শুরুতে একটা গান মনে পড়ে গেল, পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে/স্যাটেলাইট আর কেব্লের হতে/ড্রয়িংরুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দী..ভারতীয় বাংলা গানের ব্যান্ড দল ‘মোহীনের ঘোড়াগুলি’ কি বুঝে গানটা গেয়েছিল, তারাই হয়ত ভাল বলতে পারবে। তবে গানের কথানুযায়ী আমাদের ড্রয়িংরুমে রাখা বোকা বাক্সটি যে দিন দিন আরও বেশি বোকা হচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। এক সময় এই বোকা বাক্সই আমাদের দেশ, কাল সীমানার গ-ি এক করে দেখিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুরই প্রয়োজন ফুরায়। এই বাক্সের (টেলিভিশন) বেলাতেয় ঘটেছে ঠিক তাই। বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া পুরনো কোন কিছু বিদায় করা যায় না। পৃথিবীতে বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারনেটের জাল বিস্তৃত হয়েছে আরও বছর ২৫ আগে, বর্তমানে এই জাল গ্রহের সর্বত্র ছড়িয়ে। জীবনযাপনের অনেক ক্ষেত্রে এই জালের সুতোয় আমরা বাঁধা পড়েছি। এমকি বিনোদনের ক্ষেত্রেও! গান, নাটক, সিনেমা, খেলা সবই আমাদের বিনোদনের দারুণ খোরাক। এতকাল এসব যোগান দিয়ে আসছিল টেলিভিশন নামক বাক্সটি। কিন্তু এখন আর তার সেই আগের জৌলস নেই। ধীরে ধীরে হারাচ্ছে তার জনপ্রিয়তা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা বেশি স্বাধীন হয়েছি। বিনোদনের ক্ষেত্রেও এই স্বাধীনতা ভোগ করতে শিখেছি। বিষয়টা এমন যে, আমাদের বিনোদন দরকার আমাদের সময়নুযায়ী। এই ধারণাটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গত একযুগে। ইন্টারনেটের অভাবনীয় বিস্তৃতির প্রভাবে। অসংখ্য ওয়েবসাইটের মধ্যে ভিডিও আদান-প্রদান ও শেয়ারিংয়ের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইউটিউব আমাদের মনোজগতে বিনোদনের ব্যাপক রসদ যোগাচ্ছে। গান, নাটক, সিনেমা ও খেলা এক রকম সবকিছু দিয়েই আমাদের মনোরঞ্জন করছে এই ভিডিও ওয়েবসাইটটি। পছন্দের ভিডিও আপলোড, পর্যালোচনা বা অভিমত প্রদান এ রকম স্বাধীন দিকগুলো রয়েছে এই সাইটে। সৃজনশীল মানুষ নিজেদের মেলে ধরতে কিংবা সামর্থ্যরে জানান দিতে ইউটিউব অতুলনীয়। ভাল লাগার কোন কিছু অপলোড করার সঙ্গে সঙ্গে সেটি দেশ কাল সীমানরা গ-ি পেরিয়ে হয়ে যাচ্ছে বিশ্বজনীন। সকলে দেখছে, মতামত জানাচ্ছে। আমাদের দেশে এই চর্চা খুব কম সময়ে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। ইউটিউবে গান, নাটক বা সিনেমা প্রমোট করা রীতিমতো নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনপ্রিয়তা বা ভাল-মন্দ বিচারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এখানে। ভিউয়ারের সংখ্যা কিংবা মতামতের বার্তা সবই এখানে দৃশ্যমান। গান, নাটক সিনেমা বা খেলা উপভোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এখন ইউটিউব। কোন ভিডিওর ১ কোটির বেশি ভিউয়ার নেহায়তই মামুলি ব্যাপার। জনপ্রিয়তা বা ভাল-মন্দের তাপমাত্রাও নির্ধারণ হয় এই ভিউয়ারের সংখ্যায়। বর্তমানে একাধিক দেশীও মিউজিক ভিডিও আছে যার ভিউয়ার ১ কোটির বেশি। নাটক-সিনেমা তো আছেই।
