ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিসও জানেন না এর ভবিষ্যত!

বিস্মৃতপ্রায় আফগান যুদ্ধ নিয়ে বিপাকে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ১৮ মার্চ ২০১৭

বিস্মৃতপ্রায় আফগান যুদ্ধ নিয়ে বিপাকে যুক্তরাষ্ট্র

আফগানিস্তানকে মনে পড়ে কী? দেশটিতে আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘতম যুদ্ধ কি বিস্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে। যুদ্ধ বিগ্রহের প্রসঙ্গ আসলে বলতে হয়, আমেরিকানদের স্মৃতিশক্তি বড়ই সীমাবদ্ধ। আফগান যুদ্ধ শুরু হয়েছে ২০০১ সালের অক্টোবরে। এ যুদ্ধ অর্জন করেছে বিস্মৃতির অতলে ডুবে যাওয়ার এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণে আফগানিস্তান বিষয়ে কোন উল্লেখ ছিল না। গত মাসে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণদানকালেও বিষয়টির ওপর কোন মন্তব্য করেননি তিনি। নতুন কামন্ডার ইন চিফের জন্য এ যুদ্ধ এক পশ্চাতচিন্তা বা গুরুত্বহীন বিষয়। একই ধরনের ধারণা পোষণ করে ক্যাপিটল হিল। সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোটেল গত সপ্তাহে কংগ্রেসকে বলেছেন যে, আফগানিস্তানে সম্ভবত আরও সৈন্য পাঠানোর প্রয়োজন হবে পেন্টাগনের। এ বিবৃতি সম্ভবত বিস্মিত করেছে রাজনীতিবিদ ও রিপোর্টারদের। কিন্তু এ সংঘাতের দিকে যাদের দৃষ্টি রয়েছে তাদের কাছে এ ধরনের সংবাদ নতুন কিছু নয়। এবং সমস্যাটা এখানেই। এতে কারও কিছু যায় আসে না যেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে জেমস ম্যাটিসের মনোনয়ন শুনানিতে আফগানিস্তান প্রসঙ্গ এসেছে নামমাত্র। ম্যাটিস অবশ্য স্বীকার করেছেন, আমাদের দেশ আফগানিস্তানে এখনও যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। যদিও তিনি যুদ্ধের ভবিষ্যত নিয়ে কিছু বলেননি। আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর জন ম্যাককেইনের মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, আফগানিস্তানে আমরা অত্যন্ত অসুবিধায় রয়েছি। ম্যাটিস প্রায় স্বীকার করতে চান না যে, তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সফলতা ম্লান করে দিয়েছে। এটা প্রায় কারও কাছে জানা ছিল না যে, অনেক সামরিক নায়কদের মধ্যে মহামতি আলেকজান্ডারই প্রথম ব্যক্তি যিনি আফগানিস্তানে কোন যুদ্ধে জয় পাননি। এবারও তাই হয়েছে। নতুন কোন ঘটনা ঘটেনি। কমিটিতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অন্যান্য সদস্য তাদের নিজ দেশে সামরিক কর্মসূচী ও স্থাপনার সমর্থনে ম্যাটিসকে সম্মত করানোর মতো আরও জরুরী বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন। গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সদস্যরা এ জন্য দায়ী। ম্যাটিসের শুনানির পরপরই জেনারেল জন নিকোলসন আফগানিস্তানের অগ্রগতির ওপর রিপোর্ট দেয়ার জন্য কাবুল থেকে ওয়াশিংটন পৌঁছেন। তিনি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন যে, এটা এমন এক অচলাবস্থা যেখানে ভারসাম্য রয়েছে সরকারের পক্ষে। তিনি সাবধানতার সঙ্গে বিজয় বা জয়ের মতো শব্দ ব্যবহার এড়িয়ে যান। যুদ্ধ কখন শেষ হবে সে বিষয়ে কোন ধারণা প্রকাশ করেননি। ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তান বিষয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এক ট্রিলিয়ন ডলারের তিন-চতুর্থাংশের ধার্য করার পরও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অব্যাহতভাবে। স্থানীয় কমান্ডাররা বাস্তবে নেই এমন সৈন্যদের নামে যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহকৃত তহবিল পকেটস্থ করছে। আফগানিস্তানে বিশ্বে দুর্নীতিপরায়ণ দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান রয়েছে। দেশটির পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থ ব্যয় করেছে তা মার্শাল প্ল্যানের অধীন পুরো পশ্চিম ইউরোপ পুনর্গঠনের মোট ব্যয়কে ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও এ দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের কোন আশা দেখা যায় না। আফগানিস্তানের ভবিষ্যত এখন সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে বাইরের সহযোগিতার ওপর দেশটির পরিস্থিতি ক্রমশ মন্দের দিকে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আফগান নিরাপত্তা বাহিনী পুনর্গঠনে ৭ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করলেও দেশের মাত্র ৬৩ শতাংশ এলাকা রয়েছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সরকার গত বছর এ এলাকাগুলো তালেবানের কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে ৮৫০ কোটি ডলার ব্যয় করলেও আফিম উৎপাদন এখানে সর্বকালের উৎপাদনকে ছাড়িয়ে গেছে। গত ১৫ বছরের বেশি সময়ে এখানে প্রায় ২ হাজার ৪শ’ মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। তারপরও আফগান যুদ্ধের ভবিষ্যত অনিশ্চিত রয়ে গেছে। -নিউইয়র্ক টাইমস
×