ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দখলমুক্ত হয়নি বন বিভাগের ভূমি

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চলছে ক্রাশার মেশিন

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৭ মার্চ ২০১৭

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চলছে ক্রাশার মেশিন

সালাম মশরুর সিলেট অফিস ॥ সিলেটের জাফলং এলাকায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চলছে পরিবেশ বিনষ্টকারী পাথর ক্রাশার মেশিন। এখনও উদ্ধার হয়নি অবৈধভাবে পাথর ব্যবসায়ীদের দখলকৃত বন বিভাগের ভূমি। জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের সদিচ্ছার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক জাফলংয়ের নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করতে এসে বিড়ম্বনা পোহাচ্ছেন। সরকারী নিষেধাজ্ঞা ও প্রশাসনিক অভিযানের ফলে ক্রাশার মেশিনের অবাধ কার্যক্রম না থাকলেও তৎপরতা একেবারে বন্ধ হয়নি। অধিকাংশ ক্রাশার মেশিন পাথর ভাঙ্গার স্থানেই পড়ে রয়েছে। জাফলং বিজিবি ক্যাম্প ও সরকারী রেস্ট হাউস এলাকার প্রবেশপথে চলছে ক্রাশার মেশিন। এই এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী শিক্ষা সফরে যাচ্ছেন। ক্রাশার মেশিনের শব্দ ও ধুলোবালিতে এখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। গত ৩০ বছরে জাফলং বল্লাঘাট পাথর কোয়ারী এলাকাসংলগ্ন বিশাল টিলা ভূমি কেটে পাথর উত্তোলনের ফলে এই এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এই এলাকায় খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস ছিল। বিশেষ উপায়ে তৈরি খাসিয়াদের ঘর, সে সঙ্গে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে সুপারি কমলা, পানসহ নানা বৃক্ষরাজিতে ভরপুর এই এলাকা আগতদের আকৃষ্ট করতো। গত ২০-২৫ বছরে ক্রমান্বয়ে এই এলাকাটি ক্রাশার জোনে পরিণত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাফলংয়ের ১৮৮ দশমিক ৭০ হেক্টর জায়গা পাথর কোয়ারী (পাথর উত্তোলনস্থল) চিহ্নিত করে ইজারা ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৯৮০ সাল থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। মূলত স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকেই জাফলং কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন প্রক্রিয়া চলে আসছে। শুরুতে সনাতন পদ্ধতিতে এ কাজ চললেও প্রায় দুই দশক ধরে যন্ত্র ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। কোয়ারী এলাকায় পাথরের মজুদ ফুরিয়ে আসায় শুরু হয় পার্শ¦বর্তী টিলা ও ভূমি কেটে গভীর থেকে পাথর উত্তোলন। আর এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বোমা মেশিন। একপর্যায়ে পরিবেশ ধ্বংসের বিষয়টি সরকারের গোচরীভূত হলে এ যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়নি। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনে পরিবেশের কোন ক্ষতি হতো না। কিন্তু কম সময়ে বেশি পাথর তুলতে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ২০০৯ সালের দিকে কোয়ারীতে বোমা মেশিন আমদানি করেন। এ যন্ত্র দিয়ে পাথর তোলায় জাফলংয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়ে পড়েছে। ওই বছরই বেলার রিটের ফলে বোমা মেশিন নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এ যন্ত্রের ব্যবহার এখনও চলছে। গত ১১ জানুয়ারি সিলেটের গোয়ানাইঘাট উপজেলার জাফলংকে ভূতাত্ত্বিক ঐহিত্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে জাফলংয়ের ২২.৫৯ একর জায়গাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জাফলংকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ঘোষণা করে প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশের বিভিন্ন বিভাগের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীগণ এ্যাকাডেমিক গবেষণার অংশ হিসেবে ও ভূতত্ত্ব গবেষকগণের গবেষণা এবং ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ডাউকী নদীর পাড়ে বাংলাদেশের একমাত্র ইয়োসিন যুগের উন্মুক্ত লাইম স্টোন, কপিলি শেইলের স্তরসমূহ এবং বোল্ডার বেডসহ ২২.৫৯ একর এলাকাকে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য হিসেবে প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করা হলো। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাফলং থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। তারও আগে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাফলংয়ের কিছু এলাকাকে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। তবে এত কিছুর পরও জাফলং থেকে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন। অবৈধ উপায়ে পাথর উত্তোলনের ফলে ধ্বংস হচ্ছে জাফলংয়ের পরিবেশ। একই সঙ্গে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে মাটিচাপা পড়ে গত এক মাসে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
×