছ লাগিয়েছি। এ বছর আরও বেশি গাছ লাগাব। আর গুলশান সোসাইটি যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তাতে আগামী ২-৩ বছর পর বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে মানুষ আসবে ঢাকা শহর দেখতে। মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশন চাইলে ২-৩ মাসে রাস্তা করতে পারে, তাতে জলাবদ্ধতা দূর হবে না। আগে বৃষ্টি হলে ঢাকা শহরের ২১টি এলাকায় পানি উঠত, এবার ৩টি এলাকায় পানি উঠেছে। আমরা ধীরে ধীরে কাজ করছি। এর চেয়েও বড় কথা, গুলশান ১ থেকে গুলশান ২-এর ৪৯ নম্বর রোড অবধি যখন কাজ শুরু করি তখন ১৬টি স্থানে ধনী শ্রেণী রাস্তাা দখল করেছিল। সাধারণ হকারকে পুলিশ পিটিয়ে তুলে দিতে পারে, কিন্তু এরা এতোই শক্তিশালী যে আমাদেরই পিটিয়ে তুলে দিতে পারে। এরা জায়গা দখল করে বিশাল বিশাল বাড়ি তৈরি করেছে। কিন্তু তারা শক্তিশালী হোক, তাদেরকে ১ ইঞ্চি জায়গাও ছাড় দেয়া হয়নি। মেয়র সুন্দর ঢাকা গড়তে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×