ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় দিনেই এলোমেলো বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৭ মার্চ ২০১৭

দ্বিতীয় দিনেই এলোমেলো বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দিনেশ চান্দিমালের ব্যাটিং নৈপুণ্যের পর লাকশান সান্দাকানের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয়দিনেই এলোমেলো হয়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে করা শ্রীলঙ্কার ৩৩৮ রানের জবাব দিতে গিয়ে দ্বিতীয়দিন শেষে ৫ উইকেটে ২১৪ রান করেছে। এখনও ১২৪ রানে পিছিয়ে রয়েছে মুশফিকবাহিনী। শ্রীলঙ্কা প্রথমদিনে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রানে দিন শেষ করে। দিনেশ চান্দিমাল ৮৬ রানে ও রঙ্গনা হেরাথ ১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। প্রথমদিনটি বাংলাদেশ নিজেদের করে নিতে পারে। দ্বিতীয়দিনে বাকি ৩ উইকেটে শ্রীলঙ্কা আরও ১০০ রান যোগ করে। চান্দিমাল ১৩৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন। হেরাথ ২৫ রানে আউট হলেও সুরঙ্গ লাকমাল ৩৫ রান করেন। তাতেই শ্রীলঙ্কা অনেকদূর এগিয়ে যায়। শ্রীলঙ্কাকে তো অল্প রানে বেঁধে ফেলা গেলই না, চান্দিমালকেও আটকাতে পারল না বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরির সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে আট ইনিংসে ব্যাট করে চতুর্থ সেঞ্চুরি করে ফেলেন চান্দিমাল। এরপর ব্যাট করতে নেমে তো সান্দাকানের ঘূর্ণির সামনে যেন ব্যাটসম্যানরা দিনের শেষ মুহূর্তে অসহায় হয়ে পড়েন। দিনের চার ওভার বাকি থাকতে সব এলোমেলো হয়ে যায়। সুন্দর চলছিল ব্যাটিং। ১৯২ রানে ২ উইকেট ছিল। সেখান থেকে আর ৬ রান যোগে ইমরুল কায়েস, ‘নাইট ওয়াচম্যান’ হিসেবে নামা তাইজুল ইসলাম ও সাব্বির রহমান রুম্মন আউট হয়ে যান। তাতেই বাংলাদেশ বিপদে পড়ে যায়। এরপর সাকিব আল হাসান (১৮*) ও মুশফিকুর রহীম (২*) মিলে দিনটি শেষ করেন। আজ তৃতীয়দিনে সাকিব ও মুশফিককে ব্যাটিংয়ে হাল ধরতে হবে। না হলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ বিপত্তিতেই পড়ে আছে। অথচ শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হওয়ার পর দিনের দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শুরু হয়। দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান। যেই দল ৯৫ রানে পৌঁছায় তামিমকে এলবিডাবলিউ করে দেন লঙ্কান অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ। ১ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি তামিম। এরপর সৌম্য ও ইমরুল মিলেও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৩০ রান পর্যন্ত টেনেও নিয়ে যান। এমন সময়েই সৌম্য (৬১) বোল্ড হয়ে যান। টানা তিন ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করেন সৌম্য। সান্দাকানের বলে সৌম্য আউট হওয়ার পর সাব্বির রহমান রুম্মন ব্যাট হাতে নামেন। বোঝাই যাচ্ছিল, উইকেট পড়লেও যেন গুরুত্বপূর্ন উইকেট তৃতীয়দিনের জন্য থাকে এজন্যই টিম ম্যানেজমেন্ট মুশফিক কিংবা সাকিবকে ব্যাটিংয়ে পাঠাচ্ছেন না। ইমরুল ও সাব্বির মিলেও ভাল ব্যাটিং করছিলেন। দুইজন মিলে দলকে ২০০ রানের কাছাকাছিও নিয়ে যান। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল দিনটি এ দুইজনই শেষ করবেন। তাতে করে দ্বিতীয় দিনটিও বাংলাদেশেরই হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই সব উল্টা-পাল্টা হয়ে গেল। যেই দুইজন মিলে ৬২ রানের জুটি গড়লেন, দল ১৯২ রানে গেল; একাধিকবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া ইমরুলকে (৩৪) এলবিডাবলিউ করে দেন সান্দাকান। সঠিক সময়েই যেন লঙ্কানদের ব্রেক থ্রু এনে দেন। এ এক উইকেট হারিয়ে তো ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। পরের বলেই তাইজুল ইসলামকেও এলবিডাবলিউ করে দিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়ে তোলেন সান্দাকান। কিন্তু সাকিব ব্যাট হাতে নেমেই বাউন্ডারি হাঁকান। আর ৬ রান যোগ হতেই বাজে এক শটে সাব্বিরও (৪২) সাজঘরে ফেরেন। এরপর সাকিব যেন তাড়াহুড়ো করে ব্যাটিং করতে থাকেন। টি২০ স্টাইলে ব্যাটিং করতে থাকেন। সবার ভেতর একটা ভয় ধরিয়ে দেন। বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। এরমধ্যে ক্যাচ আউট হওয়া থেকেও বাঁচেন। শেষ পর্যন্ত ১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন সাকিব। তার সঙ্গে মুশফিকও (২*) ব্যাটিংয়ে আছেন। আজ তাদের ওপরই সব দৃষ্টি থাকবে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সান্দাকান ঝলক দেখান। দ্বিতীয়দিনেই ৩ উইকেট তুলে নেন। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও দেখান ঝলকানি। তিন উইকেট তুলে নেন। এরমধ্যে চান্দিমালের উইকেটটি তিনিই শিকার করেন। যদিও ততক্ষণে ৩০৫ রান করে ফেলে শ্রীলঙ্কা। স্কোরবোর্ড মজবুত করে ফেলে। প্রথমদিনের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, ৩০০ রানও করতে পারবে লঙ্কানরা। অথচ সেই স্কোর ৩৩৮ রানে গিয়ে ঠেকল। অষ্টম উইকেটে চান্দিমাল-হেরাথ ও নবম উইকেটে চান্দিমাল-লাকমাল উভয় জুটিই ৫৫ রান করে যে স্কোরবোর্ডে যোগ করে, সেটিই শ্রীলঙ্কাকে এতদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। আর ৩০০ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় করা চান্দিমালের অসাধারণ ইনিংসটি তো রয়েছেই। এ ইনিংসে শ্রীলঙ্কা বড় স্কোরই গড়ে। এরপর সান্দাকানের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয়দিনের শেষ মুহূর্তে এসে এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশ।
×