ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১৭ মার্চ ২০১৭

কবিতা

১৭ মার্চ ॥ আজ আমাদের জন্মদিন- বাদল আশরাফ ১৭ মার্চ আজ আমাদের জন্মদিন- আমার মাতা এবং পিতার জন্মদিন আজ আমারও জন্মদিন! ১৭ মার্চ আজ আমার বোনের জন্মদিন আমাদের স্বপ্ন এবং চেতনার জন্মদিন বাংলা এবং বাঙালীর জন্মদিন! ১৭ মার্চ ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...’ জাতীয় সঙ্গীতের জন্মদিন! ১৭ মার্চ লাল-সবুজ পতাকার জন্মদিন আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্মদিন আমাদের অস্তিত্বের জন্মদিন! ১৭ মার্চ আজ আমাদের সকলের জন্মদিন কেননা অজর এই দিনটি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মদিন! ** পাশ ফেরা আড়াল রহমান মুজিব খুলে নেবো চোখের স্বাদ যদি নদী জলে ডুবে যায় অস্তকাল, শোকচিহ্নের মতো ফুটতে থাকে আড়িপাতা কালো, পাপের প্রহর। বলা হয়নি কিছু কারণ ভাষারা ডুবেছিল প্রকাশহীন কলিতে। কটা প্রেম একদিন ডুবে যাবে জীবনের নুনঘামে, এই ভেবে, মেঘনার নাভিমূলে তৃষিত লালন রেখে দীর্ঘশ্বাস ছুঁড়েছি কালিদাস মেঘে। তবুও শেষ হয়নি গুহার আদিম নীরবতা। একটি আড়াল শুধু রাত্রির মতো আমায় ভালোবেসে খুলে নিয়েছে সোনার বাকল। মিথ্যে ফাগুন একে একে রং পাত্র পূর্ণ করে নিজকে দেখেছি রক্তিম গোলাপ। তবু চন্দনে ফিরে আসেনি পাপপোড়া প্রহর, মূর্ত আড়াল। ** আদিম আকর্ষণের মোহে অমূল্য সরকার অমল নিঃসঙ্গ এ সাপুড়ের বুকে উজাড় করে দাও ঢেলে হিংস্র বিষের ছোবল; বিষধর শঙ্খিনীর মতো ছাড়াও খোলস। তবুও কী আদিম আকর্ষণের মোহে টেনে নেই বিষটুকু দেহ থেকে দেহে। ওগো, শঙ্খিনী, যতো ইচ্ছে দাও বিষ ঢেলে হবো মৃত্যুঞ্জয়ী ঐ বিষের ছোবলে! ** আহ্বান সৈয়দ শরীফ যদি পারো এসব দিও, পারলে তুমি আমায় কাছে টেনে নিও। খুব আশাতে থাকবো আমি; প্রাণটা খুলে একটু সুখের পরশ দিও। এই প্রতীক্ষা করবো আমি; চাঁদনী রাতে জ্যোৎস্না-স্নানে সঙ্গে নিও, অঁাঁধার হলে, ভয় কী তাতে? আসার সময় মোমটা তুমি সঙ্গে নিও, মোম জ্বালিয়েই কাটাবো রাত একটুখানি আমার চোখে চোখ রাখিও; লাগবে ভালো । রোজ সকালে এই কপালে চুমু দিও, খুব খুশিতে থাকবো আমি চুমুর সাথে সোহাগমাখা প্রেমও দিও, বাঁচবো আমি সে প্রেম নিয়ে। যেখানেই যাও এই আমাকে সঙ্গে নিও, ভুল কোরো না; নয়ত তুমি প্রাণটা কেড়ে মরণ দিও, মাটি হবো; ‘রুদ্র’ ভেবে আমার কাছে চিঠি দিও, আকাশে নয়, কবরটাতেই যতœ করে গেড়ে দিওÑ পড়বো আমি সেই চিঠিটা; তুমিও তা কষ্ট করে জেনে নিও। এই আমিও তোমার কাছে চিঠি দেবোÑ কাগজে নয়, ঐ আকাশে তারার মাঝে; রাত্রি হলে তুমি সেটা দেখে নিও। ‘ভাল আছি, সুখেই আছি’ এই কথাটা চিঠির খামে লিখে দিও, খুশি হবো জানলে সেটা; পারলে তুমি এই আমাকে এসব দিও; এসব দিও... ** কানপুর কতদূর? মৌসুম মনজুর কফিনের কাপড়ে কোন পকেট থাকে না। এ কথা আপনি ভালই বোঝেন যমুনা প্রসাদজী, চিতার আগুন ধনী গরিবের পার্থক্য করে না তাই তো আপনার ভিটায় ওঠেনি লাফাঙ্গা অট্টালিকা। আপনি না চিনলেও আমরা সুইস ব্যাংক চিনি। সেকেন্ড হোম : মালয়েশিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড। বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি আনস্মার্ট। তাই তো শ্যাওলা পড়া দু’রুমেই সেঞ্চুরি করে ফেললেন অথচ সুইচ ব্যাংকের ভল্টে ভারতের শত সহস্র রুপী অবৈধ সংগমে লিপ্ত। আপনি চেনেন বোধহয়, এপিজে আবুল কালাম। আপনার মতোই এ্যানালগ, ভেজিটেরিয়ান সাড়ে তিন হাতের বাংলোতে এখন কি দিব্যি রয়েছেন। প্রসাদজী মাফ করবেন, আমি সন্দিগ্ধ আপনি আনস্মার্ট নাকি ওভার স্মার্ট? রুপী নিয়ে কত বিড়ম্বনাই না হলো। চোর ছ্যাচ্চর, খিস্তি খেউর তুলকালাম কা-। অথচ আপনি ড্যাম কেয়ার; সাক্ষাত ভগবান। এখানে অসম্ভব। আপনি জানেন সাধু সন্ন্যাসী আর লাখোপতির জন্য বড়ই উর্বরা এ জনপদ। তাই তো কোটিপতির হয়েছে বাম্পার ফলন। জনগণ বড় রাজনীতির ভূূখ। একবার উঠলে নামে না, না নামলে ছাড়ে না। ফিরিঙ্গি বাতাসে উড়ে হাইব্রিড মিছিল, ইশারায় বন্ধ হয় চার চাক্কা। তবুও রাস্তা বন্ধ করে ফুল ছিটিয়ে বলি : মফিজ ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। উত্তর প্রদেশ কানপুর। প্রসাদজী, কত দূর? ** অসম্পূর্ণ সত্য স.ম. শামসুল আলম যত কিছুই বলো না কেন আমি কখনো বলিনি কোনো অঘ্রাত ফুলের সাথে নিবিড় সম্পর্ক ছিল অথবা কখনো তাকে ভালোবেসে ঘ্রাণ সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছিলাম কখনো বলিনি রাজপথ নিজের দখলে নিতে রক্তপাত দেখেছি অথবা রক্ত মেখেছে আমার হাতে যদিও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ দেখেছি কিন্তু মানুষের রক্ত লাল নাকি নীল জানা নেই যত কিছুই বলো না কেন আমি কখনো শুনিনি ভোরের আযান অথবা কুয়াশাভেজা পাখিদের অনুকম্পা গান কখনো শুনিনি দুরন্ত বাগানে ঝরা পাতা পড়ার মৃদু শব্দ আবার কখনো ঝুলে থাকা পাতাকে নিষেধ করিনি ঝরতে ঘুমন্ত মানুষ এমন দায়িত্ব কেন নিতে যাব কখনো নদীর কাছে গিয়ে বলিনি তুই আমার দখলে কখনো সিদ্ধহস্ত ছিলাম না আমার আসলে জানা নেই নদীর তরল জল দুখী নাকি সুখী যত কিছুই বলো না কেন আমি কখনো সত্য বলিনি মিথ্যেও বলিনি অবশ্য আমার বলা না-বলায় কিছু এসে যায় না আমার শোনা না-শোনায় কিছু এসে যায় না আমার দেখা না-দেখায় কিছু এসে যায় না বিশ্বাস করো আমি কোনো নারী বা কিশোরীকে সচক্ষে ধর্ষিত হতে দেখিনি কখনো তবে এসব ব্যাপারে ভীষণ ব্যথিত। ** মহেশখালীর মুখ মিজান মনির সমুদ্রের গর্জন দূর পাহাড়ে প্রতিধ্বনি তুলে ছড়িয়ে পড়ে তামাম লোকালয়ে- জেলেদের ছোট্ট নৌকো দোলখায় ঢেউয়ের পরতে পরতে, তেমনি সারাক্ষণ দোলা দেয় হৃদয়ে আমার মহেশখালীর চিহ্ন। পাহাড়ের সব নীল