ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িকীকরণের বিষয়ে কথা বলতে নারাজ সচিব

প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৭ মার্চ ২০১৭

প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসকে বড় সমস্যা হিসেবে স্বীকার করে বলেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন। এদিকে উগ্র সাম্প্রদায়িক পাঠ্যবই সংশোধন নিয়ে কথা বলতে রাজি হলেন না শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আদালতে একটি রিট হয়েছে। এ জন্য আমরা কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগামীতে পরিবর্তন হতে পারে। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার খবর জানাতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন। মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। গত ১৩ ও ১৪ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চ উপজেলা পর্যায়ে, ২২ মার্চ জেলা পর্যায়ে, ২৩ মার্চ ঢাকা মহানগরী পর্যায়ে ও ২৮ মার্চ বিভাগীয় পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। চারটি বিষয়ে মোট ১২ জন প্রতিযোগীকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হবে। তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা, একটি সনদ ও বিদেশে শিক্ষাসফরে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত বিজয়ীদের পুরস্কার দেবেন। শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশের সব উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনটি গ্রুপে (৬ষ্ঠ-৮ম, ৯ম-১০ম, একাদশ-দ্বাদশ ও সমমান) গত ১৩ ও ১৪ মার্চ ভাষা ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মেধাবীদের নির্বাচন করা হয়েছে। তারা আগামী প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। দেশব্যাপী অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকা ছেলেমেয়েদের দৃষ্টির মধ্যে নিয়ে আসা ও তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্যই এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে পুলিশ এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে। সে অনুযায়ী এখন ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাঠ্যপুস্তকে ভুলত্রুটির বিষয়ে করা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাঠ্যবইয়ে ভুল ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে এ সময় কথা বলেন সচিব। এক প্রশ্নের জবাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, পাঠ্যবইয়ে ভুলের সংশোধনী দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িকরণের বিষয়ে আদালতে একটি রিট হয়েছে। এ জন্য আমরা কিছু বলতে চাচ্ছি না। পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আগামীতে পরিবর্তন হতে পারে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইনস্টিটিউট করার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তাদের দাবি পূরণ করা কঠিন হবে। শিক্ষার বিষয়বস্তু ভবিষ্যত বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য সমপরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। তারা ইনস্টিটিউটের যে দাবি করছে, এটা বললেই আমরা করে দিতে পারব? গার্হস্থ্য কলেজের দাবি এখন তাদের ইনস্টিটিউট করতে হবে। ইনস্টিটিউট করতে আমাদের এখান থেকে নির্দেশ দিলাম আর হয়ে গেল? ইউনিভার্সিটির একটা ব্যাপার আছে। ছয় মাস আগের কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে দিয়েছি, তারা সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে, তাদের যে দাবিÑ সেটা কি বললেই করে দিতে পারব? সবকিছু করে রাখলাম, পরে একসময় বিবেচনা করে আমরা দেখব, তারপর জানাব। ‘খাতা না দেখেই চূড়ান্ত ফল দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’Ñ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, আমাদের বিশ্বাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমন কাজ করতে পারে না। সেটি একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসির নেতৃত্বে চলছে। পরীক্ষার বিষয়গুলো অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় জানিয়ে সচিব বলেন, এখানে শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট থাকেন। এমনও হতে পারে, আগুনে খাতা পুড়ে গেল, তখন ওই খাতাগুলোর পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপরও এ বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখব। এমপিওভুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদের আল্টিমেটাম ॥ এমপিওভুক্তিসহ অন্যান্য দাবি আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে না মানলে ৭ মে থেকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচীতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদ। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সব দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান পরিষদের নেতারা। পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মিলন কুমার ঘোষাল বলেন, আমরা শিক্ষকরা স্বাধীনতার পক্ষে। আমরা জানি, বর্তমান সরকার শিক্ষকবান্ধব সরকার। জাতির মেরুদ- হয়েও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত আমাদের শিক্ষকরা। দুই দফা দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, ৫ হাজার ২৪২টি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে সরকারীকরণ করতে হবে। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বর্তমান সরকারের এটাই মোক্ষম সময়। সরকারপ্রধান শিক্ষকদের ভালবাসেন। অবশ্যই তিনি শিক্ষকদের সুখ-দুঃখ দেখবেন এবং পাশে থাকবেন। তিনি বলেন, জোট সরকারের আমলে আমরা শিক্ষকরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে বলে আশা করছি। পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাম প্রসাদ দাস সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সহ-সভাপতি আমিনুজ্জামান জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক ওসমান গণি প্রমুখ।
×