ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম যেসব কারণে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৮ মার্চ ২০১৭

চট্টগ্রাম যেসব কারণে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের টার্গেট

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের সীতাকু-ে জঙ্গীদের দুটি আস্তানার সন্ধান ও অভিযানের ঘটনার পর চমকপ্রদ কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জঙ্গী সন্ত্রাসীদের আসল টার্গেট ছিল চট্টগ্রামে অবস্থানরত বিদেশী ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত এক মন্ত্রী। এর মূল কারণ, বিদেশী হত্যা ও সরকারের দায়িত্বশীল পদের কাউকে হত্যা করা গেলে তাদের শক্তি যে শেষ হয়ে যায়নি তার প্রমাণ দেয়া। পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনীর দায়িত্বশীল একটি সূত্রে শুক্রবার এ তথ্য দেয়া হয়েছে। মুসা নামের নব্য জেএমবির এক শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে ১২ জঙ্গী নেতা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঘাঁটি গেড়েছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে। যে কারণে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনীর সমন্বয়ে পরিকল্পিত সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা অপরিহার্য বলে বিশেষজ্ঞ সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সীতাকু-ে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট রয়েছে তা দেশের বৃহত্তম। এখানে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা রয়েছে। যার সংখ্যা শতাধিক। এছাড়া সীতাকু-ের পরই প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম বিশেষ অর্থনৈতিক জোন। এসব শিল্প কারখানা, অর্থনৈতিক জোন এবং গার্মেন্টস শিল্প ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে দুই সহস্রাধিক বিদেশীর অবস্থান রয়েছে। এর মধ্যে চীনারাই বেশি। গার্মেন্টস শিল্পে রয়েছে শ্রীলঙ্কান নাগরিকদের আধিক্য। শিক্ষার্থী হিসাবে নেপাল, ভুটানের বেশকিছু নাগরিকও রয়েছে। এছাড়াও জাইকাসহ বিভিন্ন দাতা সাহায্য ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত বিদেশী নাগরিকদের আনাগোনা প্রতিনিয়ত। ঢাকায় হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় বেছে বেছে বিদেশী হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার পর সীতাকু-ের এই ঘটনা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। যে কারণে হলি আর্টিজানে যে প্রক্রিয়ায় অভিযান চালানো হয় তা অনুসরণে বিশেষায়িত বাহিনীর সমন্বয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানটি সফলতার সঙ্গে পরিচালিত হয়। এ ঘটনায় এক শিশু এবং ৪ জঙ্গী প্রাণ হারিয়েছে। বিশেষায়িত বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসার নেতৃত্বে ১২ সদস্যের অস্ত্র পরিচালনা ও বিস্ফোরক তৈরিতে বিশেষজ্ঞ ঘাঁটি গেড়েছে গত অক্টোবর থেকে। মাঝপথে এরা পটিয়ার শান্তিরহাটে অবস্থান নিয়েছিল। গোপন সূত্রের খবরে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনার আগেই তারা সটকে পড়ে। মুসার সঙ্গে বাবলা নামের এক জঙ্গী নেতারও খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু তাদের জালে ফেলা যাচ্ছে না। সূত্রমতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি, আনসার আল ইসলাম, হিযবুত তাহ্রীর, ইসলামী সমাজ, আহলে হাদীস নামের জঙ্গী সংগঠনগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ড তৎপরতা চট্টগ্রাম জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের পেশাদারিত্বে অনেকাংশে ঘাটতি থাকায় জঙ্গীদের তৎপরতা দমানো যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে মীরসরাই, সীতাকু-, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও ফটিকছড়িতে এদের অবস্থান নতুন করে সুদৃঢ় করেছে বলে তথ্য রয়েছে। বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণের যে আস্তানা উদঘাটিত হয় এরপরে এ পর্যন্ত ওই ধরনের কোন আস্তানা এখনও খুঁজে পায়নি। অথচ, কক্সবাজার ও বান্দরবানের গহীন অরণ্যে এ ধরনের বেশকিছু ঘাঁটি রয়েছে। অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য আসছে অবাধে। কিন্তু সে তুলনায় ধরা পড়ছে না। চট্টগ্রামকে ঘিরে বিদেশী পরামর্শকদের সুপারিশ অনুযায়ী যে বড় বড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সেখানে বিদেশীদের আনাগোনা বাড়ছে। বিশেষ করে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল, কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র, বাঁশখালীর বেসরকারী তাপ বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, আনোয়ারা ও মীরসরাইতে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন, চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় টানেল নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া চট্টগ্রামে রয়েছে দেশের বৃহত্তম বন্দর। দেশের ৮০ ভাগেরও বেশি পণ্য আমদানি ও রফতানি হয় এ বন্দর দিয়ে। পাশাপাশি রয়েছে, সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের তিনটি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন। এছাড়া দেশের জ্বালানি আমদানি ও সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বেল্টে। যা দেশের অর্থনীতির কোষাগারকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারী বেসরকারী আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের অবস্থান সার্বক্ষণিক। সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গীরা শহর এলাকায় নাশকতার ঘটনা ঘটাতে তৎপর। কিন্তু তাদের অবস্থান থাকে শহরের বাইরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি এড়াতে তারা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থানে কম টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে গোপন তৎপরতা চালায়। সীতাকু-ের জঙ্গীদের দুটি আস্তানার সন্ধান লাভ তাই প্রমাণ করেছে। চট্টগ্রামে ধর্মীয় ব্যানারের অসংখ্য সংগঠন রয়েছে। এদের অধিকাংশই সরকারবিরোধী। আবার বিরোধী ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মধ্যে উগ্রবাদীদের অবস্থান শীর্ষে। এরা বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে যে প্রশিক্ষণ নিয়েছে তার প্রমাণও আছে। মহানগরীর লালখান বাজারে প্রতিষ্ঠিত একটি মাদ্রাসার কর্ণধার নিজে বই লিখে স্বীকার করেছেন, তিনি আফগানিস্তানে মুজাহিদদের দ্বারা প্রশিক্ষিত। বর্তমান সরকার আমলে তাকে কয়েকবার বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেফতার করা হলেও বার বার জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এছাড়া জঙ্গী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সদস্য গ্রেফতার হয়েও আইনের নানা ফাঁকফোকরে বেরিয়ে আসার ঘটনা রয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী তৎপরতা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পর প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বলেছেন, যেখানে জঙ্গী আস্তানা সেখানেই অভিযান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশে জঙ্গী সন্ত্রাস সম্পূর্ণভাবে এখনও নির্মূল হয়নি। এছাড়া জঙ্গীদের বাইর থেকে আসারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। এছাড়া পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক ‘এ্যাসল্ট-১৬’ নামে পরিচালিত এ অভিযানকে সফল দাবি করেছেন। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা অভিযানটিকে দুঃসাহসিক বলে মত ব্যক্ত করেছেন। আর নব্য জঙ্গী নেতা মুসার চট্টগ্রামে অবস্থানের কথা তিনি স্বীকার করেছেন। উল্লেখ্য, ঢাকায় হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গীদের বর্বরোচিত কায়দায় দেশী-বিদেশীদের হত্যা এবং পরবর্তীতে পুলিশী অভিযানে জঙ্গীদের নিহত হওয়ার ঘটনার পর চট্টগ্রামের সীতাকু-ের এ ঘটনা দেশজুড়ে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, বেশকিছু সময় জঙ্গী সন্ত্রাসে জড়িতরা ঘাপটি মেরে থাকার পর ভেতরে ভেতরে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করেছে। যোগাড় করেছে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক। সীতাকু-ের প্রেমতলার ছায়ানীড় নামক ভবনের আস্তানা থেকে যে সমস্ত বিস্ফোরক দ্রব্যাদি উদ্ধার হয়েছে এবং জঙ্গীরা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা নতুন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নাড়া দিয়েছে। সূত্র জানায়, জঙ্গী সংগঠনগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাঁড়াশি অভিযানে টিকতে না পেরে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টকে বেছে নিয়েছে। গেড়েছে আস্তানা। এ ধরনের আস্তানা চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকু- ছাড়াও আরও কয়েকটি স্থানে থাকার খবর রয়েছে গোয়েন্দা সূত্রে। বিশেষ করে পটিয়া, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি। চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের যেমন অবস্থান রয়েছে, তেমনি হেফাজতসহ উগ্রবাদী ধর্মীয় ব্যানারের সংগঠনেরও অভাব নেই। এদের ক্যাডার বাহিনীর সাহায্য ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জঙ্গী সংগঠনগুলো ভেতরে ভেতরে দাপুটে হয়ে উঠছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে এদের যাতায়াত থাকলেও নিজেদের নিরাপত্তায় তারা অবস্থান করে থাকে বিভিন্ন উপজেলার ঘনবসতি এলাকায়। এছাড়া কক্সবাজার অঞ্চল এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ গহীন অরণ্যে এদের রয়েছে আস্তানা। চট্টগ্রামের ফয়’স লেক এলাকায় হামজা ব্রিগেড নামে জন্ম নেয়া জঙ্গী সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সকল নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর এটির অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তৎপর জেএমবি। এক সময় হিযবুত তাহ্রীর তৎপরতাও ছিল প্রকাশ্যে। এখন নেই। কিন্তু এদের আন্ডারগ্রাউন্ড তৎপরতা থেমে নেই। এরা বিভিন্ন