ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীদের কারসাজি

গরু খাসির মাংসের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৮ মার্চ ২০১৭

গরু খাসির মাংসের দাম সাধারণের নাগালের বাইরে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এককেজি গরুর মাংসের পরিবর্তে মিলছে পৌনে চারকেজি ব্রয়লার মুরগি। প্রায় সাড়ে পাঁচকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম দিলে পাওয়া যাচ্ছে এককেজি খাসির মাংস। অতিরিক্ত দামে গরু ও খাসির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। আমিষের ঘাটতি পূরণে তাদের এখন ভরসা হয়ে উঠছে ব্রয়লার মুরগি। বাজারভেদে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকায়। আর প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫৫ টাকায়। দামের এই ব্যবধানের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। শীঘ্র দাম কমে আসার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না, বরং মাংস ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ না হলে মূল্য কোথায় উঠে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোক্তারা। সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি বাড়ার জন্যও গরুর মাংসকে দায়ী করা হয়েছে। শুক্রবার পুরান ঢাকার ঠাটারি বাজারে মাংস কিনছিলেন আসলাম আলী। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, গরু ও খাসির মাংস খাওয়া ছাড়তে হবে। দাম বাড়ছে হু হু করে। যে যার মতো মাংসের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন, যেন দেখার কেউ নেই। তিনি বলেন, প্রতিকেজি গরুর মাংস কিনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর খাসির মাংস হাজার টাকায় ছুঁই ছুঁই করছে। এই দাম দিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষ মাংস খেতে পারবে না। মাংসের বাজার কোন নিয়মের মধ্যে নেই বলেও অভিযোগ তার। এদিকে অতিরিক্ত দামের কারণে আমিষের প্রধান উৎস গরু ও খাসির মাংস বেচাবিক্রি কমে গেছে। এতে করে স্বল্প আয়ের পুঁজি নিয়ে যারা মাংস ব্যবসা করছেন তারাও বেকায়দায় পড়েছেন। আগে মহল্লাভেদে ২-৪টা গরুর মাংস বিক্রি হলেও এখন বিক্রি কমে গেছে। এখন চাহিদা অর্ধেকে নেমে এসেছে। মুগদাপাড়ার বড় বাজারের খাসির মাংস বিক্রেতা রায়হান বলেন, ব্যবসা পরিবর্তন করে এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রির কথা ভাবছেন তিনি। কারণ খাসির মাংস বিক্রি কমে গেছে। ওই বাজারের মুরগি বিক্রেতা হাবিব জনকণ্ঠকে বলেন, ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা এখন সবচেয়ে ভাল। বাজারে এসে সবাই এখন মুরগি কিনছে। একটি গরুর মাংসের দোকানের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই যে, দ্যাখেন মাংস ঝুঁলিয়ে বসে আছে ক্রেতা নেই’। এদিকে, চাহিদা বাড়ায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম। শীতকালীন সবজি ফুরিয়ে আসায় দাম বাড়ছে সব ধরনের সবজির। ৫০ টাকার নিচে বাজারে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও কিছু গ্রীষ্মকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি আটা ও ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আলুর দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৮ টাকায়। এছাড়া পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে ২০-২৬ টাকায়। সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি রুই ৩৬০-৪০০ টাকা, কাতলা ৪০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০-২০০, সিলভার কার্প ২০০-২৫০ টাকা, আইড় ৪৫০-৬০০ টাকা, মলা ৩২০-৩০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০-৫০০ টাকা, মেনি মাছ ৩৫০-৪০০, বাইলা মাছ প্রকারভেদে ২৫০-৪০০ টাকা, বাইন মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৪৫০-৮০০ টাকা, পাবদা ৫০০-৬০০ টাকা, পুঁটি ১৮০-২০০ টাকা, শিং ৪০০-৭০০, দেশী মাগুর ৪০০-৭০০ টাকা, শোল মাছ ৩৫০-৫০০ টাকা, পাঙ্গাস ১৪০-১৬০ টাকা ও চাষের কৈ ২০০-২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধনরোধে এ মাছটি ধরার ওপর এখন নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাজারে ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। বেশি দামের আশায় মজুদকৃত ইলিশ এখন বাজারে আনা হচ্ছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দেশী মাছের দামও বাড়তির দিকে রয়েছে।
×