স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যে কোন চুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিলে মাথা উঁচু করে বীরের বেশে ভারতে যাবেন। সেখানে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে যে চুক্তি জনগণের জন্য প্রয়োজন সেটাই করবেন। এটা তো একতরফা বিষয় নয়, উভয় পক্ষের সম্মতি লাগে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁও সড়ক ভবনে সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির দুই দিনব্যাপী ১৪তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকা এবং রাশিয়ার সঙ্গে অনেক দেশের সামরিক চুক্তি আছে। গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি আছে। এটা নিয়ে গেল রে, গেল ইন্ডিয়া হয়ে গেল- এমন অপপ্রচার এবং ভারতভীতি থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে।
ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোন চুক্তিই গোপন থাকবে না। এই তথ্যপ্রবাহের বিস্ফোরণের যুগে কিছুই গোপন থাকবে না। আর কিছু গোপন করার দরকার নেই। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। তাই জনগণের সামনে কোন কিছু গোপন করা আমরা সমীচীন মনে করি না। সামরিক হোক, অসামরিক হোক। যে কোন চুক্তি জাতীয় স্বার্থ সার্বভৌমত্ব রেখে করতে আপত্তি কোথায়? তিনি আরও বলেন, ভারত আমাদের জন্য সংবেদনশীল। ভারত ইস্যু এলেই আমাদের দেশের একটি মহল গেল রে গেল বলে চিৎকার শুরু করে দেয়। সব ভারত হয়ে গেল। আমাদের দেশে অহেতুক ভারতভীতি কাজ করে। যার বাস্তবের সঙ্গে কোন সঙ্গতি নেই।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনার স্বাধীনচেতা নেতৃত্বের কারণে ৪১ বছর পর ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হয়নি। দেশের মানচিত্রে ১০ হাজার একর যুক্ত হয়েছে। যাতে জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন হয়নি।
ভারত বাংলাদেশের দুঃসময়ের বন্ধু উল্লেখ করে কাদের বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব হবে। এতে কেউ বড়, কেউ ছোট নয়। যারা একদিন উঁচু গলায় বলেছিল, বঙ্গবন্ধু ভারতের সঙ্গে গোলামির চুক্তি করেছে। যদি গোলামির চুক্তি করতেন, তাহলে ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর আমরাই ক্ষমতায় থাকতাম। ভারত ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
প্রকৌশলীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই রাস্তায় সমস্যা দেখা দেয়, ওভারলোডের কারণেও অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। বর্ষা এলেই সারাদেশের রাস্তাগুলোর খারাপ অবস্থা দেখা দেয়। অনেক রাস্তা ফান্ডের অভাবে মেরামত করতে পারি না। বাজেট যেটুকু আসে তাতে যতটুকু প্রয়োজন তা প্রাপ্তির তুলনায় কম। যে কারণে বর্ষার আগেই অনেক রাস্তার কাজ শেষ করতে পারি না। প্রকৌশলীদের অনুরোধ করব, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে, তারপরও প্রতিবছরই বাজেট বাড়ছে।
বিভিন্ন প্রকল্প কাজের বাস্তবায়ন বিলম্ব হওয়ার দাবি প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাজের বিল কিছুদিন বিলম্বিত হতে পারে। আমি আপনাদের বলব, বিল দেরি হলেও কাজটা যাতে কোনভাবে বিলম্বিত না হয়। কারণ এতে বহু মানুষের দুর্ভোগ হয়। রাস্তাগুলোর কাজ মেরামত করে ফেলবেন। কাজের মানটাও বজায় রাখবেন। বর্ষার আগেই আপনারা রাস্তাগুলো সচল রাখবেন। এ দেশের গরিব মানুষের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়, রাস্তা তৈরি করি।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি আপনারা সারাদেশের দখল হওয়া রাস্তাগুলো উদ্ধার করবেন। এছাড়া এলাকার উন্নয়নকাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন। এখানে কোন মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় নেতাদের প্রভাবিত হয়ে কাজ করবেন না। আমি এটা সহ্য করব না। জনগণের কাছে যে কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটাই আগে করবেন।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি আবদুন নুমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, ইনস্টিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি এ কে এম এম হামিদ, সড়ক ও জনপথ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুন্তাসির হাফিজ প্রমুখ।