ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ু দূষণ রোধে

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৭ মার্চ ২০১৭

বায়ু দূষণ রোধে

বায়ু দূষণজনিত কারণে প্রতিবছর ৩০ লাখের মতো মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। এর ফলে পরিবেশগত কারণে এই দূষণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন এই বায়ু দূষণ কিভাবে কমানো যেতে পারে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর একটি সমাধান হতে পারে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো। কারণ গাছপালা এসব দূষণ শুষে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেস্ট সার্ভিসের শীর্ষস্থানীয় একজন বিজ্ঞানী ড. ডেভিড নোভাক এ বিষয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, শহরাঞ্চলে গাছপালা বায়ু দূষণের মাত্রা এক শতাংশ হলেও কমিয়ে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্র ১ শতাংশ কমানো গেলেও সামান্য এই ব্যবধানই বড় রকমের স্বাস্থ্য সুবিধা বয়ে আনতে পারে। গাছপালা কি আসলেই বায়ু দূষণ কমাতে পারে? পারলেও কতখানি? ড. ডেভিড নোভাকের ওপরে গবেষণা করছেন, তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। তিনি বলেন, ‘শহরাঞ্চলে গাছপালা বায়ু দূষণের মাত্রা গড়ে প্রায় এক শতাংশেরও কম কমাতে পারে। এটা অবশ্য নির্ভর করে দূষণকারী উপাদানগুলোর ওপর। তবে গবেষণায় আমরা বেশি উন্নতি যেটা দেখেছি সেটা হলো প্রায় ১৫ শতাংশ।’ উন্নতির এই মাত্রা খুবই কম। তারপরেও মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এই উন্নতি বড় রকমের ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ‘এ বিষয়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই আমরা গবেষণা চালিয়েছি। বিশেষ করে ৪৮টি অঙ্গরাজ্যে। গবেষণায় আমরা দেখেছি এসব গাছপালা প্রায় পৌনে দু’কোটি টন বায়ু দূষণ শুষে নিতে পারে। সামগ্রিকভাবে আমরা দেখেছি এর ফলে গোটা দেশে স্বাস্থ্য খাতে যে পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব সেটা হচ্ছে প্রায় সাত শ’ কোটি ডলার। এছাড়াও এসব গাছপালার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে সাড়ে আট শ’র মতো মানুষের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয়,’ বলেন তিনি। তবে এই দূষণের মাত্রা সব গাছই সমান পরিমাণে কমাতে পারে না। কোন কোন গাছ এই দূষণ শুষে নেয়ার ব্যাপারে অনেক বেশি দক্ষ। এ রকম একটি গাছের নাম কনিফার। এর নরম ও আঠালো পাতার কারণে এটি সহজেই দূষণ শুষে নিতে পারে। বড় বড় গুল্মগাছ কমাতে পারে বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ, এগুলো শুষে নিয়ে এবং এই গ্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে। বিজ্ঞানী স্টিফেন নোভাক বলেন, ‘দিনের বেলায় এই গাছের পাতা বাতাস থেকে ক্ষতিকর গ্যাস শুষে নেয়। সেখান থেকে নির্গত হয় জলীয় বাষ্প। ফলে বাতাসের তাপমাত্রা কমে যায়। বায়ু দূষণের মাত্রা কতটা তীব্র হবে সেটা পরিবেশের তাপমাত্রার ওপরেও নির্ভর করে।’ আবার কিছু কিছু গাছ আছে যেটা বায়ু দূষণের ওপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। যেমন ওকগাছ থেকে এমন এক উপাদান নির্গত হয় যা তৈরি করে বায়ু দূষণকারী ওজন। ফলে কমে যেতে পারে বায়ু দূষণ কমাতে এই গাছের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। শুধু তাই নয়- গাছপালা কিন্তু বায়ু দূষণের মাত্রাকে আরও বাড়িয়েও দিতে পারে যদি গাছ ভুল জায়গাতে লাগানো হয়। যেমন আপনি যদি এমন কোন রাস্তা দিয়ে যান যার ওপর শামিয়ানার মতো গাছপালা ছড়িয়ে আছে সেখানে দূষণকারী গ্যাস আটকা পড়ে থাকতে পারে। ফলে বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোথায় গাছ লাগাব আর কোথায় রাস্তা বানাব সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করারও প্রয়োজন রয়েছে। সূত্র : বিবিসি
×