ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাহারি পণ্যের পসরা, ছুটির দিনে জমজমাট এসএমই মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ মার্চ ২০১৭

বাহারি পণ্যের পসরা, ছুটির দিনে জমজমাট এসএমই মেলা

আনোয়ার রোজেন ॥ আকারে ছোট, হলুদাভ চালের জাতটির নাম ‘তামরি’! এ রকম অদ্ভুত নামের কোন চালের কথা হয়তো আপনি কখনই শোনেননি। কিন্তু দেশীয় জাতের এ চাল খিচুড়ি রান্নার জন্য অতুলনীয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) মেলায় প্রতি কেজি ৯০ টাকা দরে এ চাল পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তামরি নয়, মিলছে গাইনজা নামের একধরনের সরু চাল, যা ভাতের জন্য খুব ভাল। পিঠা-পায়েসের জন্য পাওয়া যাচ্ছে তিন ধরনের বিন্নি, বিরই, বাঁশফুল, লাল বালামসহ দেশীয় বিভিন্ন জাতের চাল। পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় চালে ঘরে তৈরি চিড়া-মুড়িও। ৭০ টাকা কেজি দরে মেলার চিত্রা অরগানিক কৃষি বাজারের স্টল থেকে কামরুন নেসা নাসরিন (৪০) কিনলেন চিড়া। বললেন, মেলায় আসার জন্য শুক্রবারের অপেক্ষায় ছিলাম। রাজধানীর শুক্রাবাদ থেকে সপরিবারে মেলায় এসেছেন তিনি। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় নাসরিনের মতো অনেকেই পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন। বিকেলে মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে চাল বা চিড়া-মুড়ি নয়, এসএমই মেলায় সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে পোশাক। বিশেষ করে দেশের নারী উদ্যোক্তারা যে বুটিক ও বাটিক হাউসগুলো গড়ে তুলেছেন, সেগুলো অংশ নিয়েছে এসএমই মেলায়। এতে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যেই মিলছে মেয়েদের পোশাক, শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক ও বিছানার চাদর। কেরানীগঞ্জ থেকে মেলায় এসেছেন ফাতেমা মনসুর (৬২)। পেশায় চিকিৎসক ফাতেমা বললেন, ছুটির দিন হওয়ায় মেয়ে ও নাতি-নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে মেলায় এসেছি। নিজের জন্য এখনও কিছু কিনিনি। দুই নাতি-নাতনি তাদের পছন্দের জিনিস খুঁজছে। ওদের কিনে দেব। পোশাকের পর মেলায় সবচেয়ে বেশি মিলছে চামড়াজাত পণ্য। জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, বেল্টসহ চামড়ার তৈরি বিভিন্ন পণ্য তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আছে বেশ কয়েকটি হস্তশিল্পের স্টল। মধুসহ বিভিন্ন পণ্যও নিয়ে এসেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। মেলায় এলে পিঠাও খাওয়া যাবে। প্রতিটির দাম ৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। ‘পিঠার আড্ডা’ স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ফিন্নি খাচ্ছিল আনারাতুল জান্নাহ, নাবিলা সোবহানি ও লাবিব সোবহানি। খাওয়ার চেয়েও স্টলে রাখা হরেক রকম নক্সার পিঠা ও বাহারি নামের প্রতি আগ্রহী মনে হলো এই তিন শিক্ষার্থীকে। স্টলের স্বত্বাধিকারী হোসনা বেগম জানালেন, দেশীয় সব ধরনের পিঠা আমরা ঘরেই তৈরি করে থাকি। বিয়ে, জন্মদিনসহ যে কোন অনুষ্ঠানে অর্ডার দিলে আমরা সেগুলো পৌঁছে দেয়ারও ব্যবস্থা করি। দেশের ২০০টি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ২১৬টি স্টলে তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছে এ মেলায়। এদের মধ্যে একটি বেঙ্গল ব্রেইডেড রাগস। তারা পাটের তৈরি উন্নতমানের কার্পেট ও পাপোশ নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে। কোম্পানিটির কর্মী মোঃ কবির হোসেন জানান, এসব পণ্য তারা ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করছেন। বাংলাদেশের বাজারে তাদের পণ্য খুব বেশি সরবরাহ করা হয় না। তাদের একেকটি বড় কার্পেটের দাম পড়ে প্রায় ৭ হাজার টাকা। এছাড়া ছোট থেকে মাঝারি আকারের পাপোশ ও কার্পেট মেলায় ৭০ থেকে ৩ হাজার টাকাতেও বিক্রি করছেন। গ্রিটিংস স্টুডিও নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিমন্ত্রণের কার্ড তৈরি করে কাঠের নক্সা করে, যাকে বলা হয় উড ক্র্যাফট। আকর্ষণীয় এ নক্সা দেখতে অনেকেই স্টলটিতে ভিড় করেছেন। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা জানালেন, একেকটি বিয়ের নিমন্ত্রণ কার্ড তৈরিতে খরচ পড়বে ৩৫০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি। তাদের লক্ষ্য কিছু উচ্চ আয়ের ক্রেতা ধরা। ডি জোন নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে দেয়াল সাজানোর কাঠ ও পার্টিকেল বোর্ডের তৈরি নক্সা, যাকে বলা হয় ওয়াল প্যানেলিং। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জহিরুল ইসলাম বলেন, ১ বর্গফুটের দেয়াল সাজাতে খরচ পড়ে কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ টাকা। মেলায় ৩৩ নং স্টল ফ্যাশন হাউজের সীজের তৈরি পোশাক নিয়ে বসেছেন রাজশাহী জেলার উদ্যোক্তা উরসি মাহফিলা। তিনি বললেন, ছুটির দিন হওয়ায় আগের দুই দিনের তুলনায় দর্শনার্থী-ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। বিক্রিও বেশ জমে উঠেছে আজ। আমার স্টলে সাধারণত শাড়ির চাহিদা বেশি। পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত এ মেলা শুরু হয়েছে বুধবার। আয়োজক এসএমই ফাউন্ডেশন। মেলাটি আগামী রবিবার পর্যন্ত চলবে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করা যাবে। এতে প্রবেশে কোন ফি নেই। উল্লেখ্য, এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারীদের ৬৪ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা।
×