ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রং তুলিতে জঙ্গীবাদ বিরোধী সামাজিক আন্দোলন

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৮ মার্চ ২০১৭

রং তুলিতে জঙ্গীবাদ বিরোধী সামাজিক আন্দোলন

বাবু ইসলাম ॥ সমাজ থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদসহ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জঙ্গীবাদবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে রং তুলি হাতে একাই মাঠে নেমেছেন প্রতিবন্ধী অঙ্কন শিল্পী সাইফুল। তিনি সামাজিক কুসংস্কার বদলে দিতে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন। প্রতিবন্ধী সাইফুল তার নিজের এলাকার মানুষকে সচেতন করার জন্য সড়ক স্থাপনা ব্রিজ-কালভার্টের পাখায় পাখায় মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘এসো পৃথিবীতে মানুষ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করি।’ ‘মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ নয়। শান্তি চাই।’ ‘শুধু পারিবারিক সচেতনতা-আপনার সন্তানকে মাদকসেবী, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকা- থেকে রক্ষা করতে পারে।’ ‘এলাকার মাদকসেবী-জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসীকে আইনের হাতে তুলে দিন।’ ‘জীবন-সংগ্রামে আমিও একজন সৈনিক। আমার সংগ্রাম পৃথিবীর সকল মাদকসেবী, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।’ এ রকম সচেতনামূলক কথা লিখে তাড়াশ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রতিবন্ধী যুবক সাইফুল ইসলাম। তাড়াশ হতে রানীহাট, বারুহাস, কুন্দইল, মাগুরা বিনোদ, নওগাঁ, মাধাইনগর, দেশীগ্রাম, সলঙ্গা, নিমগাছী ও অন্যান্য সড়কসহ হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক পর্যন্ত সকল ব্রিজ-কালভার্টের পাখায় পাখায় নিজ খরচে এবং নিজে হাতে রং তুলিতে লিখছেন প্রতিবন্ধী সাইফুল। এছাড়াও তার বাড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জাতীয় ৪ নেতা, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ও এমএজি ওসমানীসহ বিভিন্ন কবি লেখক তথা স্বাধীনতার পক্ষের ২৫ গুণী মানুষের ভাস্কর্য তৈরি করেছেন। স্কুলগামী কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের এ সকল ভাস্কর্যগুলো দেখিয়ে গুণীজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসায় উৎসাহিত করেন। এ সকল ভাস্কর্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সাইফুল ইসলাম তার সৃষ্টি সকল শিল্পকর্ম জাতীয় জাদুঘরে দান করতে চান। সাইফুল ইসলামের ডান পা জন্মগতভাবে বাঁকা, চিকন ও খাটো। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। সংসারে আর্থিক অবস্থা মোটেই ভাল নয়। তার বাবা আবদুল জব্বার ইতোমধ্যে গত হয়েছেন। তার বড় ভাই আবদুস সোবহান জানান, তার ছোট ভাই সাইফুলের জন্মলগ্ন থেকেই পা সরু, বাঁকা ও খাটো। ছেলেকে সুস্থ করতে বাবা জব্বার আলী, মা মরিয়ম বেগম চিকিৎসার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। তিনি একজন প্রতিবন্ধী হয়েও দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরেপড়া রোধ, শতভাগ স্যানিটেশন ও বাল্যবিয়ের কুফল ইত্যাদি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রতিবন্ধী সাইফুল নিজ হাতে রং তুলি দিয়ে বিদ্যালয়ের গায়ে লিখেছেন অসংখ্য দেয়াল লিখন। নিজের কষ্টার্জিত টাকা ও শ্রম ব্যয় করে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান সময়ে জঙ্গীবাদ, মাদক, বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। তাই তিনি এ সকল বিষয়ের ওপর গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সিরাজগঞ্জ রোড থেকে নাটোরের বনপাড়া ও তাড়াশ উপজেলার ১৬০টি ব্রিজে সচেতনমূলক বিভিন্ন সেøাগানধর্মী কথা লিখেছেন। তিনি একটি মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে দূর-দূরান্তে ব্রিজে গিয়ে এসব কাজ করছেন। আর একই সঙ্গে তার মোবাইল নম্বরও দিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিবন্ধী মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, একজন শিক্ষিত সচেতন মানুষ হিসেবে দেশের জন্য কিছু করা দরকার। তাই ব্র্যাক, এনজিও তাড়াশের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্রিজে জনগণকে সচেতন করার জন্য এসব লিখছেন তিনি। তার প্রত্যাশা কেউ যেন জঙ্গীবাদ, মাদক, বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিংয়ের মতো খারাপ কাজে জড়িয়ে না পড়ে। আর আমার বাসায় জাতির জনকসহ যেসব প্রতিকৃতি রয়েছে সরকার যদি চায় তাহলে তিনি এসব প্রতিকৃতি সরকারকে দিয়ে দেবেন বলে উল্লেখ করেন।
×