ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তবুও মুক্তির স্বাদ পেল না ওরা

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ১৮ মার্চ ২০১৭

তবুও মুক্তির স্বাদ  পেল না ওরা

২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা। আফ্রিকার নাইজিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর চিবুক থেকে বোকো হারাম জঙ্গী গোষ্ঠী এক আবাসিক স্কুল থেকে ২৭০ জন মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণকৃত মেয়েদের ভাগ্যে কী ঘটে বা কী ঘটে থাকতে পারেÑ তাও আবার বোকো হারামের মতো বর্বর জঙ্গীদের হাতে তা সহজেই অনুমেয়Ñ তারপরও প্রায় তিনশ’ খ্রিস্টান মেয়েকে একযোগে অপহরণ রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে গোটা বিশ্বে। এই প্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে ‘ব্রিং ব্যাক আওয়ার গার্ল্্স’ নামে একটি আন্দোলন শুরু হয়। ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পাওয়ায় বোকো হারাম বুঝতে পারেÑ তারা ‘একটা কাজের মতো কাজ’ করেছে অমূল্য সম্পদ হাতে পেয়েছে। তারা তাদের হাতে আটক মেয়েদের মুক্তির বিনিময়ে বিশাল অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করে। অবশেষে কী পরিমাপ অর্থের বিনিময়ে তারা ছাড় দেয় তা জানা না গেলেও গত অক্টোবরে ২১ জন মেয়ে মুক্তি পায়। নাইজিরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারীর নিজে উদ্যোগী হয়ে তার সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এ কাজটি করেন। তবে কত বড় অঙ্কের বিনিময়ে চিবুকের অপহৃত বন্দীরা মুক্তি পেয়েছে। তা আজও জানা যায়নি। এই বন্দী বিনিময়ের ঘটনায় সরকার ও জঙ্গী দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করে সুইজারল্যান্ড সরকার ও আন্তর্জাতিক রেডক্রস। বন্দীদশা থেকে মুক্ত হওয়ার পর একেকজন ভিন্ন ভিন্নভাবে তাদের বন্দী জীবনের কাহিনী বর্ণনা করে তবে মূল কাহিনী প্রায় অভিন্ন। এদের একজন আইশা এরিমা যার সঙ্গে বোকো হারামের এক কমান্ডারের বিয়ে হয়েছিল তার ভাষ্যমতে তাকে সুরক্ষিত একটি ঘাঁটিতে পৃথক পৃথকভাবে রাখা হয়েছিল। তার সেবায় চিবুক থেকে অপহরণ করে আনা মেয়েকে দাসী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। চিবুকের এসব মেয়ের মুক্তির পর অভিভাবক বা আত্মীয়স্বজন তাদের সঙ্গে ভাল করে কথাও বলতে পারেননি। তারা এদেরকে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য নিয়ে যেতে চাইলে সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তাদের বাড়িতে নিরাপত্তার কোন নিশ্চয়তা না থাকায় তাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হেফাজতে থাকতে হবে। যদি বোকো হারাম বা অন্য কোন জঙ্গীদল হামলা চালায়। তাই সরকার কোন ঝুঁকি নিতে চায় না। জানুয়ারির ৮ তারিখে চিবুক মেয়েদের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে সেফ হাউসে নেয়া হয়। এরপর তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কমই দেখা সাক্ষাত করতে দেয়া হয়েছে- তবে ফোনে সপ্তাহে দুই একবার কথা হয়েছে কারও কারও সঙ্গে। তাই মুক্তিলাভের পর উদ্ধারের আগে প্রিয়জনদের মাঝে যে আনন্দ আবেগ কাজ করত তা ক্রমশ থিতিয়ে এসেছে। চিবুক মেয়েদের নিয়ে গল্পের অবাক হওয়ার মতো অংশ এখনও বলাই হয়নি। চিবুক মেয়েদের কেউ কেউ অপহৃত হওয়ার পর পরই জঙ্গীদের গাড়ি থেকে লাফিয়ে বা গোপনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরে আসে। ২০১৪ সালে তাদের দশজনকে নাইজিরিয়ার একটি অলাভজনক সংস্থা আমেরিকায় নিয়ে যায়। তারা যাতে তাদের দুর্বিষহ অতীত ভুলে আবার তাদের শিক্ষা জীবনে ফিরে যেতে পারে এটিই তাদের আমেরিকা পাঠানোর মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের আমেরিকায় গিয়ে তার দুঃসহ স্মৃতি আরও দগদগে হয়ে ওঠে। কেননা তাদের বিভিন্ন চার্চে গিয়ে বন্দীদশায় তাদের ওপর কী ধরনের নির্যাতন করা হতো তার বিশদ বিবরণ সবিস্তারে বর্ণনা করতে হতো। এবং এটি একদিনের রুটিন নয় এবং এটি অর্থ উপার্জনের একটি উপলক্ষে পরিণত হয়। -নিউইয়র্ক টাইমস
×