ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলভীবাজার আর্মি ক্যাম্পে আমার বড় ভাইসহ ৮০ জনকে গুলি করে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ মার্চ ২০১৭

মৌলভীবাজার আর্মি ক্যাম্পে আমার বড় ভাইসহ ৮০ জনকে গুলি করে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের শামসুল হোসেন তরফদারসহ ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের নবম সাক্ষী ফরাছত আলী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকাররা মৌলভীবাজার আর্মি ক্যাম্পে লাইনে দাঁড় করিয়ে আমার বড় ভাই নজাবত আলীসহ ৭০-৮০ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে গয়েমপুর গ্রামের ছোয়াব আলী বেঁচে যান। তিনিই ক্যাম্প থেকে ফিরে এসে এ খবর জানান। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ৩ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। জবানবন্দীর সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আবদুস সুবহান তরফদার। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম ফরাছত আলী। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-দক্ষিণ খলাগ্রাম (নয়াটিলা), থানা-রাজনগর, জেলা-মৌলভীবাজার। বর্তমানে আমি নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী (এনআরবি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি সিলেট সরকারী কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। আমি লন্ডন থেকে টেক্সটাইল বিষয়ে ১৯৮০ সালে এসএননি এবং ১৯৮১ সালে এমফিল করেছি। একাত্তরে আমি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করার জন্য মে মাসের মাঝামাঝি ভারতের আসাম রাজ্যের নিশাইন যুব ক্যাম্পে যোগদান করি। সাক্ষী বলেন, একাত্তরের ১ বা ২ ডিসেম্বর আমি কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে সিলেট শহরের টিলাঘরে বসে মৌলভীবাজারের আক্রমণের বিষয়ে কথা বলি। ওই দিন বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে আমাদের একজন তথ্যদাতা গোপনে এসে আমাকে একটি চিরকুট দেয়। চিরকুটে লেখা ছিল, ২৯ নভেম্বর পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকাররা আমার বড় ভাই নজাবত আলীকে আমাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আগুন দিয়েছে। ওই সময় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ চলছিল। অনেক চেষ্টা করে ৬ নবেম্বর দুপুর বেলা আমি আমাদের বাড়িতে আসি। আমি বাবার কাছ থেকে জানতে পারি, মুসরিয়া গ্রামের মোবারক, গয়েশপুর গ্রামের উজের, দুদুমিয়া (বর্তমানে মৃত), বারিক মিয়া (বর্তমানে মৃত), মতিউর রহমান (বর্তমানে মৃত) সোনাটাাকি গ্রামের ইউনুস, জামুরা গ্রামের নেসার আলী, বাগাজোর গ্রামের শামসুল হোসেন তরফদার ওরফে আশরাফ, উজেরের একভাইসহ তার আত্মীয়স্বজন, অন্যান্য রাজাকার ও পাকিস্তানী আর্মি ২৯ নবেম্বর ফজরের নামাজের সময় আমাদের বাড়ি আক্রমণ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৭ ডিসেম্বর দুপুর বেলা মুন্সীবাজারে গয়েশপুর গ্রামের ছোয়াব আলীর সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি মৌলভীবাজারের আর্মি ক্যাম্পে আটক অবস্থা থেকে আহতাবস্থায় ফিরে আসেন। তিনি আমাকে বলেন, তিনি যখন আর্মি ক্যাম্পে আটক অবস্থা থেকে আহতাবস্থায় ফিরে আসেন। তিনি আমাকে জানান, তিনি যখন আর্মি ক্যাম্পে আটক ছিলেন তখন পাকিস্তানী আর্মিরা তাকে সহ ৭০-৮০ জন লোককে মৌলভীবাজার আর্মি ক্যাম্পে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। ৫ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার আর্মি ক্যাম্পে আমার বড় ভাই নজাবত আলী, আবদুল বাছিত, বালিগাঁও গ্রামের দানু মিয়া, ও উত্তরবাগের ডাঃ জামিনী মোহন দেব পাকিস্তান আর্মিরা লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
×