নামে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকু-ে গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের দুটি আস্তানার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার পর অভিযান শেষে যা দৃশ্যমান তা উৎকণ্ঠার। এতেই প্রতীয়মান এরা থেমে নেই। যে কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন জঙ্গী তৎপরতা এখনও নির্মূল হয়নি। তার এ উক্তির সঙ্গে সহমত পোষণ করে বিশেষজ্ঞ মহলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামের সন্দেহের প্রতিটি স্পটে সাঁড়াশি অভিযান অপরিহার্য। বিশেষ করে সীতাকু-, মীরসরাই, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া ও হাটহাজারীতে মৌলবাদীদের অবস্থান যেমন রয়েছে, তেমনি তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে জঙ্গী সন্ত্রাসীদের। এসব এলাকাকে ঘিরে বিশেষায়িত বাহিনী দিয়ে পরিকল্পিত সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা অপরিহার্য বলে বিশেষজ্ঞদের মত রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় কোন ধরনের লুকোছাপা না করে জানান দিয়েছেন, মুসা নামের এক জঙ্গী এই অঞ্চলের সমন্বয়ের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই মুসা কে? তার সঠিক পরিচয় জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের কাছ থেকে তার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, এসব জঙ্গীরা চট্টগ্রামে বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটানোর প্রস্তুতি রয়েছে বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। সঙ্গত কারণে, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগেভাগে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এদের অবস্থান দুর্বল করতে হবে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। এতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মেলার পাশাপাশি জঙ্গী সদস্যদের মৃত বা জীবিত অবস্থায় পাওয়াও যাচ্ছে। কিন্তু এসব জঙ্গী সন্ত্রাসী কিভাবে এবং কোত্থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও আর্থিক যোগান পাচ্ছে তার নতুন কোন তথ্য মেলানো যায়নি। ইতোপূর্বে ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন চ্যানেলে আর্থিক যোগানের খবর উদঘাটিত হয়েছে। এ নিয়ে সরকার ব্যাংকিং তৎপরতায় বহু ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এতে অনেকাংশে ব্যাংকিং চ্যানেলে জঙ্গী অর্থায়ন থমকে রয়েছে। কিন্তু অন্য যেসব পথে জঙ্গীদের আর্থিক ও অস্ত্র সহায়তা দেয়া হচ্ছে সে রুট বন্ধ হয়নি। অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এরা নিজেরা দেশীয় পদ্ধতিতে অস্ত্র এবং বিস্ফোরক তৈরিতে পারদর্শী। সীতাকু-ে ছায়ানীড় নামের ভবনে বিস্ফোরক তৈরির যে সকল সরঞ্জামাদি মিলেছে তা পুলিশকে চমকে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় কিভাবে এ ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদের গুদাম থাকতে পারে সে নিয়ে এলিট ফোর্স সোয়াতের পক্ষ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন মহলের দাবি উঠেছে, চট্টগ্রামভিত্তিক জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা অতীব জরুরী। ভাড়াটিয়াদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ থানায় জমা দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলও অত তৎপর নয়। ফলে ছোট ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে জঙ্গীদের নতুন নতুন আস্তানা গড়ে উঠছে। সীতাকু-ের নামারবাজারের সুভাষ দাশ সুরেশের মালিকানাধীন সাধন কুঠিরের নিচতলায় ভাড়া নেয়া জঙ্গীদম্পতিকে সন্দেহ হওয়ায় তিনি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন। এই জাতীয়পত্র সার্চ করে দেখতে পান সেটি ভুয়া। এরপর তার সন্দেহ জোরালো হলে তিনি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালাতে গিয়ে জঙ্গীদম্পতির সঙ্গে তার রীতিমত হাতাহাতি থেকে ধস্তাধস্তি হয়। সুরেশের ভাগ্য ভাল যে, ওই সময় তার সঙ্গে স্ত্রী ও অপর দুই সহযোগী ছিল। অন্যথায় মহিলা জঙ্গী তার সঙ্গে রাখা পিস্তল দিয়ে সুরেশের ওপর যে চড়াও হতো তা নিশ্চিত। এ দম্পতি ধরা পড়ার পর বেরিয়ে আসে নতুন আরেক আস্তানা। যে আস্তানায় অভিযান চালাতে পুলিশের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। আত্মসমর্পণের জন্য দফায় দফায় মাইকযোগে আহবান জানালেও জঙ্গীরা এতে কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত ৪ জঙ্গীই প্রাণ হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের সঙ্গে এক শিশুও মারা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধর্মানুরাগীদের কমতি নেই। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান নিয়মিত। মাঝখানে জঙ্গী সন্ত্রাসীরা স্থান করে নিচ্ছে। নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ নিয়ে এখন থেকে সজাগ হয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করা ছাড়া ভিন্ন কোন পথ নেই বলে মত ব্যক্ত করা হচ্ছে।
×