অশ্রু ঝর্ণাধারার মতো গড়িয়ে পড়ছে নীচে মিশে যেতে সমুদ্রের সাথে। তদ্রুপ অশ্রু ঝরে গড়াগড়ি করে বুকে আমার শুধু মহেশখালীর রুপের লাবণ্যময়ী ভালবাসার টানে। পাহাড়ের শুষ্ক ঠোঁটে আনমনা হয়ে খেলা করে মেঘের ছায়া, সূর্যাস্তের ক্লান্ত আলো সমুদ্রের গর্জনের সাথে মিশে যায় রুপালী সৈকতের কাছে। এমনি আনমনা থাকে দু’নয়ন আমার ভাসে শুধু মহেশখালীর মুখ। ** জোসনার অপেক্ষায় মাহমুদ নূপুর এই শহরে জোসনা নামেনি অনেক দিন, এই শহরের আকাশে ফোটেনি তারার ফুল। লেখা হয়নি কোন প্রেমের কবিতা। কোন বাড়ির ছাদে বসেনি আর গানের আসর, ভেসে আসেনি সেই প্রিয় সুর জোসনা রাতে সবাই গেছে বনে। কোন সন্তানসম্ভবা নারী, তার জীবন সঙ্গীর হাতে হাত রেখে দাঁড়ায়নি বারান্দায়, খোঁজেনি সাদা ফকফকে চাঁদের মধ্যে অনাগত সন্তানের মুখ। এই শহরে জোসনা নামেনি অনেক দিন। বাতাসকে মাতাল করেনি কোন প্রিয় ফুলের গন্ধ। কোন প্রেমিক যুগল বসেনি লেকের পাড়ে, কারণ, লেকের পানিতে আর জোসনা রং খেলা করে না। লেকের পানিতে এখন বিষাক্ত কেমিক্যালের গন্ধ। এই শহর এখন নিমজ্জিত অমাবস্যার নিকষ কালোয় অন্ধকারে, এই শহরে শুধু ভেসে আসে মানুষের পচে যাওয়া বিবেকের গন্ধ। এই শহর ছেয়ে গেছে স্বার্থের, আগুনে পোড়া সম্পর্কের কালো ধোঁয়ায়। এই শহরের মানুষ তাই সুন্দরকে কালো, আর কালোকে সুন্দর ভেবে ভুল করছে হরহামেশায়। এই শহরে জোসনা নামেনি অনেক দিন। কিন্তু এই শহরের মানুষ জানে, নিশ্চিতভাবে জানে এই শহরে একদিন তুমুল জোসনা নামবে। জোসনার আলোয় হেসে উঠবে পুরো শহর। জোসনার আলোয় ভেসে যাবে সকল অন্ধকার। এখন শুধু অপেক্ষার পালাÑ কারণ এই শহরে জোসনা নামেনি অনেকদিন। ** ২৫শে মার্চের কালো রাত্রি জোবায়দা আক্তার চৌধুরী একাত্তরের ২৫ শে মার্চ কাল রাত্রি সেদিন ছিল বুদ্ধিজীবীরা মৃত্যু পাড়ের যাত্রী। পথে ঘাটে লাশের মিছিল কার্ফিউতে দেশটা শিথিল। গণহত্যার এক নোংড়া খেলা এ যেনও অগণিত লাশের মেলা। পাক সেনারা মেতেছে রক্তের হলি খেলায় শকুনিরা হানা দিয়েছে নিশীত রাত্রি বেলায়। শিউরে ওঠে গা কাঁদছে দুখিনি মা। লাশের গন্ধ আকাশে বাতাসে দূরে কান্নার রোল ভেসে আসে। নিস্তব্ধ হয়েছে আমার এই দেশ ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে মুক্ত হলো আমার স্বদেশ। ** নিয়তির পরিহাস আদ্যনাথ ঘোষ করুণ বিষাদের অন্ধকার নেমে এলো দিগন্তজোড়া ভাবনার আকাশে বড় তপ্ত নিঃশ্বাস-যাকে স্বপ্ন বলে জানি সে তো আজীবনের দীর্ঘশ্বাস। এখানে ধূসর বিকেলের মরীচিকা রং ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুবিন্দু এখানে সাপের বিষাক্ত ছোবলে মরণের আহাজারি। যে বিষাদ ভেসে এলো গগনে নিয়তি তার হিসেব রাখে না দুঃখের পরিমাপ রাখে না দৃষ্টির তীক্ষèতাও শুধু অবাক হয়ে দেখি, বিষাদে-বিষাদে অশ্রু ঝরে পড়ে হিমালয়ের অশ্রু।
×