ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোসাদ্দেকের রঙিন অভিষেক

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৮ মার্চ ২০১৭

মোসাদ্দেকের রঙিন অভিষেক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দারুণ ভাগ্যবানই বলতে হবে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। কারণ, বেশ কয়েকবার টেস্ট দলে থাকলেও অভিষেক হয়নি। কিন্তু ঐতিহাসিক একটি ম্যাচেই হয়ে গেল সেটা। ইতোমধ্যেই ওয়ানডে ও টি২০ খেলে ফেলা এ তরুণ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের এবার টেস্ট অভিষেকও হয়ে গেল। অভিষেক টেস্টে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আট নম্বরে নেমে অর্ধশতক হাঁকানোর কীর্তিও গড়েছেন। সঙ্গী থাকলে হয় তো সেঞ্চুরিটাও পেতে পারতেন। পি সারা ওভালে বাংলাদেশের শততম টেস্টে রেকর্ড হাতছাড়া হয়েছে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমেরও। দেশের শততম টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে শতক হাঁকানো তৃতীয় ক্রিকেটার হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এর অনেক আগেই মাত্র ৫২ রানে সাজঘরে ফিরে গেছেন। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৯২ রানের জুটি গড়েন। বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সেরা জুটি ইমরুল কায়েস-তামিম ইকবালের ২২৭৫ রান। সেই রেকর্ডটাও হাতছাড়া হয়েছে মুশফিক-সাকিবের, তাদের রান ২২৬৫ রানের। মুশফিকুর রহীমের যত বিস্ময়কর বিষয়গুলো শ্রীলঙ্কাকে ঘিরে। তাদের মাটিতেই প্রথম উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল। আবার তাদের বিপক্ষে আগের টেস্টে শুধুই স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হয়ে যান তিনি। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতেই করেন ডাবল সেঞ্চুরি যা বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম। বর্তমান দলে থাকাদের মধ্যে সর্বাধিক ৫৪ টেস্ট খেলছেন মুশফিক এবং শততম টেস্টে আবার দলকে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি উইকেটরক্ষকের দায়িত্বটাও নিতে হয়েছে। কারণ আগের ম্যাচে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব নেয়া লিটন দাস ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গেছেন। অধিনায়ক, উইকেটরক্ষক এবং ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের ঐতিহাসিক এ টেস্টে। তিনটি দায়িত্ব নিয়েই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এমনটা জানিয়েছিলেন আগেই। পি সারা ওভালে তিনি অবশ্য নামলেন ৭ নম্বরে ব্যাট হাতে। ওই সময় ১৯৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল দল। দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে হুট করে বাংলাদেশ ইনিংসে মড়ক শুরু হওয়ার পর নামতে হয়েছিল। তৃতীয় দিনের সকালে সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন। সাকিব আক্রমণাত্মক থাকলেও মুশফিক ছিলেন কিছুটা ধীরস্থির। সেই জুটিটা বাংলাদেশকে ভাল একটি অবস্থানে যাওয়ার পথ করে দিচ্ছিল। সাবধানী মুশফিকই ভুলটা করলেন। জুটিটা ভেঙ্গে গেল। সুরাঙ্গা লাকমালের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বলটিকে মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান। ৮১ বলে ৬ চারে করা ৫২ রানের ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটে। অধিনায়ক হিসেবে দেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বেভান কংডন ও জিম্বাবুইয়ের গ্রায়েম ক্রেমার। ইতিহাসের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সেটা করে দেখানোর সুযোগটা হাতছাড়া করলেন মুশফিক। