স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমি যখন তোমাদের মতো ছোট ছিলাম, আমার বাবা বেশিরভাগ সময় জেলেই থাকতেন দেশের জন্য লড়ার কারণে। বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। বেশিরভাগ একাই যেতাম, না হয় মা স্কুলে নিয়ে যেতেন। বাবা বাসায় থাকলে তার সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার বায়না ধরতাম। বাবা অফিস থেকে ফেরার সময় স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন। এ সময় ঈদের আনন্দের মতো আনন্দ হতো।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার শিশু-কিশোরদের নিয়ে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফর্মেশন (সিআরআই)। ধানম-ির ৩২ নম্বর বাড়িতে আয়োজিত শিশুদের এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে শিশুদের কাছে বাবার সঙ্গে নিজের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করছিলেন শেখ রেহানা। এ সময় আবেগাপুøত হয়ে পড়েন তিনি। শিশুদের কাছে বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল, রাজনৈতিক জীবন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরার লক্ষ্যেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শেখ রেহানা বলেন, ‘আমি যখন তোমাদের মতো ছোট ছিলাম, আমার বাবা বেশিরভাগ সময় জেলেই থাকতেন দেশের জন্য লড়ার কারণে। তাই বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। বেশিরভাগ একাই যেতেন, না হয় মা তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন।’
ধানম-ি ৩২ নম্বর বাড়িতে তাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাও শিশুদের শোনান শেখ রেহানা। বলেন, ‘বয়স যখন ৩/৪ তখন তারা এই বাড়িতে এসে ওঠেন। বাড়ির উঠানে বাস্কেটবল খেলতেন, বাবা মুক্ত থাকলে বাসায় থাকতেন আর তখন পরিবারের সবাই মিলে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। বিভিন্ন রকমের ফুলে ভরে থাকত বাসার বাগান, বারান্দা। সকালে খবরের কাগজ পড়ে স্কুলে যাওয়ার আগে ফুল কুড়িয়ে মালা বানাতেন। বাবা সকালে পুরো ধানম-িতে হাঁটতেন, আমি আর ভাইয়েরা শুধু ৩২ নম্বরেই তার সঙ্গে হাঁটতাম, কিন্তু বোঝাতাম আমরাও পুরোটা হেঁটেছি। উনাকে তো আমরা সবসময় কাছে পেতাম না, তাই যখনই তিনি বাসায় থাকতেন, বাচ্চারা সবাই তার সঙ্গে খেলত, তার কারাগারে থাকার গল্প শুনত, তার হাতে ভাত খেত।’
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শিশুদের জিজ্ঞেস করেন তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছে কিনা। তখন শিশুরা সবাই শেখ রেহানার সঙ্গে উচ্চারণ করে, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধু কোথায় জন্মেছিলেন, তার বাবা-মার নাম কি? শিশুদের কাছে এ প্রশ্ন করেন শেখ রেহানা। এ সময় প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেয় তারা। এক শিশু প্রশ্ন করেন, বাবা কেমন শাসন করতেন? শিশুর এমন প্রশ্নে শেখ রেহানা বলেন, ‘মারধর তো দূরের কথা কখনও বকাও দিতেন না। শুধু এমনভাবে তাকাতেন যে আমরা বুঝে ফেলতাম যে কোন ভুল করে ফেলছি।’ শেখ রেহানা বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের অনেক ভালবাসতেন। হেসে বলেন, বাবার চাইতে মা বেশি শাসন করতেন।
এরপর শেখ রেহানা বলেন, তাদের পড়াশোনায় বঙ্গবন্ধুর ছিল কড়া নজর, সবার পড়ালেখার খোঁজখবর রাখতেন তিনি। তিনি যখনই সুযোগ পেতেন, ছেলেমেয়েদের বাংলা-ইংরেজী লেখার দক্ষতা, অঙ্কে দক্ষতার পরীক্ষা নিতেন। তখন আমরা ভাইবোনরা খুব ভয়ে থাকতাম। বাবা যখনই বাসায় আসতেন, যত রাতই হোক, তিনি নিজের হাতে শেখ রেহানাকে খাইয়ে দিতেন। ছোটবেলায় আমি খেতে চাইতাম না, ঘুমের ভান করে পড়ে থাকতাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সব সময় বুঝতে পারতেন যে শেখ রেহানা ঘুমের ভান করছে।
শেখ রেহানা আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে অন্যান্য বাচ্চারা যখন বাবার সঙ্গে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটার গল্প করত তখন আমার অনেক মন খারাপ হতো। একবার এমন ঈদের সময় বাবা বাড়িতে ছিলেন, তখন তাকে আমি জোর করে নিউমার্কেট নিয়ে যাই। এখনকার মতো শপিংমল তখন ছিল না, নিউমার্কেটই ছিল কেনাকাটার সবচেয়ে বড় জায়গা। বঙ্গœ্ধু তাকে নিউমার্কেটে নিয়ে যান আর আমাকে একটি জামা ও আইসক্রিম কিনে দেন। সেদিন সন্ধ্যায় তারা সব ভাইবোন খুশিতে আত্মহারা ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর মতো মহান ব্যক্তিত্বদের সম্বন্ধে জানতে শিশুদের উপদেশ দেন জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা। তাহলে কিভাবে অন্যের উপকার করতে হয়, কিভাবে মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে হয়, তা জানতে পারবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিশুরা তাদের বাবা-মা, বন্ধুদের সাহায্য করবে।