ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খই ভেজে জীবিকা দেড় শতাধিক পরিবারের

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৭ মার্চ ২০১৭

খই ভেজে জীবিকা দেড় শতাধিক পরিবারের

সংবাদদাতা, বদরগঞ্জ, রংপুর, ১৬ মার্চ ॥ নেই কাজ তো খই ভাজ! অলস সময়ে খই ভাজাকে অকাজ বলে আখ্যায়িত করে বহুল প্রচলিত এই শব্দটি ব্যবহার করা হলেও বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মোকছেদপুর বটতলী হিন্দুপাড়ার লোকজনের মুখে ওই শব্দটি একেবারেই বেমানান। কারণ, এই গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার দীর্ঘদিন খই ভাজার কাজ করে জীবিকানির্বাহ করে আসছেন। এই গ্রামের একেক-জন অগ্নি নারী নিজের সংসার সামলানোর পাশাপাশি প্রতিদিন ৫ মণ ধানের খই ভাজতে পারেন। এই কাজ করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী হলেও বাপ-দাদাদের আদি পেশা থেকে এক পা সরে যাননি তারা। এই গ্রামের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে নির্ভেজাল ও মুখরোচক খই তৈরি করে সুনাম অর্জন করেছেন বলে এই গ্রামকে খইয়ের গ্রাম বলা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মোকছেদপুর (শান্তিনগর) বটতলী হিন্দুপাড়া খইয়ের গ্রামে খই ভাজার বাস্তবচিত্র। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে উঠানের একপার্শ্বে কিংবা রান্নাঘরের কোণে ছোট লোহার তৈরি কড়াইতে করে চলছে নারীদের খই ভাজার কাজ। চুলোর পিঁড়িতে বসে হাতের কাছে খইয়ের ধান, জ্বালানি খড়ি ও সকল প্রকার সরঞ্জাম মজুদ রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মধ্যবয়সী নারীরা। এই কাজের জন্য সাধারণত মধ্যবয়সী নারীরাই খুব পারদর্শী হয়ে থাকে। তবে কোন কারণে বাড়ির গৃহিনিরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সে ক্ষেত্রে পুরুষরা ক্ষণস্থায়ীভাবে এই কাজ চালিয়ে যান। এছাড়াও প্রতিদিন ভাল জাতের খইয়ের ধান যেমন স্বর্ণা, এগার ও ষোল ইত্যাদি মজুদ করা এবং অধিক পরিমাণ জ্বালানি সংগ্রহের জন্য কিংবা বাইরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকায় পুরুষেরা খুব বেশি চুলোর পিঁড়িতে সময় দিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে খই তৈরির কাজে নারীরাই বেশি ভূমিকা রাখেন। এমনকি এই গ্রামের পরিশ্রমী নারীরা প্রতিনিয়ত খই তৈরি এবং মহাজনের কাছে তা বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। এ বিষয়ে ওই গ্রামের উষা রানীর (৩৫) সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমরা সহায়সম্বলহীন মানুষ। আমাদের শুধু বসতভিটা ছাড়া আর কিছু নাই।
×