জনপ্রিয় গান
কণ্ঠশিল্পী মিনার রহমানের ‘ঝুম’ গানটি বর্তমানে ইউটিউবে তুমুল জনপ্রিয়। গানের কাথা ও ভিডিও কম্পোজিশন দর্শকদের মন কেড়েছে। গানটির বর্তমান ভিউয়ার ১,০৮,৯০,৯৬০, ‘দিল দিল দিল’ বাংলা সিনেমা ‘বসগিরি’র জনপ্রিয় গান এটি। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান ও কনা। ঢাকাই সিনেমার কিংখান খ্যাত সাকিব খান ও নবাগত সুন্দরী বঙ্গ ললনা বুবলী এই গানের বিশেষ আকর্ষণ। এই গানেরও দর্শক ভিউয়ার ১ কোটির ওপরে অর্থাৎ ১,০০,২৩,৯০৯ যা এর আগে কোন বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে, ইমরান মাহমুদুলের এ্যালবাম ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’র গান ‘ফিরে এসো না’। এই গানের ভিউয়ার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। অর্থাৎ ৯৫,৬৬,৯০৯ জন। এরপর আছে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনার ‘রেশমি চুড়ি’ গানটি। লেখা পর্যন্ত এর ভিউয়ার ৮৫,০৮,৭২৭। এই তালিকার পাঁচ নম্বরে আছে শাওন গান ওয়ালার ‘ইচ্ছে মানুষ’ চমৎকার রোমান্টিক গানের ভিডিও।
জনপিয় নাটক
নাটক প্রোমোটে ইউটিউব এখন প্রসিদ্ধ ওয়েবসাইট। গত বছর আপলোড হয়েছে এমন বেশ কয়েকটি নাটকের ভিউয়ারের সংখ্যা প্রায় বিশ লাখের কাছাকাছি। প্রথম সারিতে আছে জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিম এর একাধিক নাটক। এর মধ্যে ‘কাজের বুয়া’ ভিউয়ের শীর্ষে। দুই শক্তিশালী অভিনেতা মোশারফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরীর কমেডি নাটক এটি। নাটকটির ভিউয়ার ১৭,৫৯,৩৩৬, এর পর আছে ‘মায়া কান্না’ এটিও মোশারফ করিমের কমেডি নাটক। এর ভিউয়ারের সংখ্যা ১৬,২২,৩৫০। হাসান মাসুদ ও মোশারফ করিমেরর ‘প্যারা’ নাটকটি আছে তৃতীয় স্থানে। তাহসান-বিদ্যা সিনহা মীমের প্রেমের নাটক ‘ওল্ড এজ গোল্ড’ আছে জনপ্রিয়তার চর্তুথ স্থানে। ভিউয়ার ১২,২০,৪৮৫। এরপর মোশারফ করিমের ‘হিটলার হিটার’ আছে পঞ্চম অবস্থানে। এর ভিউয়ার সংখ্যা প্রায় দশ লাখ।
সিনেমার ক্ষেত্রে ও একই হাল লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো মধ্যে আরিফিন শুভ ও মাহিয়া মাহীর ‘ওয়ার্নিং’ আছে শীর্ষে। লেখা পর্যন্ত এর ভিউয়ার ৩৪,৫০,১৮৬। এরপর আছে আরিফিন শুভ ও মারজান জেনিফার ‘মুসাফির’ সিনেমা। ভিউয়ার ২২,০০,৬৬২। পরের সিরিয়ালে হুমায়ূন অহমেদের উপন্যাস ও মেহের আফরোজ শাওনের পরিচালনায় ‘কৃষ্ণপক্ষ’ সিনেমা। অভিনয়। রিয়াজ ও মাহিয়া মাহী। মহুয়া সুন্দরী, নিয়তি এই সিনেমার ইউটিউব ভিউয়ার প্রায় ষোলো লাখ ও বারো লাখ।
এসব ছাড়াও খেলা, সংবাদ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিডিও ফুটেজ দেখা, শেয়ার করা বা ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ভিডিও শেয়ার সাইট ইউটিউবের বিকল্প এই মুহূর্তে আমাদের তথা বিশ্ববাসীর কাছে নেই।
শীর্ষ সংবাদ: