ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ধুলায় ঢেকেছে রাসিকের কোটি টাকার ‘সড়ক পরিষ্কার যান’

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৮ মার্চ ২০১৭

ধুলায় ঢেকেছে রাসিকের কোটি টাকার ‘সড়ক পরিষ্কার যান’

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর ধুলা পরিষ্কারের জন্য কোটি টাকায় কেনা অত্যাধুনিক মেশিন (রোড সুইপিং ভেহিকল) চার বছর ধরে অলস পড়ে রয়েছে। এ ভেহিকল দিয়ে নগরীর ধুলা পরিষ্কারের কথা থাকলেও ভেহিকলটিই ঢাকা পড়েছে ধুলাতেই। অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় এ যানটির ঠায় এখন রাসিকের এ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে অচল হয়ে পড়েছে যানটি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) রোড সুইপিং ভেহিকলটি নগরীর রাস্তায় নামানো হয় ২০১২ সালের ১ এপ্রিল। তবে তা শুরু থেকেই কাজে আসেনি। ওই সময় ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে নগর ধুলা পরিষ্কারের যানটি উদ্বোধন করা হলেও এর পর থেকে আর কোন কাজে আসেনি। রাসিক সূত্র জানায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের স্টিপ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয় এ যান। এটি নিয়ে রাসিক পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে প্রবেশ করে। বেশ ঘটা করেই ওই সময় তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সুইপিং ভেহিকল আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কথা ছিল, সুইপিং ভেহিকলটি পানি ছিটিয়ে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করবে। একই সঙ্গে আবর্জনা সংরক্ষণ করে ফেলে আসবে ভাগাড়ে। ২টন আবর্জনা ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ভেহিকলটিতে পানি থাকবে ১ হাজার ৭শ’ লিটার। পানি ছিটিয়ে রাস্তাও পরিষ্কার করে দেবে এ যান। তবে উদ্বোধনের কদিন পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ২০০৯ সালের ১ জুলাই রাত্রিকালীন আবর্জনা অপসারণ পদ্ধতি চালু করে রাসিক। তখন থেকেই এ পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রাতেই রাস্তা ঝাড় দিয়ে আসছেন। আধুনিক সুইপিং ভেহিকলটি সচল থাকলে এ কাজটি মেশিনেই করত। তবে তা আর হয়নি। রাসিকের সুইপিং ভেহিকলটির চালক ছিলেন সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই এর যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল। ফলে পরিচ্ছন্নতা কাজ না হওয়ায় পরে তা আর রাস্তায় নামানো হয়নি। বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাসিকের পরিবহন শাখার সহকারী প্রকৌশলীরাও। রাসিক সূত্র জানায়, এমন যান দিয়ে রাজশাহীর রাস্তা পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। এছাড়া এটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল। ফলে সুইপিং ভেহিকল চালিয়ে যাওয়া রাসিকের পক্ষ সম্ভব হয়নি। এদিকে রাসিকের এ্যাসফল্ট প্ল্যান্টে (যানবাহন রাখার গ্যারেজ) গিয়ে দেখা গেছে, ধুলায় ঢাকা পড়ে আছে অত্যাধুনিক ও দামী সুইপিং ভেহিকলটি। সেখানকার নৈশ্য প্রহরী অজিত রায় জানান, পুরোটাই ধুলায় ঢেকে গেছে যানটি। বছরে তিন-চারবার পরিষ্কার করা হয়। এছাড়া ইঞ্জিন চালু করেও দেখা হয়। তবে পরিষ্কারের কাজে রাস্তায় নামানো হয়নি। চার বছরের বেশি সময় ধরে এ গাড়িসহ আরও কিছু গাড়ি নষ্ট হচ্ছে ধুলায়। জানা যায, ২০১২ সালের ৬ আগস্ট রাসিকের সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে নগরীর নওদাপাড়ায় এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট চালু হয়। ২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্ল্যান্টে এ্যাসফল্ট পেভার, পে-লোডার, টায়ার রোলার, বিটুমিন ডিস্ট্রিবিউটর, হাইড্রলিক ড্যাম্প ট্রাকসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে। চালুর পর থেকেই এখানে ঠাই পেয়েছে রাসিকের একমাত্র সুইপিং ভেহিকলটি। এর আগে সেটি ছিল নগরীর শালবাগান এলাকার রাসিকের গ্যারেজে। রাসিকের পরিবহন শাখার হিসেবে রাসিকের অচল যানবাহন রয়েছে ১৪টি। আর সচল রয়েছে ৫৩টি। এসব যানবহনের একটি বড় অংশ পরিচ্ছন্নতা ও সড়র মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত। রাসিকের প্রকৌশল (যান্ত্রিক) শাখা জানায়, রোড সুইপিং ভেহিকল রাসিক অনুদান হিসেবে পেয়েছিল। তবে যান্ত্রিক ও কারগরি ত্রুটির কারণে এটি চালু রাখা সম্ভব হয়নি। তবে এর ট্রাকটি ডাম্পিং ট্রাক হিসেবে ব্যবহারের কথা ভাবছে রাসিক। কিন্তু এ নিয়ে এখনও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি।
×