ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উৎপল কান্তি বড়ুয়া

দাদু ও ছয় বন্ধু

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৮ মার্চ ২০১৭

দাদু ও ছয় বন্ধু

দাদুরা তোমরা এসে গেছ দেখছি। বসো বসো। এই এখানে আমার সামনে বসো। দাদু এতক্ষণ ইজি চেয়ারে বসে দৈনিকের পাতায় চোখ বুলাচ্ছিলেন। দরজার পাশ থেকে শোলার পাটিটা দাদুর সামনে জটপট বিছিয়ে বসে পড়ে ওরা। ওরা মানে, ওরা ছয়জন। জনি, রাজু, লিনা, দীপু, লাবু ও রানু। ওরা বন্ধু। একত্রে খেলে। ইশকুলে যায়। পড়েও একই ক্লাসে। পঞ্চম শ্রেণীতে। নবীনপুর প্রাইমারিতে। দাদুর কাছে আসে ওরা প্রায় সময়ই। দাদু গল্প শোনান। মজার মজার সব গল্প। হাসির গল্প। ভূতের গল্প। খেলার গল্প। দেশের গল্প। দাদু মাঝে মাঝে সুর করেও কথা বলেন। দাদু গল্প বলা শেষ করে ওদেরকে চকোলেট, ললিপপ, বাদাম খেতে দেন। গল্প শোনার পাগল ওরা ছয়জন অধীর আগ্রহ নিয়ে দাদুর দিকে তাকায়। দাদু শুরু করেন- দাদুরা শোনো, আজ তোমাদের একটু পরীক্ষা করা যাক। কার মাথায় কতটুকু কেমন বুদ্ধি আছে দেখি! রাজু ঝট করে বলে ওঠে- দাদু, অঙ্কের যদি পরীক্ষা হয় তাহলে আমি হয়ত পারব না। -ইংরেজী হলে আমিও পারব না বলে মনে হয় দাদু- রানুও রাজুর সঙ্গে সুর মিলায়। -আরে না না। তেমন কোন পরীক্ষা বা প্রশ্ন নয়। আমি যেটা তোমাদের কাছে জানতে চাইব সেটা এসবের চেয়ে আলাদা। তবে খুবই সোজা প্রশ্ন। তাই উত্তরও হবে সোজা। আশা করি তোমরা পারবে। -কী রকম পরীক্ষা দাদু?-দীপু ও লিনার একসঙ্গে প্রশ্ন। -বলেন না দাদু, কী রকম পরীক্ষা?-লাবুর যেন তর সয় না আর। -দাদু কী প্রশ্ন করবেন, করেন তো তাড়াতাড়ি! সবার চেয়ে খানিকটা সাহসী জনি দাদুকে তাড়া দেয়। -আরে বলছি, বলছি। আগে আমার কথা তোমরা মন দিয়ে শোন। আমাদের জাতির পিতাকে তো তোমরা সকলে চেনো-জানো। তাঁর কথা, তাঁর সম্পর্কে তোমাদের আমি বিভিন্ন সময় বলেছি। আজ সতেরো মার্চ তাঁর জন্মদিন। আজ জাতীয় শিশু দিবস। তোমাদের জন্য আমার আজ যে প্রশ্নটা, সেটা জাতির পিতাকে ঘিরেই। তোমরা ছয়জনের জন্য ছয়টা কবিতার লাইন ছয়টা কাগজে লেখা রয়েছে। তোমাদের কাছ থেকে যা জানতে চাইব, তার জবাব কিন্তু তোমাদের প্রত্যেকের কাগজে লেখা প্রতিটি কবিতার লাইনেই রয়েছে। বুঝতে পেরেছ দাদুরা? জনি, রাজু, লিনা, দীপু, লাবু ও রানু একসঙ্গে সায় দেয়- হ্যাঁ দাদু বুঝতে পেরেছি। দাদু কবিতার প্রথম লাইন লেখা কাগজটা জনির হাতে দিয়ে বলেন, -প্রথম লাইন জনির জন্য- ‘শেকল ছেঁড়ার দিন এসেছে’ দ্বিতীয় লাইন রাজুর জন্য -‘খলখলিয়ে চাঁদ হেসেছে’ তৃতীয় লাইন লিনার জন্য- ‘মুখের কথার মধুর মায়ায়’ চতুর্থ লাইন দীপুর জন্য- ‘জিরায় পথিক গাছের ছায়ায়’ পঞ্চম লাইন লাবুর জন্য- ‘বকের শাদা সকল পালক, এবং সবশেষ লাইন রানুর জন্য- ‘রতন-রবি সুবোধ বালক।’ এখানে মোট ছয় লাইনের কবিতায় ছয়জনের কাছেই আমাদের জাতির পিতার নাম রয়েছে। তোমাদের বের করতে হবে তাঁর নামটা তোমাদেরই সম্মিলিত চেষ্টায়। কিভাবে কোথায় কেমন করে জাতির পিতার নামটা রয়েছে- তোমাদের সেটা বলতে হবে। আশা করি আমার প্রিয় দাদুমনিরা পারবে। সময় কিন্তু সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট। তোমাদের সময় শুরু হলো এখনই। চিন্তা কর এবং জবাব বের কর। জনি-রাজু একত্রে মুখোমুখি হয়ে কি যেন পরামর্শ করে। পরক্ষণেই জনি দাদুর উদ্দেশে বলে ওঠে- পেয়ে গেছি আমি দাদু- মানে আমি আর রাজু পেয়ে গেছি- ‘শেখ’। আমার কবিতার লাইনে ‘শে’ এবং ... এতটুকু বলতেই জনির মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়েই রাজু বলে ওঠে আমার কবিতার লাইনে ‘খ’- দু’জনের একত্রে ‘শেখ’। রাজুর কথা শেষ হতে না হতেই লিনা বলে ওঠে- আমার লাইনে ‘মু’ এবং ক্রমান্বয়ে দীপু, লাবু ও রানুও বলে ওঠে আমার কবিতার লাইনে ‘জি’ ‘ব’ ‘র’। তারপর জনি, রাজু, লিনা, দীপু, লাবু ও রানু সমস্বরে বলে ওঠে শে-খ মু-জি-ব-র! শেখ মুজিবর! শেখ মুজিবর! বলতে বলতে ওরা যেন উল্লাসে ফেটে পড়ে! লাবু আবার বলে ওঠে- প্রত্যেকের হাতে কবিতার লাইনের প্রথম অক্ষরেই পেয়ে গেছি ‘শেখ মুজিবর’ নামটা। দাদুর তো রীতিমতো আশ্চর্য হবার পালা। তোমরা পারবে হয়ত জানতাম। কিন্তু এত সহজে উত্তরটা দিয়ে দিলে মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই! জানো ভালই লাগছে বেশ আমার এই ভেবে যে আমার দাদুমনিরা বেশ বুদ্ধিমান-চালাক। আজ জাতির পিতার জন্মদিনে এই ধাঁধার গল্পটা খুবই মজা হলো- তাই না? সবাই সমস্বরে জবাব দেয়- হ্যাঁ দাদুভাই। দাদু সবাইকে একসঙ্গে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বললেন, আজ শুধু চকোলেট, মিমি বা ললিপপ নয়- সঙ্গে তোমাদের জন্য রয়েছে দাদুভাইয়ের পক্ষ থেকে আকর্ষণীয় পুরস্কার। জনি সাবু লালু দীপ ধনা ও পানু আবারও সমস্বরে বলে ওঠে- থ্যাংক ইউ দাদুভাই, থ্যাংক ইউ। অলঙ্করণ : আইয়ুব আল আমিন
×