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা এই ৭ নম্বরে নেমেই হাঁকিয়েছিলেন ২০১০ সালে। এবার দেশের শততম টেস্টে সেটা পারলেন না তিনি। অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে আরেকটি সুযোগ থাকছে তার। মুশফিক-সাকিবের ৯২ রানের জুটিটা অল্পের জন্য পেরিয়ে যেতে পারেনি তামিম-ইমরুলের জুটির রেকর্ডকে। তামিম-ইমরুল জুটি বাংলাদেশ দলকে আজ পর্যন্ত দিয়েছে ২২৭৫ রান। এর মধ্যে ছিল ৪ সেঞ্চুরি ও ৯ হাফসেঞ্চুরি। সামান্য পিছিয়ে থাকা সাকিব-মুশফিক জুটির সংগ্রহ এখন পর্যন্ত ৪ সেঞ্চুরি ও ১৫ হাফসেঞ্চুরিসহ ২২৬৫ রান। মুশফিকের বিদায় ঘটার পরই ব্যাট হাতে আট নম্বরে নামেন মোসাদ্দেক। ২১ বছর বয়সী ময়মনসিংহের এ মেধাবী ব্যাটসম্যান ইতোমধ্যেই দেশের হয়ে ৮ ওয়ানডে ও ৪ টি২০ খেলেছেন। টেস্ট দলেরও বাইরে দিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন, কিন্তু জায়গা পাচ্ছিলেন না। অথচ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে মোসাদ্দেক ৬৮.৮৭ গড়ে যে রান করেছেন তার মধ্যে ছিল ৭ সেঞ্চুরি। সেই সেঞ্চুরিগুলোর মধ্যে ছিল তিন ডাবল সেঞ্চুরি ও দুটি দেড় শতাধিক রানের ইনিংস। অবশেষে শততম টেস্টে সুযোগ পেলেও ব্যাটিং পজিশন ৮ নম্বর হওয়াটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ধারাভাষ্যকাররাও শুরুতেই তার ব্যাটিং দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এমন ব্যাটসম্যান এত পরে নেমেছেন কেন?’ সাকিবের সঙ্গে ১৩১ রানের দারুণ এক জুটি গড়েছেন তরুণ মোসাদ্দেক। যদিও শুরুতেই একটি জীবন ফিরে পেয়েছেন কঠিন এক ক্যাচের সুযোগ দিয়ে। কিন্তু এরপর নিখুঁত একটি ইনিংস খেলেন মোসাদ্দেক। সাকিবের সঙ্গে তার গড়া দীর্ঘ জুটিতেই লিড পেয়ে যায় বাংলাদেশ। সাকিব শতক হাঁকিয়ে ফিরে গেলেও মোসাদ্দেক ছিলেন একেবারে শেষ পর্যন্ত। অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে ৮ নম্বরে নেমে প্রথম অর্ধশতক হাঁকানো ব্যাটসম্যান তিনি। এর আগে ২০০৪ সালে মানজারুল ইসলাম রানা জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ফেব্রুয়ারিতে হারারে টেস্টে করেছিলেন অপরাজিত ৩৫ রান। অর্ধশতক হাঁকানোর পথে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে আরও ৩৩ রান যোগ করেছেন। মিরাজ ফিরে গেলেও থেকেছেন মোসাদ্দেক। একাই শাসন করেছেন লঙ্কান বোলারদের। শেষ পর্যন্ত ১৫৫ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭৫ রানে সাজঘরে ফেরেন রঙ্গনা হেরাথের বলে ক্রিজ ছেড়ে বাইরে এসে মারতে গিয়ে। স্টাম্পিংয়ের শিকার হন তিনি। তখন ক্রিজে মোসাদ্দেকের সঙ্গে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন শুভাশিষ রায়। এ কারণেই দ্রুত রান তুলতে চেয়েছিলেন এ তরুণ। অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশী কোন তরুণের এটি ১৬তম ফিফটির ঘটনা আর ৭৫ রানের অবস্থান সপ্তমে। অভিষেক টেস্টে আট নম্বরে নেমে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে ৭ সেঞ্চুরি আছে। সবমিলিয়ে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস আছে ৪২টি। এর মধ্যে মোসাদ্দেকের ইনিংসটির অবস্থান যৌথভাবে ১২ নম্বরে।
×