ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাসায়নিক কারখানার বিরুদ্ধে-

প্রকাশিত: ০৩:২৪, ১৮ মার্চ ২০১৭

রাসায়নিক কারখানার বিরুদ্ধে-

ঢাকাকে নিরাপদ নগরীর মর্যাদায় নিয়ে আসতে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নতুন এক অভিযান শুরু করেছে। পুরান ঢাকার অবৈধ রাসায়নিক কারখানা এবং গুদামের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর এবং জেলা পরিষদ সম্মিলিতভাবে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করছে। পুরান ঢাকার চার শ’রও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক গুদাম সরানোর প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক আইনী প্রক্রিয়ায় এই অভিযানকে নতুন মাত্রাও দিয়েছে। অভিযানের শুরুতেই একটি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে। লালবাগের এক কারখানায় গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়। প্লাস্টিক পণ্যের জন্য অনুমোদন নিলেও কারখানাটিতে তরল দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ছিল, যা যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারত। ভ্রাম্যমাণ আদালত অন্য দুটি কারখানাকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আদেশ দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগে প্রায় ১২৮ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও দগ্ধ হয়েছিল প্রায় শতাধিক মানুষ। জানা যায়, এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে রান্নার সময় ঘটনাস্থলে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়। পরে আগুন আশপাশের কাগজের দোকান, জুতা ও প্লাস্টিক সামগ্রীর কারখানার দাহ্য পদার্থে লেগে ছড়িয়ে পড়ে। নিমতলীর ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর কিছু গুদাম ও কারখানা সেখান থেকে সরানো হলেও পুরান ঢাকার অন্যান্য এলাকা থেকে সেভাবে সরিয়ে ফেলা হয়নি। তার ওপর পুরান ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক ভবনের নিচতলার পার্কিংয়ের স্থানটি ব্যবহার হচ্ছে রাসায়নিক গুদাম হিসেবে। কিছু বাড়িতে রাসায়নিক পণ্যের কারখানাও আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা আগুন লাগার মতো ভয়ঙ্কর কোন দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। জনগণের জানমালের সার্বিক নিরাপত্তার সুরক্ষার তাগিদেই ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এই ধরনের একটি মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ পরিবেশকেও বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। আর এসব সমূহ বিপদের আশঙ্কাকে নির্মূল করার লক্ষ্যে এমন একটি জনহিতকর অভিযান প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পুরান ঢাকায় রয়েছে শত শত রাসায়নিক গুদাম। এসবের মধ্যে বেশ কিছু আবাসস্থলে। অর্থাৎ শুধু কারখানা কিংবা গুদাম নয়, বসতবাড়িতেও এ ধরনের মারাত্মক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে পারে। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত ট্রেড লাইসেন্স আছে মাত্র আড়াই হাজার গুদাম কিংবা কারখানার। বাকিগুলো অনুমোদনহীন অবৈধ। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক ব্যবসা পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঢাকাকে নিরাপদ নগরী হিসেবে সুরক্ষা দিতে সংঘবদ্ধভাবে যে অভিযাত্রায় নেমেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এ অভিযান চলতে থাকবে যতক্ষণ না ভয়ঙ্কর গুদাম এবং ক্ষতিকর কারখানাগুলোকে সঠিকভাবে সরানোর প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে। সরানো কারখানা কোথায় স্থানান্তর হবে সে বিষয়ে মেয়রের অভিমতÑ এখানে সিটি কর্পোরেশনের কিছুই করার নেই, মালিক পক্ষই এ ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে জনস্বার্থে তা নিশ্চয়ই সফল হবে এই প্রত্যাশা করা যায়।
×